পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

vО)о о বিভূতি-রচনাবলী এসেছি, তা থেকে এর দৃশ্ব সম্পূর্ণ পৃথক। বড় বড় চুনাপাথরের শিলাখণ্ড সৰ্ব্বত্র ছড়ানে— উচুনীচু শৈলমাল সৰ্ব্বত্র। যেদিকে চোখ যায়—কত ধরণের বিচিত্র বন্যপুপ মাঠের মধ্যে। শিলাস্তুপের ধারে ধারে, দূরে দু’চারটে সঙ্গীহারা গাছ হয়তো ধুধু প্রাস্তরের মধ্যে দাড়িয়ে। শিলং-এর সেই লাল ফুলটা Compositae, বস্তমল্লিকা জাতীয় একরকম ফুল। করবীফুলের মত কি ফুল—আরও কত কি ধরণের ফুল। চেরাপুঞ্জির থেকে মুশমাই-এর পথে যে জঙ্গল আছে তা দেখায় ঠিক যেন লিচুগাছের বাগানের মত—অথচ তাদের ডালে ডালে পরগাছ ও অধিডে ভরা–তলায় নিবিড় undergrowth—অদ্ভুত ধরণের বন। এক এক জায়গায় চুনা পাথরের শৈলসালু ও নদীখাতের বিশাল চালু সম্পূর্ণরূপে বন্তপুষ্পে ভরা–কত ধরণের যে ফুল, তাই গুণে সংখ্যা করা যায় না। পাইনবন। এদিকে একেবারেই নেই। চেরা বাজারে গাড়িতে বসে লিখচি—সামনে নদীর বিরাট gorgeটা মেঘ ও কুয়াসায় ভরে গিয়েচে, তার ধারে নিবিড বন । গাড়ি ছাড়ল—এত জোরেও গাড়ি চালায় খাসিয়া ড্রাইভারগুলো ! উচুনীচু শুকনো খটখটে রাস্ত দিয়ে তীরবেগে গাডি ছুটচে, একদিকে উজ্জল পৰ্ব্বতচূড়া, বনফুলে ভরা শৈলসামু, অন্যদিকে নদীর বিরাট খাত, কুয়াসা ও মেঘ আটকে রয়েচে । তাতে আবার রামধন্থর স্বষ্টি করেচে। এক এক জায়গায় ঘন বন, যেন লিচু বাগানের মত দেখতে। অথচ মধ্যে ঘন অন্ধকার, শাখাপত্রে নিবিড়, ডালে ডালে আর্কিড, নীচে undergrowth-ওয়ালা বন —এ অঞ্চলের কী একটা গাছও চিনিনে! আসামের বন সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র, না ফার্ণ, না Compositae, না প্রাইমূল, না মল্লিক, করবীর মত ফুলগুলো—কিছুই কি বাংলাদেশের মত নয় ? উনবিংশ মাইল থেকে বড় নদীখাতটা শুরু হোল, প্রায় ৮/১০ মাইল মোটর রোডের সমান্তরাল চলেচে, তবে কুয়াসায় আবৃত বলে ভাল দেখা গেল না । অপর পারের সামুদেশে নিবিড় Temperate forest, ফার্ণ আর শেওলা, খুজা আর প্রাইমুলা অজস্র। যার অভাবে শিলং ভাল লাগছিল না—তা পেলুম আজ চেরার পথে। এত বেশী পরিমাণে পেলুম, যে আর আমার কোন অভিযোগ নেই শিলংএর বিরুদ্ধে। এ এক স্বপ্নলোক আবিষ্কার করেচি চেরার পথে, যে স্বপ্নলোক পাথরে, বনে, ফুলে, মেঘে, ধুধু নির্জনতায়, বিরাটত্বে অভিনবত্বে বিচিত্র। যেখানে আজ মুশমাই গ্রামে চেরা মালভূমির প্রান্তে শিলাখণ্ডে বসে লিখছিলুম, সে সৌন্দর্য্যের তুলনা আছে ? ওই তো আমার চিরকালের স্বপ্নের সার্থকতা । শিলং ফিরে দেখি সুপ্রভা নেই মোটর স্টেশনে। খানিকক্ষণ অপেক্ষ করলুম তারপর লাবান চলে গেলুম। একটা কথা লিখতে ভুলেছি। বড়বাজারের কাছে যখন বাস থেমেচে দুটি সাহেবের ছেলে এসে মোটরে উঠল, কি চমৎকার চেহারা দুটির। বড়টির সঙ্গে আলাপ হোল, বেশ লাজুক, কোন ইংরেজ বালকদের মত উগ্র নয়। বললে তার মা খাসিয়া মেয়ে। মোটরে স্টেশনে স্বপ্রভাদের জন্যে অপেক্ষা করে লাবানে গেলুম। ওরা মোটর যোগাড় করতে পারেনি বলে আসতে পারেনি। সেখানে চা খেয়ে বীণা ও সুপ্রভার সঙ্গে অনেকক্ষণ গল্প করলুম। বীণা একটা ফুলের তোড়া দিলে, চমৎকার সাদা গোলাপ ফুলের তোড়াটি। কাল যাওয়ার কথাবার্তা হোল, সাড়ে আটটার সময় গাড়ি আসবে আমার হোটেলে। একখানা ট্যাক্সি পাওয়া গিয়েচে, তিনজনে যাব আমরা । ও বল্পে, কমলা নেব অনেক করে সঙ্গে, গাড়িতে বড় মাথা ঘোরে । বৃষ্টি নামল সামান্ত। আমি হোটেলে ফিরলুম। রাত সাড়ে সাতটা। কাল সকালে শিলংয়ের ওয়ার্ড লেকে বেড়াতে গেলুম, চারিধারে পাইনবনের সারি, ঘুরে