পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/১০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত సిరి আমি লুকিয়ে যাই, এত কাঁদে মেয়ের জন্যে । হীরক সেন দিদির টাকাগলো দ্য হাতে উড়িয়েছে, আবার বলেছিল বিলেতে বেড়াতে নিয়ে যাবে। সেই লোভ দেখিয়েই নাকি টানে —দিদি আবার তাই বিশ্বাস করত। জানেন তো দিদিরও ঝোঁক আছে, চিরকাল । বিমলেন্দ চলিয়া যাইতে উদ্যত হইলে, অপর আবার গিয়া তাহার হাত ধরিয়া বলিল— তুমি মাঝে মাঝে কোন সময়ে যাও ?—বিমলেন্দ বলিল—রোজ যে যাই তা নয়, বিকেলে দিদি মোটরে বেড়াতে আসে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনের মাঠে, ঐখানে দেখা করি । বিমলেন্দ চলিয়া গেলে অপ অন্যমনস্ক ভাবে হাঁটতে হাঁটিতে রসা রোডে আসিয়া পড়িল—কি ভাবিতে ভাবিতে সে শধেই হটিতে লাগিল । পথের ধারে একটা পাক, ছেলেমেয়েরা খেলা করিতেছে । দড়ি ঘরাইয়া ছোট মেয়েরা লাফাইতেছে, সে পাকটায় ঢুকিয়া একটা বেঞ্চের উপর বসিল । লীলার উপর রাগ বা অভিমান কোনটাই হইল না, সে অনুভব করিল, এত ভালবাসে নাই সে কোনদিনই লীলাকে । এই আট বৎসরে লীলা তো তাহার কাছে অবাস্তব হইয়া পড়িয়াছে, তাহার মুখ পয্যন্ত ভাল মনে হয় না, অথচ মনের কোন গোপন অন্ধকার কোণে এত ভালবাসা সঞ্চিত হইয়াছিল তাহার জন্য ! ভাবিল, ওর দাদামশায়েরই যত দোষ, কে এ বিয়ে দিতে মাথার দিব্যি দিয়েছিল তাঁকে ? বেচারী লীলা ! সবাই মিলে ওর জীবনটা নষ্ট ক'রে দিলে ! * : কিছুদিন কলিকাতায় থাকিবার পরে সে বাসা বদলাইয়া অন্য এক বোডিং-এ গিয়া উঠিল । পরোনো দিনের কষ্টগলো আবার সবই আসিয়া জটিয়াছে—একা এক ঘরে থাকিবার মত পয়সা হাতে নাই, অথচ দুই-তিনটি কেরানীবাবর সঙ্গে এক ঘরে থাকা আজকাল তাহার পক্ষে একেবারেই অসম্ভব মনে হয় । লোক তাঁহারা ভালই, অপর চেয়ে বয়স অনেক বেশী, সংসারী, ছেলেমেয়ের বাপ । ব্যবহারও তাঁহাদের ভাল । কিন্তু হইলে কি হয়, তাঁহাদের মনের ধারা যে-পথ অবলম্বনে গড়িয়া উঠিয়াছে অপর তাহার সহিত আদৌ পরিচিত নয় । সে নিউজ’নতাপ্রিয়, একা চুপ করিয়া বসিয়া থাকিতে চায়, সেইটাই এখানে হইবার জো নাই । হয়ত সে বৈকালের দিকে বারান্দাটাতে সবে আসিয়া বসিয়াছে--কেশববাব হকা হাতে পিছন হইতে বলিয়া উঠিলেন—এই যে অপড়ববাব, একাটি বসে আছেন ? চৌধুরী-ব্ৰাদাস’ বুঝি এখনও অফিস থেকে ফেরেন নি ? আজ শোনেন নি বুঝি মোহনবাগানের কাডটা ? আরে রামোঃ —শনেন তবে— কলিকাতা তাহার পরাতন রাপে আবার ফিরিয়া আসিয়াছে । সেই ধলা, ধোঁয়া, গোলমাল, একঘেয়েমি, সঙ্কীণতা, সব দিনগলা এক রকমের হওয়া—সেই সব । সে চলিয়া আসিত না, কিংবা হয়ত আবার এতদিনে চলিয়া যাইত, মুশকিল এই যে, মিঃ রায়চৌধুরীও ওখানকার কাজ শেষ করিয়া কলিকাতায় ফিরিয়া একটি জয়েন্টস্টক কোম্পানী গড়িবার চেণ্টায় আছেন, অপকে তাঁহার অফিসে কাজ দিতে রাজী হইয়াছেন । কিন্তু অপ বসিয়া বসিয়া ভাবিতেছিল, গত ছ’বছরের জীবনের পরেও আবার কি সে অফিসের ডেমেক বসিয়া কেরানীগিরি করিতে পারবে ? এদিকে পয়সা ফুরাইয়া আসিল যে ! না করিলেই বা চলে কিসে ? সেখানে থাকিতে, এই ছয় বৎসরে যা হইয়াছিল, অপ বোঝে এখানে তা চব্বিশ বৎসরেও হইত না। আটের নতুন স্বপ্ন সেখানে সে দেখিয়াছে । ওখানকার সমযf্যান্তের শেষ আলোয়, জনহীন প্রাস্তরে, নিস্তবধ আরণ্যভূমির মায়ায়, অন্ধকার-ভরা নিশীথ রাত্রির আকাশের নীচ, শালমঞ্জরীর ঘন সবাসভরা দর্পরের রোদে সে জীবনের গভীর রহস্যময় সৌন্দয়াকে জানিয়াছে । কিন্তু কলিকাতার মেসে তাহা তো মনে আসে না—সে ছবিকে চিন্তায় ও কল্পনায় গড়িয়া वि. झ. ७-१ f: