পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রূপ-হলুদ R8Ꮔ স্বামীর দিকে বঙ্কিম-কটাক্ষে চেয়ে বলে—যত পারে— তারপর আবার নৌকা চললে উলুটি বাড়োর কিনারায় কিনারায়, নদীর ঠাণ্ড শুামল জলধারা যেখানে ছুয়ে ছুঁয়ে চলেচে ভাটার টানে সাতভেয়েতলার বড় বটগাছের দিকে । উদ্ধব দাস তামাক খাবার জন্তে চকমকি ঠুকচে, মাঝিকে বলচে—ইদিকি এবার বাগুনের বীজপাত দেওয়া হয়নি দেখচি—ষ্ট্যা রে, এ ক্ষেতটা কি জেড়ো কুমডোর ? মাঝি বল্লে—জেডে কুমড়ে না হলে কি তাত বড়ড হয়—ষ্ঠাথচো না ? —চত্তির মাসের শেষ—এথনো ক্ষেতে শীতের কুমড়ে। কাটেনি—কেমনধারা চাষ এরা ?. তামুক খাবা ? মাঝি ছোড়া ঘাড় নেড়ে বল্লে—খাইনে । —তোর দাদা মনিন্দর তো থায় । —খায় না ? বলে স্থকে শোষে । দাদা খায় বলে কি আমাকেও খেতে হবে ? —না তাই বলচি । —কি চর এড ? আর কদর ? —চর পোলত । আর দু’খানা বাক । —বাকের মুড়োয়, না বাকের মাজায় ? –একেবারে ও মুড়োয়— —তাহলে এখনো দেড় ঘণ্টা দু ঘণ্ট— পাচুদাসী দেখতে দেখতে যাচ্ছে, বেশ ভাল লাগছে ওর। বাড়ি থেকে কত দিন একটু বেরুনো হয়নি, শুধুই গোয়াল পরিষ্কার, ক্ষার কাচ, বাসন মাজ, তোলো তোলে৷ ধানসিদ্ধ, গরুর ডাবায় জল তোলা’-এ যেন মুক্ত দিনের লীলায়িত অবকাশ! দিন-শেষের হলদে রোদে আকাশ কেমনতর হয়ে উঠচে, নৌকোর গলুইয়ে চলমান নদীর ছলছল রাগিণীর ছন্দ বাজচে, গল-লম্বা কি পাখী শেওলার মধ্যে জেলেদের পাতা তেঁতুল ডালের হুড়ির ওপর বসে নৌকোর দিকে চেয়ে আছে, নলখাগড়ার বনের গত শীতকালের তিতপল্লার ফল শুকিয়ে শুকিয়ে ঝুলচে, ভুস ভুল করে শুশুক ডুবচে উঠচে জলে নৌকোর এপাশে ওপাশে । —হঁ্যাগো, ওগুলো কি, শুশুক না কচ্ছপ ? —শুশোক— —আহা-হ, শুশোক বুঝি ?—শুশুক তো বলে । বাঙাল কোথাকার । পাচুদাসী নাগরিকতার আভিজাত্যে ঘাড় বেঁকিয়ে হাসির ঝিলিক দিয়ে স্বামীর দিকে চায়। —নাও, নাও, ওই হোল, শুশুকই হোল— —থিদে পেয়েচে ? —পাইনি ? সে তুই বুঝচিস নে ? তোকে বলতে হবে ? ঠিক ঠিক। পাচুদাসীর ভুল হয়ে গিয়েচে । ওর বড় খিদে, জোয়ান মরদ পুরুষ, ভূতের মত খাটে দিন-রাত, মাটির সঙ্গে কাজকারবার। একটি কাঠা তার নাম । চিড়ে আর তেঁতুল আর লবণ আর আখের গুড় । এক নিঃশ্বাসে কাবার করবে । ওর খাওয়া একটা দেখবার মত জিনিস বটে। বালাই ষাট, চোখ দিতে নেই । —আঙট পাতায় দেবো তো ! —ভিজিয়েচ ?