পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২১৪ রিভূতি-রচনাবলী খেজুর-গুড় সংযোগেই গোকুলের প্রাত্যহিক চা-পান নিম্পন্ন হয়—আজ ওর মা গুড় দিতে নারাজ—ও চাইতে গিয়ে বিমুখ হয়ে এসেচে। মায়ের কথার মধ্যে যুক্তির অভাব ছিল না। বাড়িতে ঠাকুরপূজো আছে, দশমী-দ্বাদশী আছে, এক ভঁাড় খেজুর গুড় এসে সিকি ভাড়ে ঠেকেচে—মূতন বছরে এখনও গুড় কেন হয়নি বা কেনবায় পয়সাও নেই—ওইটুকু ফুরিয়ে গেলে তখন চলবে কিসে ? - এই গুড়ের ব্যাপার নিয়ে মায়ে-ছেলের বচসা চললো সারা সন্ধ্যাবেলা । - গোকুল বিয়ে-থাওয়া করেনি, বয়স এই মোটে পচিশ বছর, বাপ মারা যাওয়ার পরে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে আজ আট-দশ বছর বাড়ি বসে আছে—গরীব বামুনের সহায়-সম্পত্তিহীন ছেলে, কে চাকরি করে দেবে ? লেখাপড়ারও তেমন কিছু জোর নেই। সংসার অবিশুি খুব বড় নয়, সে আর তার মা । গোকুলের বাবা বেঁচে থাকতেই মেয়েটির বিবাহ-দিয়ে গিয়েছিলেন বারো বছর বয়সে, তাই রক্ষে—নইলে এ বাজারে আর ভগ্নীর বিবাহ দেওয়া গোকুলের সাধ্যে কুলিয়ে উঠতো না । গোকুলের মা বল্পে, আমার বুদ্ধি শোন গোকুল, চল আমরা কলকাতায় যাই। সেখানে কত লোক কত কি করচে, সেখানে গেলে তোর একটা হিল্পে হয়ে যাবেই । আমিও তোকে ফেলে থাকতে তো পারবো না । আমিও সঙ্গে যাই । বড় আমবাগানটা বিক্রী করে ফেলি । এ প্রস্তাব মা আরও কয়েকবার করেচে, কিন্তু গোকুলের গা ছেড়ে কোথাও যেতে মন সরে না । কলকাতা শহরকে সে মনে মনে ভয় করে । অত বড় শহরে তো তায় জন্তে চাকরি নিয়ে লোকে বসে আছে! মার যেমন কথা । আজ কিন্তু মার কথায় তার মনটা উৎসাহিত হয়ে উঠলো। ভাগ্য পরীক্ষা করে দেখলে হয় একবার। এখানেও তো মাঝে মাঝে অনাহার শুরু হয়েচে আজকাল, সেখানে তার চেয়ে আর কি বেশী কষ্ট হবে ? কলকাতায় পয়সা রোজগারের অনেক রকম উপায় আছে সেও শুনেচে বটে। সারারাত ধরে মা ও ছেলে পরামর্শ করলে। বড় বাগান বিক্রী করলে এখন দর হবে না, বন্ধক রেখে সেই টাকা থেকে প্রথম মাস কয়েক শহরের খরচ চলবে। এখানকার বাড়িতে কিছুদিন তালা বন্ধ থাকুক। অবশেষে কলকাতায় যাওয়াই ধাৰ্য্য হোল। যন্ত্ৰহরি কুণ্ডু স্থানীয় বাজারের বড় কাপড়ের মহাজন—বাগানখানা পঞ্চাশটি মাত্র টাকায় তার কাছে বন্ধক রাখা হ’ল এবং নির্দিষ্ট দিনে মায়ে-ছেলের কলকাতায় রওনা হোল । চিৎপুর শোভাবাজারে শঙ্কর মিত্রের লেনে ওদের গ্রামের এক নাপিত থাকতো । বাক্স হাতে ঝুলিয়ে জাত-ব্যবসা করে সে ত্রিশ-চল্লিশ টাকা রোজগার কুরতে মাসে । গোকুল খুজে খুঁজে তার বাসা বার করলে। একখানা ছোট খোলার ঘর—তাতে সে এক থাকে, নিকটবৰ্ত্তী হোটেলে একবেলা ডাল-ভাত খায়, একবেলা মুড়ি খেয়ে কাটায়, এই তার অবস্থা। গ্রামের ব্রাহ্মণ-কন্ত তার খোলার ঘরে অতিথি, বন্ধু পরামানিক শশব্যস্ত হয়ে উঠলো। রান্নার হাড়িকুড়ি কিনে নিয়ে এল, আর নিয়ে এল চাল ভাল তরকারি । খোলার ঘরে একখানা ছোট্ট পরচালার নীচে আপাততঃ রান্নার ব্যবস্থা করা হোল । বষ্ণু বল্পে—মঠাকরণ, রোজ রোজ মরি উড়ে বামুনের রান্না খেয়ে, আজ আমার সৌভাগ্যি যে আপনারা এয়েচেন, মা-ঠাকরুণের হাতের দু'টি প্রসাদ খেয়ে বাচবো আজ । গোকুল আর তার মা বন্ধু পরামাণিকের সেই খোলার বাসার পাশেই আর একখানা ছোট