পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৩২ বিভূতি-রচনাবলী কি দুর্য্যোগ আজ রাত্রে এখন যেন ঝড় বেড়েচে । আজ সারাদিন এই ঝড়বৃষ্টির মধ্যে টেটো করে ঘুরে বেড়িয়েচি । রাত্রি ১০টা । বৃষ্টি সমানে চলচে, গে। গে। করে ঝড় বইচে । আমি ভাবচি বহুদিন আগে ১৯২৭ সালে ঠিক এই রাত্রিটিতে এই সময়ে আমি আর অম্বিক ভাগলপুর থেকে পায়ে হেঁটে দেওঘর যেতে জামদহ ডাকবাংলোতে কাটিয়েছিলুম। এখনও মনে পড়চে নির্জন শালবনের মধ্যে চানন নদীর ধারে সেই বাংলোটি—আমি এদিকে কোণের ঘরে টেবিলের ওপর বসে ডায়েরি লিখচি আর বাংলোর ওদিকে লছমীপুর স্টেটের ম্যানেজার নদীয়ার্চাদ সহায় প্রজাপত্তর নিয়ে কাছারী করচেন। এই রাত্রেই শোবার সময় আমি অম্বিককে বলি, ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের নিরাপদ রাস্তা ছেড়ে দিয়ে কাল লছমীপুর হয়ে কানিবেলের জঙ্গলের পথে দেওঘর যেতে হবে। তাতে প্রথমে সে ঘোর আপত্তি জানায়, শেযে রাজী হল । সেই ১৯২৭ সালের এই দিনটি—আর ১৯৩৭ সালের এই দিন ! কত পরিবর্তন হয়ে গিয়েচে জীবনে সব দিক থেকে. যদি ধরা যায় তারও আগে ১৯১৭ সালের এই সময়ের কথা -সেই মামার বাড়িতে থিয়েটার করলুম আমি ও মেজমামা মিলে করুণ গান গাইলে – আমি না তোর জান কলিজা ভালবাসা গেছে বোঝা তবে তো পরিবর্তনের অনন্ত অকুলে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে হবে। ১৯২৭ সালে আমি মুক্ত পথিক, পাহাড়ে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াই অপ্রত্যাশিত অজানার সন্ধানে —চোখে মায়ার ঘোর, সৌন্দর্য্যের ঘোর, এখনও আমার সে ঘোর কাটেনি, বরং অনেক— অনেক ঘনীভূত হয়েচে । জীবনে তখন ছিলুম এক, এখন আরও সব অনেক এসেছে। যেমন স্বপ্রভা খুকু, মিয়, রেণু –এরা সব। এই সামনের রবিবারে তো খুকুর সঙ্গে দেখা হবে ছ’ঘরেতে —তারপর ৯ই অক্টোবর সুপ্রভা আসবে শিলং থেকে । ওর মায়ের সঙ্গে কাশী যাচ্ছে পূজোয় বেড়াতে—ওর সঙ্গেও দেথা হবে তারপর আমি চাটগা যাব ইচ্ছে আছে, সেখানে রেণুর সঙ্গে দেখা হবেই। এরা এখন জীবনে এসে আমায় খুব আনন্দ দিয়েচে—তবুও দশ-এগারো বছর আগেকার সেই বনে, পথে, প্রান্তরে, অরণ্যসীমায় যাপিত দিনরাত্রিগুলির স্মৃতি ফিরে এলে মনটা কেমন হয়ে যায়--- অভিজ্ঞতা অর্জন যদি জীবনের উদেশ্ব হয়, তবে এই দীর্ঘকালের ব্যবধান, উভয় দিনের মধ্যে আমায় কত বিচিত্র অমূল্য অভিজ্ঞতা বহন করে এনে দিয়েচে । আমি সেদিক থেকে ধনী, তবুও আজ কেউ যদি বলে—সে জীবন চাও না এ জীবন ? আমি সেই জীবনে আবার এখুনি ফিরে যেতে চাই, যদি কেউ দিনগুলো ফিরিয়ে দিতে পারে। ১৯৪৭ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর পর্য্যন্ত বেঁচে থাকব কি ? কি লিখব সে দিনটিতে ? তখন কোথায় থাকবে আজকের দিনের সঙ্গীরা ? কোথায় থাকবে খুকু স্বপ্রভা?"রেণুমা ? কে বলবে ? ভীষণ বড়ের রাত্রি। ঝড়ে বিরাট সে সে শব্দ। রাত্রে ভয়ে ঘুম হল নামেসমৃদ্ধ। রাত দেড়টা। মনে হচ্চে যেন মেসের ধাড়টা চুলচে। এমন ভীষণ ঝড় ১৩১৬ সালের পরে আর দেখেচি বলে মনে পড়চে না তো। সারা আকাশ রাঙা ধূসর মেঘে উগ্ৰমূৰ্ত্তি, রুদ্র প্রকৃতির রক্তচক্ষু যেন মেঘের আড়াল থেকে উকি মারচে। কাল স্কুল ছুটি হয়ে গিয়েচে । অন্ত অন্ত বার এ সময় বাইরে যাবার জন্তে কত আগ্রহ থাকে,