পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/২২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՀՏե বিভূতি-রচনাবলী কেদার খুশিতে উৎফুল্ল হয়ে বললেন, আরে ছিবাস যে ! এই যে রিষিকেশ এসো এসো —তোমরা না এলে তো রিয়্যাশাল আরম্ভ হয় না । বেশ ভাল করেছ—বসো । মানিক ততক্ষণ তামাক সেজে কেদারের হাতে দিয়ে বললে, তামাক ইচ্ছে করন ! কেদারের মনে অকস্মাৎ তুমলে আনন্দের ঢেউ বয়ে গেল । বাইরের ঝিরঝরে মিঠে ফালগমনের হাওয়ায় আমের বউলের সম্ৰাণ, একটা অ'কোড় ফুলের গাছের সাদা ফুল ধরেছে— সামনে এখন অন্ধেক রাত পয্যন্ত গানবাজনার গমগমে আসর, কত লোকজন, ছেলে-ছোকরা আসবে, মানুষের জীবনে এত আনন্দও আছে ! - তামাক খেতে খেতে কেদার খুশির আতিশয্যে বলে উঠলেন, ওহে রিষিকেশ, এদিক এসে —ততক্ষণ তোমার আয়ান ঘোষের পাটটা একবার মুখস্ত বলে যাও শনি— কেদারের হুকুম অমান্য করবার সাধ্য নেই কারো এ আসরে । হৃষিকেশ কমকার দএকবার টেকি গিলে দু-একবার ঘরের আড়ার দিকে তাকিয়ে বিপন্ন মুখে বলতে শুরু করলে —অদ্য পৌণমাসী রজনী, যমনা পলিনের কি অদভুত শোভা । কিন্ত আহো ! আমার হৃদয়ে সহস্ৰ বশ্চিকদংশনের মত এরুপ ম-মঘিাতী জৱালা অনুভব করিতেছি কেন ?— কোকিলের কুহ ধৰনি আমার কর্ণকুহরে—’ —আঃ দাঁড়াও দাঁড়াও, অমন নামতা মুখস্ত বলে গেলে হবে না । থেমে দমক দিয়ে দিয়ে বলো—কাঠের পতুলের মত অমন আড়ষ্ট হয়ে থাকার মানে কি ? হাত-পা নড়ে না ? এই সময় কয়েকজন লোক এসে ঢুকলো । কেদারের ঝোঁক গানবাজনার দিকে, শুধ বক্ততার তালিম তাঁর মনে পরে আনন্দ দিতে পারে নি এতক্ষণ, নবাগতদের মধ্যে বিশ্বেখবর পালের ছেলে নন্দকে দেখে তিনি হঠাৎ অতিমাত্রায় খুশী হয়ে উঠলেন । —আরে ও মন্দ, এত দেরি করে এলি বাবা, তবেই তুই রাধিকা সেজেছিস ! বারোখানা গান তোমার পাটো, আজই সব তালিম দেওয়া চাই নইলে আর কবে কি হবে শুনি ? বোস, বেয়ালা বেধে নি—গানগুলো আগে হয়ে যাক । দু-এক জন ক্ষীণ আপত্তি তুলবার চেষ্টা করলে। ছিবাস মদির নন্দ ঘোষের পাট", সে বললে, এ্যাকটোর সঙ্গে সঙ্গে গান চললে একানে গানগুলো ভালো রপ্ত হয়ে যেতো বাবাঠাকুর —নইলে এ্যাকটো আড়স্ট মেরে যাবে যে ! কেদার মখে খিচিয়ে বললে, থামো না ছিবাস । বোঝ তো সব বাপ–েকিসে কি হয় সে আমি খুব ভাল জানি। একানে গান আগে না তালিম দিয়ে নিলে শেষকালে এ্যাকটোর সময় গান গাইতে গেলে ভয়েই গলা শুকিয়ে যাবে । তুমি তোমার নিজের পাট দ্যাখো গিয়ে বাইরে বসে— ছিবাস ধমক খেয়ে অপ্রতিভ হয়ে গেল। এর পরে আর কেউ কোন প্রকার প্রতিবাদ করতে সাহস করলে না, কেদারের মাথের ওপর প্রতিবাদ কখনো বড় একটা করেও না কেউ । সতরাং গান-বাজনা চললো পরোদমে । ক্ৰমে সব লোক এসে জড় হয়ে গেল—ঘরে বসবার জায়গা দিতে পারা যায় না। বাইরের দাওয়ায় গিয়ে অনেকে বসলো। বাইরে যাবার আরও একটা কারণ এই, এদের মধ্যে বেশির ভাগ ছেলেছোকরা ও বাইশ-তেইশ থেকে ত্রিশ-বরিশ বছরের যবেক, এরা কেদারের সামনে বিড়ি বা তামাক খায় না—অথচ বেশীক্ষণ ধুমপান না করে তারা থাকতেও পারে না,বাইরের দাওয়া আশ্রয় করা ছাড়া তাদের গত্যস্তর নেই। গানে বাজনায় বক্ততায় গল্পে এবং সঙ্গে সঙ্গে তামাক ও বিড়ির ধোঁয়ায় মহলাঘরের বাতাস ভারাক্লান্ত হয়ে উঠেছে, এমন সময় দরে কিসের চীৎকার শোনা গেল ।