পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○〉e বিভূতি-রচনাবলী এখন যারা এসেচে জীবনে—তখন ওরা ছিল না । ওদের সত্যিই বড় ভালো লাগে । তাই আজ দুপুরে বসে কেবলই কাল রাতের মত ছোট্ট একটি পল্লীনদী, একটি বকুলগাছের ছায়াস্নিগ্ধ গ্রামএর কথাই মনে পড়ে । সুপ্রভার কথা সব সময়েই মনে হচ্চে, আহ, কোথায় কতদূরে রয়েচে পড়ে, ওর বাবার আবার করেছে অমুখ—ছেলেমানুষ, তাই নিয়ে ওর মন খুব খারাপ হবারই কথা । সমস্তদিন যদি এ পার্কটিতে বসে এমনি আপন মনে ভাবতে পারতুয, খুবই ভাল হত। কিন্তু তা হবার নয়, আমরা পাটনা শহরে এসেচি শুনে তাবৎ প্রবাসী বাঙ্গালীরা ভাবচেন আমরা র্তাদের অতিথি, কারণ মাতৃভূমি থেকে এসেচি, একটা প্রীতির চোখে সবাই দেখবেন, ওটা বেশী কথা নয়। বৈকালে একট চা-পার্টিতে নিমন্ত্রণ ছিল—এখানকার পাবলিক প্রসিকিউটর মিহিরলাল রায়ের বাড়ি । সেখানে গিয়ে দেখা বৈকুণ্ঠবাবু এ্যাডভোকেটের সঙ্গে-ভাগলপুর থেকে যখন-তখন আপলের মোকদ্দমা করতে এসে ওঁর বাসায় উঠতাম। অনেকগুলি ভদ্রলোক এসেছিলেন—সবাই যখন চায়ের টেবিলে প্রবাসী বাঙ্গালীদের বর্তমান দুৰ্দশ, বিহারীদের সহানুভূতির অভাব, এমন কি বাঙ্গালীদের প্রতি স্পষ্ট বিদ্বেষ প্রভৃতি বর্ণনা করছিলেন, আমি তখন আবার অন্তমনস্ক হয়ে জানলার বাইরে তাস্তস্থৰ্য্যের রঙে রঙিন আকাশ ও রাঙা-রোদ মাখনো গাছপালার দিকে চেয়ে ভাবচি, কত গ্রামের গাছপালার ছায়ায় এই সন্ধ্যায় কিশোরী মেয়েরা গা ধুয়ে চুল বেঁধে নিজেদের ছেলেমামুষি মনে কত কি ভাবচে, কত ভাঙা-গড়া করচে মনে মনে তার ভবিষ্যৎ নিয়ে, কত স্বপ্ন দেখেচে—তারপর এক অখ্যাত অবজ্ঞাত পাড়াগায়ে ছাড়িকুড়ি নিয়ে সারাজীবন কাটালে । সন্ধ্যার সময়ে বি-এল কলেজের হলে প্রকাণ্ড সভা। নীরদের অভিভাষণ বড় চিন্তাপূর্ণ হয়েছিল। সেখান থেকে আমরা যখন বাইরে এসে বারানায় দাড়িয়েছি, তখন ফুটফুটে জ্যোৎস্না রাত, আজ পাটনাতে তেমন শীত নেই, আমার কেবলই বাংলাদেশের কথা মনে হয় । এতক্ষণ সবাই কি ঘুমিয়ে পড়েচে ? ওরা সবাই ?• • • সুপ্রভাও? -- সুশীলমাধব মল্লিক এখানকার বড় এ্যাডভোকেট । আমি তাকে এর আগে হাইকোটে কয়েকবার দেখেচি। তারই বাড়িতে নৈশভোজের নিমন্ত্রণ । তাদেরই গাড়িতে সবাই গিয়ে পৌছলুম। সেদিন বনগায় যেমন এক সভা বসেছিল মন্মথ রায়ের বাড়িতে—এদিন এখানেও সুশীলমাধববাবুর বৈঠকখানায় রঙীনদ, কলেজের জনৈক biology-র অধ্যাপক, নীরদ, সজনী, আমি সবাই মিলে আরম্ভ করলুম। আনাতোলা ফ্রাস সম্বন্ধেই তর্কট গুরুতর। খাওয়ার সময় মুশীলবাবু নিজে বসে এত তদ্বির করতে লাগলেন—বিশেষত: বৃদ্ধ বোধহয় সন্ধ্যার পরে ছ এক পেগ টেনে একটু থোসমেজাজে থাকেন—যে আমরা না পারি পাতের তলায় সন্দেশ লুকিয়ে ফেলে ফাকি দিতে, না পারি মাছ-মাংসের বাটিতে একটুকরো ফেলে রাখতে। পাটনায় এসে কেবলই খাচ্চি, খেয়েই প্রাণ গেল । রাত অনেক হয়েচে। জ্যোংল আজও ফুটেচে। মণিদের বাড়ি এসে সকলে ঘুমিয়ে পড়লুম। সকালে উঠে এখানকার সেসন জজ শিবপ্রিয় বাড়য্যের বাড়ি আমি, নীরদ আর ব্ৰজেনদা গেলুম বিলিতী মিউজিক শুনতে। নীরদ ও জিনিসটা বোঝে। আমি ওদের ঘর থেকে বেরিয়ে গঙ্গার ধারে গিয়ে দাড়ালুম। সাহেবী ধরণের বাড়ি, সবুজ ঘাসে মোড়া লন, বড় বড় গাছ, ধুধু করচে সামনে গঙ্গার চর, দূরে ঘাটে স্টীমার পারাপার হচ্ছে। নীল আকাশের তলায় দাড়িয়ে