পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨૮૨ বিভূতুি রচনাবলী যেন বঁাচলাম কত দিন পরে। কেমন সুন্দর, না ? পাচুদাসী বৌটির কথাবাৰ্ত্তার ভঙ্গিতে কৌতুক অনুভব করলে। পাখীর ডাক শুনে শুনে তার কান পচে গেল। সে আবার কি একটা জিনিস এমন তা তো জানা নেই ! যত আজগুবী কাও ! ভদ্রতার খাতিরে সে বল্লে—ষ্ট্যা দিদি, ঠিক । চলুন আমার সঙ্গে আমাদের গায়ে ঝিটকিপোতায় । দিনরাত পার্থীর কিচিরমিচির শোনাবো । তারপর ওরা ব্যাং নদী জীর্ণ থেয়ায় পার হয়ে ওপারে চলে গেল । আরও কয়েক দলের সঙ্গে দেখা হোল—আশপাশের গ্রাম থেকে তারাও চলেছে, আজ মঙ্গলবারে হাজরাতলায় পুজে দিতে । গাড়ি নদীর ওপারেই রয়ে গেল। এ পথটুকু হেঁটেই যেতে হবে । নদীর ধার দিয়ে খানিকট গিয়ে একটা যজ্ঞিডুমুর গাছের তলা দিয়ে বনঝোপের পাশ কাটিয়ে পথ চলেছে উত্তরমুখে—বাবলা গাছে ভৰ্ত্তি সবুজ মাঠের মাঝখান বেয়ে। পাচুদাসীর বড় আমোদ লাগছিল। কত লোকের সঙ্গে দেখ, কত দেশ-বিদেশ। কলকাতার বৌটিকে ওর বড় ভালো লেগেছে—হোক না কটোমটো নাম, কি ভালো মেরে, কি মিষ্টি কথা, অমায়িক ব্যবহার । আর একটি বেী এসেছে । ওর নাম তারা, জাতে সদগোপ । বাড়ি বনগার কাছে হরিদাসপুর। তার ছেলে হয়ে মরে যাচ্ছে—গত পৌষ মাসেও একটি ছেলে হয়ে মারা গিয়েছে ওর— সেই ছেলের কথা বলে আর কাদে । ম-ন-জুল বোঝাচ্ছে—কেঁদো না ভাই। সবই ভগবানের ইচ্ছে। আবার কোলজোড় থোকা পাবে বই কি—এখনো তুমি ছেলেমানুষ—তার নাম করে চলে, কাজ হবে ঠিক । কি বলো ভাই ? - ও পাচুদাসীর দিকে চেয়ে শেষের প্রশ্নটা করলে। কিন্তু পাচুদাসীর মন তখন অনেক দূরে চলে গিয়েছে সেই কলুদীঘির ধারে বড় তুততলায়—হাতে পাকা বীজবেগুন, চাদমুখখান ওর দিকে উচু করা, কত বিঘের ক্ষেতের বীজ —দুহাতে ছড়ানো ও ধন সোনামণি, তুমি আসব, আসবা আমার কুঁড়েঘরে আমার কোলজোড়া হয়ে আসবা আঁধার পক্ষের শেষ রাতের অন্ধকারে, পাখীপক্ষী যখন ডেকে উঠবে আমবনে, বাশবনে, কুল্লো পাখী ডাকবে শিমুল গাছের মগডালে বিলবাওড়ে মাছ ভেসে উঠবে কেউটে পানার দামের মধ্যি ! বুড়ে হাজরার দোহাই, পেচোপাচীর দোহাই এসো খোক, এসো একজন কে বলচে–আঁচল পাততে হয় হাজরাতলায়—নদীতে নেয়ে আঁচল পেতে ঠাকুরতলায় বসে থাকতে হয়— পাচুদাসী বল্লে—কেন ? আঁচলে ফল পড়ে, ফুল পড়ে—যার যা হবে তাই পড়ে। কথা চাপা পড়ে গেল। সবাই বলচে ওই হাজরাতলা দেখা যাচ্ছে— ওরা পৌছে গেল । নদীর ধারে মাঠের মধ্যে চারিধারে বহু প্রাচীন ষাড়া গাছের সারি নিবিড় ঝোপ তৈরী করেচে ওরা জড়াঙ্গড়ি করে। বেড়ার মত আড়াল করেচে.ওর ওদিকে কিছু চোখে পড়ে না। সেই ধাড়া ঝোপের বেড়ার ধায়ে একটা বড় ষাড়া গাছই হচ্ছে হাজরাতল, বৃদ্ধ হাজরা ঠাকুরের স্থান । •• সেই গাছতলায় পুজোর যোগাড় হয়েছে “পুরুতঠাকুর বসে আছে। চাল, কলা, ছোলাভিজে, পেঁপে ফুলের রাশ। লোকে লোকারণ্য হাজরাতলায়। দশ-পনেরোখীন গরুরগাড়ি \ 蠟