পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VENe বিভূতি-রচনাবলী দোকান পর্যন্ত গিয়েচি, আইনদির চাচ ডাক দিলে। —কি চাচা, কেমন আছ ? চাচা বিস্তামুন্দর ও মহাভারত দিব্যি মুখস্থ বলে গেল। বয়ে, একখানা বিদ্যামুন্দর আমার ছেল, কে যে নিয়ে গেল ! * - তারপর আমরা গিয়ে কলাতলার দোয়াতে বসলুম। ভারী সুন্দর জায়গা। অনেকখানি জল আছে। জলের একধারে ফুল ফোট হিঞ্চের ক্ষেত। জলের ধারে দীর্ঘ দীর্ঘ জলজ ঘাস । বেশ সুন্দর ঠাণ্ড জায়গা। দূরে বট-অশ্বখের সারি। আজ বৈকালে কলাতলার দোয়াতে বেড়াতে গেলুম। চমৎকার ঝিঙের ফুল ফুটেচে। অনেকক্ষণ কাটালুম বৈকালে—এদের সকলের কথাই মনে হল। ঘর সংক্রান্ত একটা গোলমাল হয়েচে, মটকা কাল ঝড়ে উড়ে গিয়েচে–ভগবান এ বিপদ থেকে উদ্ধার করুন । অনেকগুলো চিঠি নানা জায়গা থেকে আজ এসেচে। প্রকাশকদের নিকট থেকে, সভাসমিতি সংক্রান্ত ইত্যাদি। সুপ্রভার চিঠিও ছিল । কলাতলার দোয়াতে জলের ধারে বসে কত কথা মনে এল। রেণুর একখানা পত্রও পেয়েছি আজ অনেকদিন পরে। চাটগায়ে গিয়েছিলুম সেই কতদিন আগে—এখন আমাদের দেশের এই খেজুরের কাদিভরা খেজুর গাছ, ওল গাছ, ঝিঙের ক্ষেত, ধানক্ষেত, বট-অশ্বখের গাছ, ওপারে আরামডাঙ্গার বঁাশবনে অস্তস্থৰ্য্যের হলদে রোদের দিকে চেয়ে সে কথা ভাবলে আশ্চৰ্য্য হয়ে যাই । গোপালনগর যাচ্চি, দারিঘাটার পুল থেকে বাওড়ের ওপারের কি একটা গাছ, অনেকখানি নীল আকাশ-দেখে মনে হল এই অপূৰ্ব্ব প্রকৃতির সৌন্দর্য্যের পিছনে যে শক্তি আছেন, সেই শক্তি মানুষের মুখ-দুঃখে সাড়া দেন এবং benevolent নিশ্চয়ই—ওবেলা একটা বিশেষ ঘটনায় তার প্রমাণ পেয়েছি। মনে একটা অপূৰ্ব্ব অনুভূতি জাগলে এই কথাটি ভেবে । বস্তুতঃ এই ভাগবতী শক্তি—যে মুহূৰ্ত্তে আমরা জীবনের পথে মেনে নেব—এর বাস্তবতা অনুভব করব—সেই মুহূৰ্ত্তে আমরা আধ্যাত্মিক নবজীবন লাভ করব । সন্ধ্যার পরে ইন্দুদের বাড়ি বেড়াতে গেলুম। ফণিকাকা ছিল বসে—১৩০৫ সালে রামচাদ মারা যান, সে কথা হল। যুগলকাকার মা আর সরোজিনী পিসীদের, ত্রিনয়নী পিসীমা ( তখন বালিকা ) ফণিকাকাদের বাড়ি থাকত সারাদিন, খেত—কারণ খুব গরীব তখন ওরা—সেইসব গল্প শুনলুম। রোয়াকে বসেচি। তারা ভরা আকাশ। গভীর রাত্রি। পাশের বাড়িতে সবাই ঘুমিয়ে পড়েচে। আবার সেই সক্রিয়, হৃদয়বান, ( পার্থিব ভাষায় ) benevolent শক্তির কথা মনে এল। এই শক্তিই ভগবান । যে মনে মনে একে মানে, এই শক্তির বাস্তবতা অনুভব করে প্রাণে প্রাণে, সে সকল বিপদ, দুঃখ, সংকীর্ণতা, মলিনতাকে জয় করে। - বৈকালে সাজিতলার ঘাটে টিমের চালায় আমি আর পচা গিয়ে বসলুম। সারাদিন বড় চলচে, মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, মাঝে মাঝে বৃষ্টি আসচে। বাল্যে আমি আর ভারত এমন দিনে এই গ্রীষ্মের ছুটিতে দিগম্বর পাটনীর খেয়া নৌকোতে মাধবপুরের হাটুরে লোকদের পার করতুম—সে কথা মনে পড়ল। একবার আমার পাঠশালার সহপাঠী বন্ধু পাৰ্ব্বতী আর তার ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। সে কি আনন্দের দিনই গিয়েচে ।