পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\ტჯ 8 বিভূতি-রচনাবলী সৌন্দর্যজ্ঞান প্রকাশ করেচে ফুলের গাছ পুতে । এক এক ধরণের কাব্য রচনা। মনের সৌন্দৰ্য্য যাতেই যে ভাবেই প্রকাশ করা যায় তাই তো শিল্প—সেই হিসেবে উদ্যান-রচনা একটা বড় শিল্প । ভগবান বোধহয় নিজেকে প্রকাশ করেচেন বিশ্ব-রচনার মধ্যে দিয়ে। Analogyট হয়তে ঠিক হল না, কিন্তু ভাবতে বেশ লাগে। আর একটা কথা ভাবছিলুম, যাকে ভালোবাসা যায় বেশী, তাকে দুঃখ দিলে ভালবাসা বদ্ধিত হয়, আদর দিলে তত হয় না। এ পরীক্ষিত সত্য । এতে যে সন্দেহ করে, সে ভালবাসার ব্যাপার কিছু জানে না। যাকে ভালবাসে, তাকে খুব আদর দিও না, ভালবাসা কমে যাবে। মাঝে মাঝে তার প্রতি নিষ্ঠুর হয়ে, ভালবাসার সঙ্গে করুণা ও অনুকম্পা মিশে ভালবাসার ভিত্তি দৃঢ়তর হবে। ভগবান যাকে বেশী ভালবাসেন, তাকেই কি বেশী কষ্ট দেন—তবে কি এই বুঝতে হবে ? আজ বিকেলে বিশ্ৰী ঝড়বৃষ্টি, একঘেয়ে বাদল। স্কুলের ছেলেদের নিয়ে মিউজিয়মে স্বাস্থ্যপ্রদর্শনী দেখতে গিয়েচি। একদল ঢুকেচে একদল ঢুকতে পারেনি, তাই নিয়ে ওখানকার সেক্রেটারীর সঙ্গে ভীষণ গোলমাল—ছেলেরা হাতাহাতি করতে যায়। আমি তাদের থামিয়ে দিই। সাহেব আমার নাম লিখে নিলে—অর্থাৎ আমার নামে কি যেন রিপোর্ট করবে। করগে যা রিপোর্ট, তোর রিপোটকে আমি ভয় করিনে। ওয়াছেল মোল্লার দোকানে জামাকাপড় কিনতে গিয়ে আটকে গেলুম বৃষ্টিতে। তারপর পরেশ খুড়োর সঙ্গে দেখা করে ফিরি। ক'দিনই বডড ছুটোছুটি হচ্চে, কাল পুবী যাব । ঝড়বৃষ্টি পড়ে গেছে, তা কি করব, উপায় নেই। এখন না গেলে ছুটি কৈ আর ? কাল গিয়েছিলুম রাজপুরে বিকেলবেলা । নগেন বাগচীদের পুকুরঘাটে সন্ধ্যায় সকলে দাড়িয়ে কত কথা মনে হল—অনেকদিন আগে এদের এই বাড়িতেই ছিলাম। এই পুকুরঘাটে মা নাইতেন। সেই রকমই সব আছে বাড়িটার। কিন্তু এই ১৩।১৪ বছরে আমার জীবনে কি পরিবর্তন হয়ে গিয়েচে তাই ভাবি। সম্পূর্ণ একটা ওলট-পালট হয়ে গিয়েচে, মনের দিক দিয়ে, সবের দিক দিয়ে । তখনকার আমি আর এই আমি কি এক ? মোটেই না—সম্পূর্ণ পৃথক দুই মানুষ । o পুরী যাওয়া হয়নি। ঝড়বৃষ্টি দেখে যাওয়া বন্ধ করিনি। টিকিট কিনে এনেছিলুম, সুপ্রভার পত্র পেলুম, সে ওয়ালটিয়ার গিয়েচে, তাতেই যাওয়া বন্ধ করলুম। দেশে চলে গেলুম সাড়ে ছাঁটার গাড়িতে। বেজায় ঝড়বৃষ্টির মধ্যে নেমে যদি গাড়ি না পাওয়া যেত, বড় কষ্ট পেতাম। তার পরের দিন সকালে বীরেশ্বরবাবুর সঙ্গে গল্প করি। দুপুরে নৌকো করে বারাকপুরে গেলুম সরস্বতী পূজো করব বলে আমার ঘরে। খুকুর ওখানেই আছে। খুকু একটু পরেই বার হয়ে এল। অল্প গল্পগুজব করলে। এবার চড়কতলার ছেলেরা বারোয়ারীতে সরস্বতী পুজো করচে। স্বামাচরণ দাদাদের বাড়ি চুরি হয়ে গিয়েচে বলে রাত্রে আজকাল সেখানেই শুই । আমার ঘরে তার পরদিন সরস্বতী পূজো করলুম। বাল্যকালে দেশে সরস্বতী পূজো করেচি, আর কখনো থাকিওনি দেশে । এতকাল পরে এই । খুকুর এসে অঞ্জলি দিলে—পাচী ও খুকুকে বল্লুম, তোরা প্রসাদ ভালো করে দে সবাইকে । 够 বৈকালে কুঠার মাঠে একাই গেলুম বেড়াতে । গাছে গাছে কুল থেয়ে বেড়াই ছেলেবেলার মত। চারাগাছে কুল ফলেচে, কিন্তু ছেলেবেলার মত কুলগুলো তেমন মিষ্টি না। শিমূল গাছে