পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উৎকর্ণ - ২৯৯ তত ভাল লাগে না। আর সব জায়গাতেই মাটি আর কাদা, কোথাও বসা যায় না, ভিজেএকখানা বসবার পাথর নেই কোথাও । ছোটনাগপুর অঞ্চলের মত যেখানে সেখানে শিলাখণ্ড ছড়ানো নেই, অনাদৃত প্রস্তরময় শৈলগাত্র কচিং দেখতে পাওয়া যায়। তবে এত ঝর্ণ, এত বন্তপুষ্প সেখানে কোথায় ? শিলং শহর অতি সুন্দর, ছবির মত সাদা সাদা বাড়িগুলো পাহাড়ের গায়ে ধাপে ধাপে সাজানো । Kench-strasse-এ ধনী ও শৌখিন বাঙালীদের বাস–বেশ চমৎকার সাজানো বাগান সেদিকে। প্রায় সকলের বাড়িতেই ফুলবাগান। গোলাপ, ডালিয়া, কসমস ফর্গেঢ়-মি-নটু এসময়ে প্রচুর। বন্যজঙ্গলের মধ্যে এক ধরনের Compositae প্রায় পাইনবনের নীচে সৰ্ব্বত্র। আর এক রকমের lichon—আমি তার নাম দিয়েছি bird's feather lichen—গাছের ডাল থেকে টুপ, টুপ করে ঝরে পড়চে । এলিফ্যান্ট ফলস্ যাবার পথে সুপ্রভ একরকম বনের ফল তুলে খাচ্ছিল, আমাকেও খেতে দিলে—রাঙ, ছোট ছোট, যেন কুঁচফলের মত—খেতে টক্‌ ৷ ও ফল আবার খাসিয়া মেয়েরা বাজারে বিক্ৰী করচে। ও বাজে ফল যে কে পয়সা দিয়ে কিনে খায় । খাসিয়া মেয়েরা দেখতে বেশ, এক-একটা এত সুন্দর ও এমন চমৎকার তাদের মুখশ্ৰী ! ওবেলা ‘সনৎ কুটার’ যাওয়ার পথে একটি মেয়ে দেখেছিলুম, সে একেবারে পরীর মত সুন্দরী । এত ব্যাপার সত্ত্বেও বলতে হচ্ছে যে শিলং শহর আমার ভাল লাগেনি । সে প্রাণ-নাচানো সৌন্দৰ্য্য, বিরাট রুক্ষ রূপ নেই এখানকার প্রকৃতির—যা দেখেচি নাগপুরের রামটেক পাহাড়ে, Highland drive-এ বা নীলঝর্ণার ছোট্ট পাহাড়ে বা সিদ্ধেশ্বর ডুরীতে। এ বড় বেশী সাজানো-বেশী পুতুপুতু, সাজগোজ পরানো আহলাদী পুতুল । দেখতে চমৎকার কিন্তু মনে কোন বড় ভাব জাগায় না। একথা কিন্তু খাসিয়া পাহাড়ের lower elevation-এর পক্ষে থাটে না—সেখানে যা দেখে এসেচি, তার তুলনা নেই। আমি এখন বলচি শুধু শিলং শহর ও আপার শিলং-এর কথা। আমি যা ভালবাসি, প্রকৃতির সে বর্বর বন্তরূপ এখানে নেই—ঐ যে বললুম, বেশ সাজানেগোছানো আহলাদী পুতুলটি। পাইনবন অবিশুি খুব চমৎকার বটে, কিন্তু রোমাণ্টিক বৈচিত্র্য নেই ট্রপিক্যাল বনের মত। কিন্তু lower elevation-এ এক জায়গা থেকে স্যার জোসেফ হুকার দু'হাজার নানা শ্রেণীর গাছপালা সংগ্রহ করেছিলেন। শিলংকে রেলওয়ে বিজ্ঞাপনীতে ‘প্রাচ্যদেশের স্কটল্যাও বলে কেন জানি নে—এই যদি স্কট্ল্যাণ্ড হয় তবে স্কট্ল্যাণ্ডের ওপরে আমার শ্রদ্ধা কমে গেল । অথচ যে কেউ শিলং আসবে, সবাই বলবে—উ:, কি চমৎকার জায়গা মশাই শিলং ! একজন যা বলে, সবাই তার ধুয়ো ধরে । এগুলোর চোখ নেই নাকি ? এই ভিজে স্তাতসেতে একঘেয়ে পাইনবন তাদের ভাল লাগে ? কি ভিজে, 'rain, rain, go to Spain'-নীচে নেমে চল মন, শিলং মাথায় থাকুন, বাংলার সমতল জমিতে নেমে রোদের মুখ দেখে বাচি । একটা পাহাড়ের মাথায় প্রস্তরখণ্ডে বসে লিখচি। চারিধারে সোনালী কী ফুল ফুটে আছে। দূরে সমুদ্রের মত সিলেটের সমতলভূমি দেখা যাচ্ছে। কি সুন্দর পথ! শিলটাে যেমন বাজে, চেরাপুঞ্জি একেবারে স্বর্গ। শিলং থেকে চেরাপুঞ্জির পথের তুলনা দেব আমার পক্ষে তা সম্ভব নয়, কারণ আমি এ ধরণের ল্যাগুস্কেপ, কখনও দেখিনি । র্যারা বিলেত বা আয়লণ্ডের ঢেউখেলানো সবুজ ঘাসের মাঠ দেখেচেন, তারা হয়তে বলবেন এর দৃপ্ত Surrey downs-এর মত, আরলণ্ডের পল্লী অঞ্চলের মত। গৌহাটি থেকে শিলং রোডে যা দেখে