পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ੇ 如4 চলমান জগতের রূপ আমার মনে আনন্দের বাণী বহন করে আনলে । আজ সন্ধ্যায় কি অপূৰ্ব্ব শ্ৰী ! অস্তমান স্বৰ্য্যের রঙে সমস্ত মাঠ, বন মায়াময় হয়ে গিয়েচে —সারা পৃথিবীটা কি অপরূপ শিল্প তাই ভাবি। আকাশের রং নীল নয়—সে কি রং তার বর্ণনা দেওয়া কঠিন—ওরকম রংএর কি নাম তা আমার জানা নেই। সন্ধ্যায় নদীজলে নেমে স্বান তো যেন দৈনন্দিন উপাসনা। আজ এখানে বেড়াবার শেষ দিন । কারণ কাল শুটোর বিয়েতে যদি বরযাত্রীদের সঙ্গে যেতে হয়, তবে কাল আর আসতে পারব না । পচা রায়কে সঙ্গে নিয়ে যাব, তার একটু আগে খুকু উঠোনে দাড়িয়ে গল্প করে গেল, তাতে হয়ে গেল একটু দেরি। আমি পচাদের বাড়ি গিয়ে দেখি সে নেই। গাজিতলার পথে সে অনেক দূরে চলে গিয়েচে, তাকে সেখান থেকে ডেকে নিয়ে গেলুম বেলেডাঙার বাধের মাথায়। কতক্ষণ সেখানে অৰ্দ্ধচন্দ্রাকৃতি মরাগাঙের ওপারের চর, খেজুর গাছ, বাশবন, জলি ধানের ক্ষেতের দিকে চেয়ে বসে পচা রায়ের সঙ্গে গল্প করি। বেলা যখন যায় যায়, তখন উঠে আইনদির বাড়িতে এসে দেথি সে বাড়ি নেই। বেলেডাঙার স্কুলের ওপর কতক্ষণ বসে রইলাম শুামল সবুজের বস্তার দিকে চেয়ে ! কি দিগন্তপ্রসারী ধানক্ষেত, বট-অশ্বখের বীথি, নতিডাঙার গ্রামপ্রান্তর, বাশবনের সারি, কি বিচিত্র মেঘস্তুপ নীল আকাশে | সন্ধ্যা প্রায় যখন হয়ে এল, তারপরে আমরা ওখান থেকে উঠে আসি । পচা একটা কলার বাগান থেকে কলা সংগ্রহ করলে। আমি বনসিমতলার ঘাটে এসে নাইলুম। আকাশে অনেক নক্ষত্র উঠেচে, বনের মধ্যে জোনাকির বাঁকি জলচে ; অন্তদিনের চেয়ে আজ বেলা গিয়েচে । সন্ধ্যায় খুকুদের বাড়ি বসে অনেক রকম গল্প করলুম, তারপর উঠে গেলুম পাচুকাকাদের বাড়ি, ওদের বাড়ি কাল বিয়ে, অনেক কুটুম্ব-কুটুম্বিনী এসেচে–পাচুকাকার ভাই ফণিকাক এসেচেন জলপাইগুড়ি থেকে—একবার সব দেখাশুনো করে সামাজিকত রক্ষা করতে যাওয়া দরকার । আজ চলে যাব। বেলা তিনটের সময় আমার ঘরে ঘুম ভেঙে উঠলুম—তারপর বেড়াতে গেলুম নদীর ধারের মাঠে। বেজায় গুমট গরম, আকাশে সাদা মেঘ। একটু পরে পাচুকাকার ছেলে শুটাে বিয়ে করে নববধূ নিয়ে গ্রামে ঢুকল। সানাই বাজচে, ঢোল-বাজনার শব্দ শুনে কল্যাণী, খুড়ীম, খুকু এরা সেজেগুজে ছুটল। আমতলায় দেখি সব চলেচে। খুকু একবার চেয়ে দেখলে আমার দিকে। ঐ ঘোড়ার গাড়িতেই আমি চলে এলুম বনগী স্টেশনে। সারা পথ ট্রেনে আকাশের দিকে চেয়ে চেয়ে মনে হচ্ছিল কি অপূৰ্ব্ব মুনার গ্রীষ্মের ছুটিই আজ শেষ হয়ে গেল ! কলকাতায় এসে কদিন বড় ব্যস্ত ছিলুম। পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করে বেড়াচ্ছি— সাতরাগাছি ও রাজপুরেও গিয়েছিলুম। পরশু হঠাৎ এলাহাবাদ থেকে উষা এসেছিল—দেখা করতে এসেছিল মেসে। আমি তখন সবে চুল কাটতে বসেচি। তাড়াতাড়ি যেতেও পারিনে —বসতে বলে যত শীঘ্র হয় চুল ছেটে দেখা করে এলুম। উষার নির্দেশমত বালিগঞ্জে গেলুম দুপুরের পর। অনেকগুলি মহিলা ছিলেন সেখানে—সাহিত্যিক আলোচনা হল অনেকক্ষণ ধরে —সকাল থেকে বার হয়ে বিকেলের দিকে ইন্দিরা দেবীর বাড়ি গেলুম রেডিওর বক্তৃতার নকলটিকে আনতে। কাল রাত্রে রাজপুরে বেগুন, আমি ও ফুলির দুই ছেলে এক মশারীর মধ্যে