পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কিন্নর দল ృbrఫి বললেন–কিন্তু একটা কথা তুমি জান না, সেটা আগে বলি। তুমি সেদিন যাকে রাত্রে ছাতিমতলায় বসে দেখেছিলে, তিনি তোমার আমার মত দেহধারী মানুষ নন। শুনে তো মশাই আমার গা শিউরে উঠল—দেহধারী জীব নয়, বলে কি রে বাবা ! তবে কি ভূত-পেত্নী নাকি ? সাধুজী বললেন—তোমায় একথা বলতাম না, যদি না শুনতাম যে তুমি মাতু পাগলীর সঙ্গে ছিলে । আচ্ছা শুনে যাও । আমার গুরুদেব ছিলেন vকালিকানন্দ ব্রহ্মচারী, হুগলী জেলায় জেজুড় গ্রামে তার মঠ ছিল। মন্ত বড় সাধক ছিলেন, কুলার্ণব আর মহডমর এই দুই শ্রেষ্ঠ তন্ত্রে তার সমান অধিকার ছিল। মহাডামর-তন্ত্রের একটি নিম্ন শাখার নাম ভূতডামর। আমি তখন যুবক, তোমারই মত বয়েস—স্বভাবতই আমার ঝোক গিয়ে পড়ল ভূতডামরের উপর। গুরুদেব আমার মনের গতি বুঝতে পেরে ও-পথ থেকে ফেরাবার যথেষ্ট চেষ্টা করেছিলেন–কিন্তু তাই কি হয়, অদৃষ্টলিপি তবে আর বলেছে কাকে ? এই তোমার যেমন— আমি বললাম—ও-পথ থেকে ফেরাতে চেষ্টা করেছিলেন কেন ? —ও-পথ প্রলোভনের পথ, বিপদের পথ। ভুতডমর তন্ত্র নানাপ্রকার অশরীরী উপদেবীদের নিয়ে কারবার করে—তন্ত্রের ভাষায় এদের সাধারণ নাম যোগিনী। জপে ও সাধনায় বশীভূত হয়ে এদের মধ্যে যে-কেউ—যার সাধনা তুমি করবে—সে তোমার আপন হয়ে থাকতে পারে। নানা ভাবে এদের সাধনা করা যায়, কিঙ্কিণী দেবীকে মাতৃভাবে পেতে হয়, কনকবতী দেবীকে পাওয়া যায় কন্যাভাবে—কিন্তু বাকী সব যোগিনীদের যে-কোন ভাবে সাধন করা যায় এবং যে-কোন ভাবে পেতে পারা যায়। এই সব যোগিনীদের কেউ ভাল কেউ মন্দ । এদের জাতি নেই বিচার নেই ধৰ্ম্ম নেই, কোন গণ্ডি বা বাধ্যবাধকতার মধ্যে এরা আবদ্ধ নন। ভূতডামরে এই সাধনার ব্যাপারে বলে দেওয়া আছে। ভূতডামরে প্রথম শ্লোকই হ’ল— অৰ্থাত: সংপ্রবক্ষ্যামি যোগিনী সাধনোত্তমম্। সৰ্ব্বার্থসাধনং নাম দেহিনাং সৰ্ব্বসিদ্ধিদম্ অতিগুহা মহাবিদ্যা দেবানামপি দুল্লভ৷ তুমি সেদিন যাকে দেখেছিলে তিনি এই রকম একজন জীব। তোমার সাহস থাকে সে-মন্ত্র আমি তোমায় দেব। কিন্তু আমার যদি নিষেধ শোন তবে এ-পথে নেমো না। এতটা বলে সাধুজী ভাল করেন নি, আমার কৌতুহল বাড়িয়ে দিয়ে তিনি আমায় আর কি সামলে রাখতে পারেন? আমি নাছোড়বান্দা হয়ে পড়লাম, মন্ত্র নেবই। সাধুজী বললেন—তবে কনকবতী দেবী-সাধনার মন্ত্ৰ নাও—কন্তাভাবে পাবে দেবীকে— আমি চুপ করে রইলুম। তিনি আবার বললেন—তবে কিঙ্কীণী-সাধনার মন্ত্র ? আম, কি বিপদেই পড়েছি বুড়ে সাধুটাকে নিয়ে। অন্ত যোগিনীদের দেখতে দোষ কি ? সাধু আমার চুপ করে থাকতে দেখে বললেন-বেশ, আমি তোমাকে মধুমুদরী দেবীসাধনার মন্ত্র দিচ্ছি। একে কন্য। ভাবে, ভগ্নী ভাবে বা ভাৰ্য্যা ভাবে পেতে পার। তবে আমার যদি কথা শোন, কখনও ভাৰ্য্যা ভাবে পেতে যেও না । এর বিপদের দিক বলি। ভাৰ্য্যা ভাবে সাধন করলে তিনি তোমাকে প্রণয়ীর মত দেখবেন–কিন্তু এরা মহাশক্তিশালিনী যোগীনি, সাধারণ মানবী নয়, এদের আয়ত্তের মধ্যে রাখা বড় শক্ত। হয় তোমাকে পৃথিবীর মধ্যে সৰ্ব্বাপেক্ষা সুখী মানুষ ক'রে রাখবে, নয়তো একেবারে উন্মাদ ক'রে ছেড়ে দেবে।