পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

లిరి పి বিভূতি-রচনাবলী ঢালু নিবিড় বনে চাপা। টিফার্ণ আর কত ধরণের গাছ, কত কি ফুল! চেয়াপুঞ্জির পথের সে gorgeটা এদের তুলনায় কিছু না। কুয়াসা করে আছে gorge-এর মধ্যে। যেন ওর মধ্যে কেউ কাঠখড়ে আগুন দিয়েচে, সাদা ধোয় উঠচে। ডাইনে খাড়া উত্তঙ্গ পাহাড়ের দেওয়াল, মধ্যে সরু পথ, বায়ে গভীর খাদ । খাদের দিকে জানলা দিয়ে চাইলে মাথা ঘুরে ওঠে, নীচু পৰ্য্যন্ত দেখা যায় না। ঢালুতে কত রকমের গাছপালায় নিবিড় বন । চেরাপুঞ্জির সেই সব ফুল, আরও সংখ্যায় বেশী। খাসিয়া ড্রাইভার প্রাণের মায়া রাখে না । সেই পাহাড়ের চূড়ায় চূড়ায় বেজায় আঁক-বাকা উচুনীচু সংকীর্ণ পথে তীরবেগে গাড়ি ছুটিয়েচে—যদি স্টীয়ারিং একটু বেগড়ায়, কি গাড়ি স্কিড করে—তবে একেবারে ২০০০ ফুট নীচে পড়ে গাড়িসুদ্ধ চূর্ণ-বিচূর্ণ হবে। পাইউম্শ্লে গেটে দুদিকের গাড়ি একত্র না হলে মোটর ছাড়ে না। এদিক থেকে শিলংএর, ওদিক থেকে সিলেটের বহু বাস ও প্রাইভেট্ কার দাড়িয়ে । নেমে বেড়ালুম, দূরে সিলেটের সমতলভূমি মেঘের মত দেখা যাচ্চে। আমি কেবলই ভাবচি–কয়েক ঘণ্টা মাত্র আগে স্বপ্রভা এইখান দিয়ে চলে গিয়েচে—এখন যদি সে থাকত, দুজনে কত গল্প করতুম। সত্যি, সারা পথটাতে যখনই সৌন্দর্য্যের অপূৰ্ব্বতায় বিস্মিত, মুগ্ধ হয়েচি, তখনই ওর কথা আমার মনে হয়েচে । হর্ষবিষাদে ছুটেছে আজকের গোটা অপরাতুটির এ বিচিত্র যাত্রাপথে। পাইউম্শ্নে ছাড়িয়েও কত gorge—নংটু বলে একটা জায়গায় কয়েক মাইল মাত্র আগে একটা সুগভীর নদীখাত, তার মধ্যে কি নিবিড় অরণ্যানী, চেয়ে দেখলুম, অত নীচে তো নজর হয় না, তবুও যতটা দেখলুম, নিবিড় কালো অন্ধকার হয়ে রয়েচে ভেতরটা । শিলাখণ্ডের ওপর দিয়ে নদী বয়ে যাচ্ছে সেই টি ফার্ণ শোভিত নিবিড় জঙ্গলের মধ্যে । নটু থেকে পথ অনেক নেমে গেল, গাছপালার শোভা আরম্ভ হোল, সত্যিকার বন যাকে বলে তা আরম্ভ হোল । সে বনের বর্ণনা দেওয়া সম্ভব নয় । আমি কখনও সে ধরণের নিবিড় বন দেখিনি। সে বন অন্ধকারে নিবিড়, দুষ্প্রবেশু, আর্দ্র, কত কি বিচিত্র গাছপালায় ভরা। আসামের এদিকের একটা গাছও আমার পরিচিত নয়। জংলা কল, মুপুরি, Cycades, বাশ, পাম্ এসবও আছে। ফুলই বা কত রকমের । বড় বড় পাৰ্ব্বত্য ঝর্ণ শিখরদেশ থেকে নীচে সবেগে নামূচে । ( আর এখন লিখব না, টেপাথোলাতে স্টীমার এল, এর পরেই গোয়ালন্দ, জিনিসপত্র গোছাতে হবে। ) কলকাতায় বসে সেই পথের কথাই মনে পড়ছে। সেই অপূৰ্ব্ব পথের সৌন্দর্য্যের মধ্যে বসে সারাক্ষণ কেবল ভেবেছি—আহ, সুপ্রভা যদি থাকত, তবেই এটা দেখাতুম, ওটা বলতুম, আহা সে নেই, কাকেই বা বলি ? আমার পাশে যে কয়েকটি লোক বসে—সবাই লাট-দপ্তরের কেরানী, ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছে—তারা বসে চুলচে, নয়তো গল্প করচে অবিশ্রান্ত, দুজনে বমি করতে শুরু করে দিলে, কেউ চেয়েও দেখছে না সেই বিরাট gorgeগুলোর সৌন্দৰ্য্য, তার উদ্ভিজ্জ-সংস্থানের বৈচিত্রা, কত টিফার্ণ, কত কি বিচিত্র বনফুল, কত ঝর্ণা, মেঘ উঠছে gorge থেকে, গভীর খাতের নিম্নতল থেকে ওপর পাহাড় পৰ্য্যন্ত বহু Zone এ বিভক্ত উদ্ভিজ্জ-সংস্থানের বৈজ্ঞানিক রূপ। কি বিপজ্জনক সংকীর্ণ রাস্তা পাহাড়ের ওপর ; কি রূপ সারাপথের! নংটু থেকে ডাওকি পৰ্য্যন্ত সে কি নিবিড় ট্রপিক্যাল অরণ্যানী গভীর gorge-এর তলদেশে কালো অন্ধকারের মধ্যে, কত জংলী ফল, Cycawers, ফার্ণ, আর ফুল, ফুল, ফুল—পাহাড়ের সাহুদেশ আলো করে রেখেছে সেই লাল ফুলটাতে—সুপ্রভা বলেছিল যেটা সিলেটের সমতলভূমিতেও দেখা যায়—দশ-বারোটা বিভিন্ন শ্রেণীর ফুল গুনেচি, বড় বড় লত, পরগাছা, অনেক নীচে ক্ষুদ্র পাৰ্ব্বত্য নদী বয়ে চলেচে শিলাখণ্ডের ওপর দিয়ে, সেই