পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী و ۹ رای যুগের প্রণয়ীদের উৎসাহ ও আনন্দ যোগাতে। কাল বৈকালে বিশ্বনাথ ও আমি বৈকালের ট্রেনে এলাম। এসেই সারারাত মিউজিক কনফারেন্সে গান শুনেচি। এসেচি রাত চারটার সময় বিখ্যাত কেশরী বাঈ ও বরোদার লছমী বাঈয়ের গান শুনে। বেনারসের পুরস্কার মিশ্র ও বিলায়তুর সানাই বাজনা সত্যিকার উপভোগ করবার জিনিস। কেশরী বাঈ যখন বসন্তু-বাহার আলাপ আরম্ভ করলে তখন আমাতে যেন আমি নেই মনে হল—যেন শৈশবে আমাদের গ্রামে শতমধুর বাল্যস্থতির মধ্যে ফিরে গেলুম এক মুহূর্তে। কত মধুর অপরাহ্লের ছায়ায় অতীত দিনের জীবনের ঘটনাগুলির মধ্যে দিয়ে আমার অতি প্রত্যক্ষ বর্তমান যেন অস্পষ্ট হয়ে এল—বুঝলুম না কোনটা অতীত, আর কোনটা বর্তমান। কেবল এইটুকু বুঝলুম, গান শুনতে শুনতে আমার মন আরও একজনের জন্তে খুব খারাপ হয়ে উঠল—আজই তাকে ছেড়ে এসেচি, কেবলই মনে হচ্ছিল এত মেয়ের মধ্যে কনফারেন্সের সভায়, আমার যেন কেবল তার কথাই মনে পড়েচে, অবশ্য সেই বয়সের মেয়ে দেখলে ৷ এবার বড়দিনের ছুটি কি আনন্দেই কেটেচে–ওকে নানা রকম গল্প করে ও কত রকমের কথা বলে । সে সব এমন চমৎকার যে সারা বড়দিনের ছুটি কেমন যেন নেশার মত আনন্দের ঘোরে কেটেচে । সকালে দেখা করতে যেভূম—একদিন বাজার করব বলে তাড়াতাড়ি করচি, বল্পে-কেন এখুনি যাবেন ? বহুম—বাজার না করলে বাড়িতে বকবে জাহ্নবী। ও বল্লে—আপনি একটু বকুনি সহ করতে পারেন না? আর আমি যে আপনার জন্যে কত বকুনি সহ করেচি মার কাছে ! আপনার তো ছোট বোনের বকুনি । খুড়ীমা দুদিন ভাগবত শুনতে গেলেন-আমি ওর সঙ্গে বসে গল্প করলুম কত ধরণের। বেশ কাটল ছুটিটা । কোন ছুটি এত আনন্দে কেটেচে কিনা এর আগে বলতে পারি নে। ভালবাসার প্রকৃত রূপ কি তার কতটা যে বুঝলুম! হাওড়া টাউন হলে ওঁরা আমায় এক সম্বৰ্দ্ধনা করে মানপত্র দিয়েছিল ছুটির আগেই, তাতে রবীন্দ্রনাথ আশীৰ্ব্বাণী পাঠিয়েছিলেন। একদিন আশীষ গুপ্তের মোটরে রাজপুরে ফুলিদের ওখানে গিয়েছিলুম, সেও বড়দিনের আগে। ১৯৩৮ সালটা সবদিক দিয়ে বড় অদ্ভুত বছর আমার জীবনে। এবারকারের আর একটি চমৎকার ঘটন, ভাগলপুরে সুরেন গাঙ্গুলী মশায়ের সেই চেকভের Cook's Wedding of T-T org মুঙ্গেরে কোম্পানীর বাগানে, বড বাসায় গঙ্গার ধারে আজ চোদ্দ বছর আগে কি অদ্ভুত আনন্দ ও প্রেরণা পেয়েছিলুম—তা পডলাম বসে—সেই বইখানাই (স্বরেন গাঙ্গুলীর কাছ থেকে এনেছি, বইখানা শরৎচন্দ্রের ) বারাকপুরের বাড়ির রোয়াকে বসে পড়লুম। আশ্চৰ্য্য—না! সুপ্রভা এবার একটা ভালো ক্যালেণ্ডার পাঠিয়েচে । মনে আছে এই শীতকালে পাটনার ডিস্ট্রিক্ট জজের বাডি গঙ্গার ধারে বেঠোফোনের মিউজিক শুনতে গিয়েছিলুম গ্রামোফোন রেকর্ডে, নীরদ চৌধুরীর সঙ্গে সকাল বেলা। ওপারে ধুধু গঙ্গার চর, শীতের নদী, বড় বটগাছটা—আমাকে কেবলই মনে এনে দিয়েছিল একটি মেয়ের কথা । সে যেন কোথায় দূরে আছে, শিউলি বকুলের ছায়ার ছায়ার তাকে মাঝে মাঝে দেখা যায় দুপুরে, সকালে, বৈকালে, সন্ধ্যায় ছায়া ঘন হয়ে যখন নামে। যখন চা-পার্ট বসল পাটনায় গবর্নমেন্ট উকিলের বাড়ি সন্ধ্যাবেল—তখনও রাঙা রোদ মাখানে বাইরের গাছপালার দিকে চেয়ে ওর কথাই ভেবেচি। আর কি আনন্দেই মন ভরে উঠত ।