পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দৃষ্টি-প্রদীপ WS বটগাছের নীচে একটা সুন্দর ঠাকুর আছেন, শুনেচি বিষ্ণুমূৰ্ত্তি, আমার বড় ভাল লাগে– জ্যাঠাইমারা পূজো করেন না কেন ? ঘুম কি সত্যি, কিছুই বুঝতে পারলুম না। মনের সে আনন্দটা কিন্তু অনেকক্ষণ ধরে ছিল । জ্যাঠামশায়রা কি একটা মোকদ্দমার সাক্ষীসাবুদ দু-তিন দিন ধরে চণ্ডীমণ্ডপে তালিম দিয়ে শেখালেন। যে কেউ শুনলে বুঝতে পারতে যে এরা সে-সব জায়গায় যায় নি কস্মিনকালেও—সে-সব ঘটনা দেখেও নি—এদের খামার-সংক্রান্ত কি একটা দখলের মামলা । একদিন শুনলাম মামলায় এরা জিতেচেন—আবার সেই ব্যাপার দেখলুম বাড়িতে । গৃহদেবতার প্রতি ভক্তিতে আপ্লুত হয়ে উঠলেন সবাই—মহাসমারোহে পূজা হ’ল, সপক্ষের যার সাক্ষী ছিল, তাদের পরম যত্বে তোয়াজ ক’রে খাওয়ালেন । খাওয়ান তাতে ক্ষতি নেই —কিন্তু দেবতাকে এর লধ্যে জড়ান কেন ? 釁 এরা ভাবেন কি যে দেবতা তাদেরই বাধা, হাতধরা—ওঁদের মিথ্যাকে অবিচারকেও সমর্থন করবেন তিনি ভোগ নৈবিছের লোভে ? জ্যাঠাইম যখন ব্যস্ত হয়ে গরদের শাড়ি পরে পূজার আয়োজনে ছুটোছুটি করছিলেন, তখন আমার ভারি রাগ হ’ল—আজকাল এসব মুঢ়তা আমার আদৌ সন্থ হয় না, ছেলেবেলার মত ভয়ও করি না আর জ্যাঠাইমাকে—ভাবলুম এ নিয়ে খুব তর্ক করি, দু-কথা শুনিয়ে দেবো, তাতে ওঁদের উপকারই হবে—দেবতাকে নিয়ে ছেলেখেলা বন্ধ হবে—কিন্তু সীতা ও মারের কথা ভেবে চুপ করে রইলুম। | b〜 | মাস দুই হ'ল চাকুরি পেয়েছি কলকাতায় । এ চাকুরি পাওয়ার জন্তেও আমি শৈলদির কাছে কৃতজ্ঞ । শৈলদির স্বামীর এক বন্ধুর যোগাযোগে এটা ঘটেচে। যাদের বাড়ি চাকরি করি, এরা বেশ বড় লোক । বাড়ির কৰ্ত্ত নীলাম্বর রায় হাওড়া জেলার কি একটা গ্রামের জমিদার এবং সেখানকার র্তাদেরই পূৰ্ব্বপুরুষের প্রতিষ্ঠিত এক মঠের বর্তমান মালিক—এঁদের মঠের অধীনে একটা ধৰ্ম্মসম্প্রদায় গড়ে উঠেচে গত ষাট-সত্তর বছরে এবং এরাই সেই সম্প্রদায়ের ধৰ্ম্মগুরু । বৰ্দ্ধমান, বাঁকুড়, বীরভূম এই তিন জেলাতে এই সম্প্রদায়ের লোক যত বেশী, অন্ত জেলাতে তত নয় । ওঁদের কাগজপত্র ও দেশের নায়েবের সঙ্গে ওঁদের যে চিঠিপত্র লেখালেখি হয়েচে—তা থেকেই আমি এ-সব সংবাদ জানতে পারলাম অল্পদিনের মধ্যেই। এদের প্রধান আয় বৈশাখ মাসে মঠবাড়ির মহোৎসব থেকে—নানা অঞ্চল থেকে শিষ্যসেবকের দল জড় হয়ে সেই সময় বাধিক প্রণামী, পূজা, মানত শোধ দেয়, তা ছাড়া বিবাহ ও অন্নপ্রাশনের সময়ও মঠের গদিতে প্রত্যেক শিয়ের কিছু প্রণামী পাঠিয়ে দেওয়া নিয়ম। নীলাম্বরবাবুর তিন ছেলেই ঘোর শৌখিন ও উগ্র ধরনের শহরে বাবু। বড় ছেলে অজয়বাৰু এঞ্জিনিয়ারীং পড়েছিলেন কিন্তু পাস করেন নি—মেজ ছেলে নবীনবাবু এম-এ পাস, ছোট ছেলে অমরনাথ এখনও ছাত্র-প্রেসিডেন্সি কলেজে থার্ড ইয়ারে পড়ে। অজয়বাবুর বয়স পঞ্চাশের কম নয়, কিন্তু পোশাক-পরিচ্ছদে কুড়ি বছরের ছোকরাও হার মানে তার শৌখিনতার কাছে—নবীনবাবুর বয়স চল্লিশ-বিয়াল্লিশ, লম্বা, ফসর্ণ, স্বপুরুষ-পেছনের ঘাড় একদম ক্ষুর