পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/১৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S8ఫీ বিভূতি-রচনাবলী আজ গোলদীঘির বেঞ্চিখানায় বসিয়া তাই সে ভাবিয়া দেখিল, অনেক দিন আগে তার বৃন্ধ অনিল যে-কথা বলিয়াছিল, এ জেনারেশনের হাত হইতে কাজের ভার লওয়া—আর সবাই তা লইয়াছে, তার সকল সহপাঠীই এখন জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত, দিকে দিকে জীবনের সকল কম ক্ষেত্রে তারা নামিয়া পড়িয়াছে, কেবল ভবঘুরে হইয়াছে সে ও প্রণব । কিন্ত সত্য কথা সে বলিবে ?•••মন তার কি বলে ? তার মনে হয় সে যাহা পাইয়াছে জীবনে, তাহাতেই তার জীবন হইয়াছে সার্থক। সে চায় না অথ, চায় না—কি সে চায় ? সেটাও তো খুব স্পষ্ট হইয়া উঠে নাই । সে কি অপরােপ জীবন-পালক এক একদিন দপরের রোদে ছাদটাতে সে অনুভব করে, তাকে অভিভূত, উত্তেজিত করিয়া তোলে, আকাশের দিকে উৎসকে চোখে চাহিয়া থাকে, যেন সে দৈববাণীর প্রত্যাশা করিতেছে।••• কাজল কি একটা বই আগ্রহের সঙ্গে পড়িতেছে—অপ ঘরে ঢুকিতেই চোখ তুলিয়া ব্যগ্র উৎসাহের সরে উৎজলমুখে বলিল—ওঃ, কি চমৎকার গলপটা বাবা !—শোনো না বাবা— এখানে বসো— পরে সে আরও কি সব বলিয়া যাইতে লাগিল। অপর অন্যমনস্ক মনে ভাবিতেছিল—বিদেশে যাওয়ার ভাড়া সে যোগাড় করিতে পারে—কিন্ত খোকা–খোকাকে কোথায় রাখিয়া যায় ?--মামার বাড়ি পাঠাইয়া দিবে ? মন্দ কি ?--কিছু দিন না হয় সেখানেই থাকুক—বছর দুই তিন তারপর সে তো ঘুরিয়া আসিবেই । তাই করিবে ?••• মন্দ कि ? কাজল অভিমানের সরে বলিল—তুমি কিচ্ছ শনিচ না বাবা— —শনব না কেন রে, সব শনছি। তুই বলে যা না ? —ছাই শুনছো, বল দিকি শ্বেতপুরী কোন বাগানে আগে গেল ? অপ বলিল—কোন বাগানে ?—আচ্ছা একটু আগে থেকে বল, তো খোকা—ওটা ভাল মনে নেই! খোকা অতশত ঘোরপাঁচ বুঝিতে পারে না,—সে আবার গোড়া হইতে গল্প-বলা শর করিল—বলিল—এইবার তো রাজকন্যে শেকড় খুজতে যাচ্ছে, কেমন না ? মনে আছে তো ?—( অপর এক বণও শোনে নাই ) তারপর শোনো বাবা— কাজলের মাথার চুলের কি সন্দের ছেলেমানষি গন্ধ !—দোলা, চুষিকাটি, ঝিনকবাটি, মায়ের কোল—এই সব মনে করাইয়া দেয়—নিতান্ত কচি। সত্যি ওর দিকে চাহিয়া দেখিলে আর চোখ ফিরাইতে ইচ্ছা হয় না—কি হাসি, কি চোখ দুটি—মখ কি সুন্দর—ঐটুকু এক রৰ্ত্তি ছেলে—যেন বাস্তব নয়, যেন এ পথিবীর নয়—কোন সময় জ্যোৎস্নাপরী আসিয়া ওকে যেন উড়াইয়া লইয়া কোনও স্বপ্নপারের দেশে লইয়া যাইবে—দিনরাত কি চঞ্চলতা, কি সব অদ্ভুত খেয়াল ও আবদার—অথচ কি অবোধ ও অসহায় –ওকে কি করিয়া প্রতারণা করা যাইবে ?—ও তো একদণ্ড ছাড়িয়া থাকিতে পারে না—ওকে কি বলিয়া ভুলানো যায় ? অপ মনে মনে সেই ফন্দিটাই ভাবিতে লাগিল । ছেলেকে বলিল—চিনি নিয়ে আয় তো খোকা—একটু হালয়া করি। কাজল মিনিট দশেক মাত্র বাহিরে গিয়াছে—এমন সময় গলির বাহিরে রাস্তায় কিসের একটা গোলমাল অপর কানে গেল । বাহির হইয়া ঘরের দোরে দাঁড়াইল–গলির ভিতর হইতে লোক দৌড়াইয়া বাহিরের দিকে ছয়টিতেছে—একজন বলিল—একটা কে লরি চাপা পড়েছে— 蟾 অপর দৌড়িয়া গলির মুখে গেল। বেজায় ভিড়, সবাই আগাইতে চায়, সবাই ঠেলাঠেলি করিতেছে। অপর পা কাঁপিতেছিল, জিভ শুকাইয়া আসিয়াছে। একজন কে বলিল—কে