পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨૨૦ বিভূতি-রচনাবলী গিরী মুখুয্যে-গিৰী, চকত্তি-গিয়ী প্রভৃতি তো থাকেনই, পাড়ার অল্প বয়সী বৌয়ের ও মেয়েরাও থাকে। সাধারণতঃ যে সব ধরনের চর্চা এ মজলিসে হয়ে থাকে, তা শুনলে নারীজাতি সম্বন্ধে লিখিত নানা সরল প্রশংসাপূর্ণ বর্ণনার সত্যতার সম্বন্ধে ঘোর সন্দেহ যার উপস্থিত না হবে, তিনি নিঃসনোহে একজন খুব বড় ধরনের অপটিমিস্ট, । আজ দুপুরে যে বৈঠক বসেছে, তাতে আলোচিত বিষয়গুলি থেকে মোটামুটি প্রতিদিনের আলোচনা ও বিতর্কের প্রকৃতি অনুমান করা যেতে পারে। - বোস-গিয়ী বলছিলেন—আর বাপু দিচ্ছি তো রোজই, আমার গাছের কাটাল খেয়েই তো মানুষ, আমাদের যখন কাটাল পাড়ানো হয়, ছেলেমেয়েগুলো হাংলার মত তলায় দাড়িয়ে থাকে —ঘেয়ো কি ভুয়ো এক-আধখানা যদি থাকে তো বলি, যা নিয়ে য৷ তোদের নেই, যা খেগে যা। তা কি পোড়ার মুখে কোনদিন মুবাকি আছে ? ওম, আজ আমার মেয়ে দুটো নেৰু তুলতে গিয়েছে ডোবার ধারের গাছে, তো বলে কিনা রোজ রোজ নেবু তুলতে আসে, যেন সরকারী গাছ পড়ে রয়েছে আর কি-চব্বিশ ঝুড়ি কথা শুনিয়ে দিলে মন্টর মা। আচ্ছ বলে তো তোমরাই— মন্টর মা—যাকে উদ্দেশ করে একথা বলা হচ্ছিল, তিনি এদের মজলিসে কেবল আজই অনুপস্থিত আছেন নইলে রোজই এসে থাকেন। র্তার অনুপস্থিতির সুযোগ গ্রহণ করে সবাই র্তার চালচলন, ধরন-ধারণ রীতি-নীতির নানারূপ সমালোচনা করলে । প্রিয় মুখুয্যের মেয়ে শাস্তি—ষোল-সতেরো বছরের কুমারী—তার মায়ের বয়সী মন্টর মার সম্বন্ধে অমনি বলে বসলে,—ও, সে কথা আর বোলো না খুড়ীমা, কি ব্যাপক মেয়েমানুষ ঐ মন্টর মা ! ঢের ঢের মেরেমাস্থ্য দেখিচি, অমন লঙ্কাপোড়া ব্যাপক যদি কোথাও দেখে থাকি, ক্ষুরে নমস্কার, বাবা বাবা | ছোট মেয়ের ঐ জ্যাঠামি কথার জন্তে তাকে কেউ বকলে না বা শাসন করলে না বরং কথাটা সকলেই উপভোগ করলে । তারপর কথাটার স্রোত আরও কতদূর গড়াতে বলা যায় না, এমন সময় রায়-বাড়ির বড়বে। হঠাৎ মনে-পড়ার ভঙ্গীতে বল্লেন—ই, একটা মজার কথা শোনোনি বুঝি। শ্ৰীপতি যে বিয়ে করেছে, বটঠাকুরের কাছে চিঠি এসেচে, শ্ৰীপতির মামা লিখেচে । । সকলে সমস্বরে বলে উঠলে—শ্ৰীপতি বিয়ে করেচে ] তারপর সকলেই একসঙ্গে নানারূপ প্রশ্ন করতে লাগলো : —কোথায়, কোথায় ? —কবে চিঠি এল ? —তবে যে শুনলাম শ্ৰীপতি বিয়ে করবে না বলেচে । শ্ৰীপতির বিয়ের খবরে অনেকেই যেন একটু দমে গেল। খবরটা তেমন শুভ নয়। কারে উন্নতির সংবাদ এদের পক্ষে আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করা অসম্ভব। তাদের যখন উন্নতি হলো না তখন অপরের উন্নতি হবে কেন ? কিন্তু এর পরেই যখন রায়বোঁ মুখ টিপে হেসে আস্তে আস্তে বল্পেন—বৌটি নাকি বামুনের মেয়ে নয়—তখন সকলে খাড়া হয়ে সটান উঠে বসলে, তাদের মন-মরা ভাবটা এক মুহূর্তে গেল কেটে। একটা বেশ সরস ও মুখরোচক পরনিন্দ আর ঘোটের আভাস ওরা পেলে, রায়-ধেীয়ের চাপা ঠোঁটের হাসি থেকে। শাস্তি উৎসুক চোখে চেয়ে হাসিমুখে বয়ে, ভেতরে তাহলে অনেকখানি কথা আছে! বোস-গিয়ী বল্পেন—তাই বল! নইলে এমুনি কোথাও কিছু নয় শ্ৰীপতি বিয়ে করলে, এ