পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দৃষ্টি-প্রদীপ \ نفر আমি একটু ইতস্তত ক'রে বললাম-ঠিক নেই, এখানে হয়ত আর আসব না। তিনি বললেন—কেন আর এখানে আসবেন না ? আমি কোন কথা বললাম না। দুজনেই থানিকক্ষণ চুপচাপ । তারপর তিনি আমার কাছে এগিরে এসে মৃদু অমুযোগের সুরে বললেন—আপনার মত ছেলে যদি কখনও দেখেচি ! আগে যদি জানতাম তবে সেবার আপনাকে নিয়ে যে ওর ঠাট। করেছিল, আমি তার মধ্যে যাই ? এখন সে-কথা মনে হ'লে লজ্জায় ইচ্ছে হয় গলায় বঁটি দিয়ে মরি। তারপর গভীর মেহের সুরে বললেন—ন, ও-সব পাগলামি করে না, আসবেন এখানে, কেন আসবেন না, ছিঃ– দরজার কাছে গিয়ে বললেন—না এলে বুঝবো আময় খুব ঘেন্না করেন, তাই এলেন না । | 이 || দাদা কালীগঞ্জে একটা বাতাসার কারখানায় কাজ করে। অনেক দিন ভর সঙ্গে দেখা হয়নি, কিছু টাকার দরকারও ছিল, কারণ কলেজের কিছু বাকী মাইনে ও পরীক্ষার ফি-এর টাকার অভাব হওয়াতে শৈলদি লুকিয়ে ষোলটা টাকা দিয়েছিল। যাওয়ার আগে সে টাকাটা তাকে দিয়ে যাওয়া দরকার, যদিও সে চায়নি। বঁাশবেড়ের ঘাটে গঙ্গা পার হয়ে ওপারে যাব, খেয়ার নৌকে আসতে দেরি হচ্চে, আমি প্রকাণ্ড একটা পুরোনো বাঁধাঘাটের সিড়িতে বসে অপেক্ষা করচি। ঘাটের ওপরে একটা জীর্ণ প্রাচীন শিবমন্দির, তার ফাটলে ফাটলে বট-অশ্বখের গাছ, মন্দিরের চুড়ার ত্রিশূলটা পশ্চিমে হেলে-পড়া সন্ধ্যার স্বৰ্য্যের আলোয় মনে হচ্চে যেন সোনার। ভারি ভাল লাগছিল মন্দিরট, আর এই জনবিরল বাঁধাঘাট। ওই মন্দিরে যদি আরতি হ’ত এই সন্ধ্যায়, বন্দনরত নরনারীর দল ওই ভাঙা চ তলে দাড়িয়ে রইত, তবে আমার আরও ভাল লাগত। কথাটা ভাবচি, এমন সময় আমার শরীরটা যেন কেমন ক’রে উঠল, কানের পাশটা শিরশির করতে লাগলো। হঠাৎ আমার মনে হ’ল এই ঘাটের এই মন্দিরে খুব বড় একজন সাধুপুরুষ আছেন, তার দীর্ঘ চেহারা, মাথায় বড় বড় চুল, প্রসন্ন হাসিম খানে মুখ । আমি তাকে দেখতে পেলাম না। কিন্তু তার উপস্থিতি অনুভব করলাম। তিনি এখানে অনেকদিন আছেন, ভাঙা ঘাটের রানীয় ব'সে ওপারের উদীয়মান পূর্ণচন্দ্রের দিকে চেয়ে এই সন্ধ্যায় তিনি উপাসনা করেন—এবং তিনি কারও ওপর রাগেন না। কত লোক না বুঝে ঘাটের নির্জনতা ভঙ্গ করে, তিনি সদাই প্রসন্ন, সকলের ওপরে সদাই স্নেহশীল । এরকম যখন হয়, তখন আমার শরীর যেন আমার নিজের থাকে না—নয়ত আমার সাধারণ অবস্থা থাকলে জিজ্ঞেস করতুম অনেক কথাই তাকে। একটু পরে খেয়া নৌকো এল — অনিচ্ছার সঙ্গে ঘাট ছেড়ে নৌকোতে উঠলাম। জায়গাটা পবিত্র প্রভাবে ভর-এমন একটা প্রভাব, যা সে-দিন বরানগরের বাগান-বাড়ির সেই সাধুর কাছে গিয়ে অনুভব করিনি। দাদা আমায় দেখে খুব খুশী হ'ল। ওর চেহারা বড় খারাপ হয়ে গিয়েছে, ছেলেবেলাকার ছধে আলতা রঙের সেই সুত্র বালককে দাদার মধ্যে আর চিনে নেওয়া যায় না। একে লেখাপড়া শিখলে না, তার ওপরে এই সব পাড়গায়ে চাকরি করে বেড়ায়—চেহারায়, বেশ