পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(ILO বিভূতি-রচনাবলী যৌবন সরসীনীরে মিলন শতদল কোন চঞ্চল বন্যায় টলমল টলমল আর একটা গান—রোদন ভরা এ বসন্ত’—চিত্রাঙ্গদা গীতিনাট্যের গানটা । কামরূপ জেলার দিগন্তব্যাপী প্রাস্তর ও জলার ওপর আকাশের ছায়া পড়েচে, সন্ধ্যা হয়ে এলেও স্বৰ্য্যাস্তের after glow এখনও আকাশে । ঝিঁঝি ডাকচে বনে বনে, সুপ্রভা ও শিলং অনেক দূরে গিয়ে পড়েচে । মণি ডাক্তার এতক্ষণ বাসা পৌছে তার সেই ছোট চালাঘরখানায় ভাত চড়িয়ে দিয়েচে । আহা, গরীব বেচারা ! কত গ্রাম, কত মাঠ-ঘাট-প্রাস্তর, এখান থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে কত গ্রামের কত সুখ-দুঃখ আশা-নিরাশা দ্বন্দ্বের মধ্যে একখানি মাত্র ক্ষুদ্র খড়ের ঘরের জন্তে আমার সহানুভূতি এত বেশি কেন ? রাণাঘাট স্টেশনে পরদিন দুপুরে পৌছে যেন মনে হল বাড়ি এসেচি। এখান থেকে আমার সুপরিচিত সব কিছুই। মনে হল নিবারণ গোয়ালা এতক্ষণ ওপাড়ার ঘাটে স্নান করতে নেমেচে —কি জানি কেন এই চিন্তাটা মনে হয়ে বড় আনন্দ পেলাম । জন্মাষ্টমীর ছুটিতে দেশে যাওয়া আমার পক্ষে একটা আনন্দজনক ব্যাপার। এই জন্মাষ্টমীর সঙ্গে আমার জীবনে অনেক শুভদিন, বিশেষ করে একটি অতীব শুভদিনের স্মৃতি জড়ানো । তাই জন্মাষ্টমী এলেই মন ব্যস্ত হয়ে ওঠে দেশে যাওয়ার জন্তে । এই ক’বছর তার সুবিধা ও সুযোগও ঘটেচে–১৯৩৪ সাল থেকে । এবারও কাল গিয়েচে জন্মাষ্টমী, আজ নন্দোৎসব। বনগাঁয়ে গিয়েছিলুম শনিবারে। সেদিন কি ভয়ানক বর্ষা ! থানাডোবা জলে ভর্তি হয়ে থৈ থৈ করচে! ওদিন দুপুরে খুব জল হয়ে গিয়েচে ওখানে। গিয়েই শুনি ফণিবাবু ওভারসিয়ারের মেয়েটি সেই বিকেলে নিমোনিয়ায় মারা গিয়েচে । সন্ধ্যার সময় আমরা অনেকে তাদের সাত্বনা দেওয়ার জন্তে সেখানে গিয়ে অনেক রাত পৰ্য্যন্ত বসে রইলুম। পরদিন খয়রামারির মাঠে আমার সেই প্রিয় স্থানটাতে দুপুরে গিয়ে দেখি মটরলতার ঝাড় তখনও টাটুকা রয়েচে, ছোট এড়াঞ্চির ঝোপগুলো বর্ষার জল পেয়ে বিষম বাড় বেড়েচে । বিকেল ছ’টায় গেলুম। যাবার পথটি বড় মুন্দর লাগল সেই ছায়াভরা বিকেলে । খুকু এসে অনেকক্ষণ গল্প করলে। সন্তু এসেও বসল। কালোর মেয়েকে এনে খুকু আমার কোলে দিলে । সস্তুকে জিজ্ঞেস করলুম সিলেণ্ডাইন মানে কি ? খুকু বল্লে—আহা, ওকথা আর জিগ্যেস করতে হবে না। মিনতা বাংলাদেশের রাজধানী বলতে পারলে ন!—বলে খুকু তো হেসেই খুন। সন্ধা পৰ্য্যস্ত ওদের ওখানে ছিলাম, তারপর চলে এলুম। দেবেনের ডাক্তারখানার সামনে বিশ্বনাথ আর সরোজ বসে গল্প করচে অন্ধকারে । আমি সেখানে একটু বসে চলে এলুম ডাক্তারবাবুর বাড়ি গান শুনতে। আমার সঙ্গে প্রথম দেখা হয় কি ভাবে, খুকু সেই গল্পটা করলে সস্তুকে । ১৯১৮ সালের জন্মাষ্টমী ছুটিতেও এই বাসাতে এসেছিলুম সকালে । তখন খিচুর থাকত, খিচুর মা তখনো বেঁচে । সরকারী ডাক্তারখানার কোয়াটারে তখন ওরা থাকত। . আজ সকালে ছায়াভর পথ বেয়ে এক হেঁটে যাই বারাকপুরে। বর্ষায় বনস্থলীর শোভা আরও বেড়েচে । কোথাও তলাকুচে পেকে টুক্ টুক্‌ করচে, নাটাকাটার ফুল ফুটেচে, বনকলমীর ফুল ঝোপের মাথায় কচিৎ দৃশ্যমান, কচিৎ এইজন্তে বললুম যে এই ফুলটা এবার যেন দেশে একটুকু কম, ঢোলকলমীর ফুল খুব ফুটেচে, কিন্তু বনকলমী তেমন দেখা যায় না। জগোর