পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

a〉や বিভূতি-রচনাবলী ভোগটা খুব জমকালে, উপকরণও বেশী—কিন্তু চারজন ব্রাহ্মণের মধ্যে যে ভোগটা বিলি করে দেওয়ার প্রথা অনেকদিন থেকে প্রচলিত, গোকুলের মায়ের সুপারিশে গোকুল সেই চারজন নিমন্ত্রিত ব্রাহ্মণের অন্যতম হয়ে দাড়ালে । এছাড়া পূজাপাৰ্ব্বণে, বড় বড় উৎসব উপলক্ষ্যে কাপড়-চোপড়ও পাওয়া যায়—ভোজন দক্ষিণা থেকে ওঠে ! গিল্পীমা গোকুলের মাকে বড় অনুকম্পার চোখে দেখতে আরম্ভ করেচেন, এতে অন্যান্ত বি-চাকরের চোখ টাটায় । একদিন গিল্পীমা বল্লেন—ষ্ঠ্য বাছ, তোমার ছেলে লেখাপড়া জানে কতদূর ? গোকুলের মা ভাল জবাব দিতে পারলে না । লেখাপড়া সম্বন্ধে তার খুব স্পষ্ট ধারণা নেই। গিীমা বল্লেন—ওকে নীচে ম্যানেজারের কাছে একদিন দেখা করতে বলে। যদি মুহুরীর কাজ-টাজ করতে পারে, তবে আমি আমার ছেলেকে বলে দোব এখন । গিল্পীমার সুপারিশে গোকুল পনেরো টাকা মাইনের একটা চাকরি পেয়ে গেল । ওর বাংলা হাতের লেখা খুব ভাল, গ্রামে ওর হাতের লেখার খ্যাতি ছিল । গোকুলের ইচ্ছা খোলার বাড়িটা বদলায়, মা ওর কিন্তু এতে আপত্তি করলে, বল্লে—বাব, এই খোলার বাড়িই লক্ষ্মী—এ ছেড়ে কোথাও যাবে না। এ থেকে আরও উন্নতি হবে দেখিস छूहे । হোলও তাই । গোকুল পরের বৎসরই বিল সরকারের পদে উন্নীত হোল। এ কাজে উপরি রোজগার খুব, দেনাদারেরা কিছু কিছু ঘুষ দিয়ে নিজেদের বিলের ওয়াদা দেরিতে ফেরাতে । গোকুল মাসে ইচ্ছে করলে পঞ্চাশ টাকা অনায়াসে রোজগার করতে পারতো—কিন্তু ও স্টেটের মুখের দিকে চেয়ে কোথাও ঘুষ নিত না। ফলে ওর আমলে টাকা বেশী আদায় হতে লাগলো। ম্যানেজারের নজর পড়ল ওর দিকে । সংসার সেরেস্তার নায়েবের পদ খালি হোল ইতিমধ্যে। বুড়ো নায়েব নালু মুখুয্যের চোখের অমুখ হওয়ার দরুণ সে পেনসনের দরখাস্ত করলে । এই পদে মাসে একশো-দেড়শো টাকা কমিশন পাওয়া যায়, বিভিন্ন মুদী, খাবারওয়াল, দোকানদারের কাছে। স্তায্য ভাবেই এটা পাওয়া যায় এতে স্টেটের কোনো অনিষ্ট নেই। এ-কাজে একজন বিশ্বস্ত লোকেরই দরকার বটে। ম্যানেজার একদিন ওকে ডেকে বল্পেন—গোকুল, সংসার সেরেস্তার নায়েবের কাজের জন্তে তুমি দরখাস্ত করেচ ? - ও বল্পে, আজ্ঞে ই বাৰু। ও দিয়েছিল কপাল ঠুকে একখানা দরখাস্ত করে। সেরেস্তার অনেকেই তো করেচে। ম্যানেজার বরেন—তুমি কি পারবে ? বড় হুশিয়ারির কাজ, আর বড় খাটুনি। গোকুল সাহস করে বল্লে—খাটুনির ভয় করিনে হুজুর । আর হুঁশিয়ারির কথা বলচেন, আপনি তো বিল আদায়ের কাজেও দেখেছেন আমায় । —আচ্ছা তুমি পাচশো টাকার একটা হাওনোট লিখে দাও স্টেটের নামে। ও কাজে পাঁচশো টাকা ডিপজিট দিতে হবে তোমায় । তোমার মাইনে থেকে আমরা মাসে মাসে দশ টাকা কেটে নেবো হাওনোটের দেনার দরুণ । তোমাকে আমি ও পোস্ট দিলাম। মন দিয়ে কাজ কোরো । গোকুল চোখে ঝাপসা দেখলে । ব্যাপার কি ? সে স্বপ্ন দেখচে না তো ? পচিশ টাকা মাইনের বিল সরকারী থেকে সে বাট টাকা মাইনের সংসার সেরেস্তার নায়েবের পদে