পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/১৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কেদার রাজা SAC& বাধাতে তিনি এখন ইচ্ছুক নন-নিবিরোধী লোক কেদার। মেয়ে আহিকের জায়গা করে বসে আছে দেখে কেদার একটু বিপদে পড়লেন—সেদিকে চেয়ে বললেন—সন্ধ্যে উত্তীণ হয়ে গিয়েছে এখন আবার— 馨 —তোমার যত সব ছতো—সন্ধ্যে উৎরে গেলে বুঝি আহ্নিক করে না ? তিন কাল গিয়ে এক কালে ঠেকেছে, পরকালের কাজটা এখন থেকে করো একটু— কেদার অপ্রসন্ন মুখে আহ্নিক করতে বসলেন । বাইরে থেকে কে ডাকল—ও শরৎদি—আলো ধরো, উঠোনে যে জঙ্গল করে রেখেছ— হাসতে হাসতে একটি ষোল-সতেরো বছরের শ্যামবণ মেয়ে ঘরে ঢুকল । কেদারকে দেখে সকোচের সঙ্গে গলার সরে নীচু করে শরৎকেই বললে, জ্যাঠামশায় ফিরেছেন কখন ? আমি ভাবলাম বুঝি একা— —বাবার কথা আর বলিস নে ভাই—তিনটের সময় বেরিয়েছিলেন, আর এই এখন এসে আহ্নিক করতে বসলেন— নবাগত মেয়েটি হাসিহাসি মুখে চুপ করে রইল । কেদার দায়-সারাগোছের অবস্থায় সম্পধ্যাহিক সাঙ্গ করে বললেন, আছে নাকি কিছ ? –হ’্যা, বোসো। বাতাবী লেব, খাবে ? মিষ্টি লেব, ফকিরচাঁদের মা দিয়ে গেল আজ ওবেলা । আর এই নারকোলের নাড় দটোও দিয়ে গেল, জল খেয়ে নাও— জলযোগান্তে কেদার একটু ইতস্ততঃ করে বললেন, তা হলে রাজলক্ষী তো আছিস মা, আমি ততক্ষণ একটুখানি—বরং—ওই হরি বড়িজের ওখান থেকে— —না, যেতে হবে না বাবা । বোসো। রাজলক্ষসী দঃপর রাত পয্যন্ত আমায় আগলে বসে থাকবার জন্যে এসেছে নাকি ? ও এখনি চলে যাবে— —আমি যাবো আর আসবো মা—এই আধ ঘণ্টার মধ্যে— —না, তোমার আধ ঘণ্টা আমি খুব ভাল জানি—যেতে হবে না, বোসো তুমি । তার চেয়ে বসে একটা গল্প করো— রাজলক্ষীও আবদ্বারের সরে বললে, হ্যা জ্যাঠামশাই, বলন না একটা গল্প । আপনার মুখে কতকাল গল্প শুনি নি। সেই আগে আগে বলতেন— অগত্যা কেদারকে বসতে হ'ল। খাপছাড়া ভাবে একটা গল্পের খানিকট বলে তিনি কেমন উসখসে করতে লাগলেন । মন ঠিক গল্পে নেই তাঁর, এটা বেশ বোঝা যায়। শরৎ বললে—কোথায় যাবে বাবা ? বিশ্বেসকাকার ওখানে কি বড় বেশি দরকার তোমার ? কেদার উৎসাহের সঙ্গে বলে উঠলেন, বিশেষ জরুরী, দবার লোক পাঠিয়েছে—জমিজমা নিয়ে একটা গোলমাল বেধেছে, তাই আমার সঙ্গে পরামশ করতে চায় কি না ? তাই— শরৎ মুখে কিছু বললে না। পঞ্চানন বিশ্বাস ঘণে বিষয়ী ব্যক্তি, সে লোক তার বাবার মত ঘোর অবৈষয়িক লোকের সঙ্গে পরামর্শ করবার আয়ুহে দ-দবার লোক পাঠিয়েছিল, একথা বিশ্বাস করা শক্ত । তা নয়, আসলে বাবা বারুইপাড়ার কৃষ্ণযাত্রার দলের আখড়ায় গিয়ে এখন বেহালা বাজাবেন, এই তাঁর বৈষয়িক কাজ । যদি কেউ লোক পাঠিয়ে থাকে, সেখান থেকেই পাঠানো সম্ভব । রাজলক্ষী বললে, দিদি, উনি যান তো একটু ঘুরে আসন— শরৎ বললে, হ’্যা উনি গেলে রাত এগারোটার কম ফিরবেন না, আমি একা কি করে এখানে বসে থাকি বল তো ? থাকবি তুই আমার সঙ্গে—বাবা না আসা পব্যস্ত ? বলছিস তো খুব যেতে— কেদার বিরত ভাবে বলে উঠলেন, আরে না-না, ওর থাকার দরকার হবে না, আমি যাব আর আসব, এই ধর গিয়ে ঘণ্টাখানেক, দেরি কিসের । যাই তা হলে—?