পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/২৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२७8 বিভূতি-রচনাবলী প্রভাস হেসে বড়ো আঙ্গল নেড়ে বললে—হ: হ: বাবা- সে গড়ে বালি ! অত কাঁচা rছলে আমি নই। বাবা তো বাবা, বাড়ির কেউই ঘণাক্ষরেও কিছল জানে না । বাবাও কেদারকে ভুলে গিয়েছেন, দুজনের দেখাশুনো নেই কতকাল । দেখলে কেউ হঠাৎ হয়তো চিনতে পারবে না। তার ওপর আমাদের বাড়ি কেদার বড়ো জানবে কি করে ? ঠিকানা জানে না, নম্বর জানে না—কোনদিন শোনেও নি । আর এ কলকাতা শহর, বড়ো না চেনে বাড়ি না চেনে রাস্তাঘাট । সেদিকে ঠিক আছে । প্রভাস সিড়ি দিয়ে নেমে নিচে গেল । অরণে একটু দ্বিধার সরে বললে, কাজটা তো এক রকম যা হয় এগুলো—শেষে পলিসের কোন হাঙ্গামায় পড়বো না তো ? —কিসের পলিসের হাঙ্গামা ? নাবালিকা তো নয়, ছাবিশ-সাতাশ বছরের ধাড়ি—আমরা প্রমাণ করবো ও নিজের ইচ্ছেয় এসেছে । ওকে এ জায়গায় কেন পাওয়া গেল এ কথার কি জবাব দেবে ও ? আমি বুঝি নি বললে কেউ বিশ্বাস করবে ? নেকু ? —তা ধরো ও পাড়াগায়ের মেয়ে, সত্যিই ওর বয়েস হয়েছে বটে, কিন্তু এসব কিছু জানে না, বোঝে না । দেখতেই তো পেলে--একটু সন্দেহ জাগলে ওকে রাখতে পারত হেনা ? তা জাগে নি । এমন জায়গাও কখনো দেখে নি, জানে না। যদি এই সব কথা প্রমাণ হয় আদালতে ? গিরীন আত্মম্ভরিতার সরে বললে, শুধ দেখে যাও আমি কি করি । গিরীন কুণ্ডকে তোমরা সোজা লোক ঠাউরো না -- অরণে বললে, আর একটা কথা । সে না হয় বুঝলাম–কিন্তু ওসব ঘরের মেয়ে, যখন সব বুঝে ফেলবে, তখন আত্মহত্যা করে বসে যদি ? ওরা তা পারে । গিরীন তাচ্ছিল্যের সরে বললে, হা—িরেখে দাও ওসব । মরে সবাই—দেখা যাবে পরে— —আজ চলো আমরা এখান থেকে যাই--- —এখন ? —আমার মনে হয় তাই উচিত। কোনো সন্দেহ না জাগে মনে—এটা যেন মনে থাকে। হেনাকে সন্তপণে বাইরে আনিয়ে গিরীন বললে, আমরা চলে যাচ্ছি হেনা বিবি। রেখে গেলাম কিন্তু – হেনা বললে, আমি বাব পলিসের হ্যাঙ্গামে যেতে পারবো না, তা বলে দিচ্ছি। কাল দপের পষ*্যন্ত ওকে এখানে রাখা চলবে । তারপর তোমরাকোথায় নিয়ে যাবে যেও—আমার টাকা চুকিয়ে দিয়ে । - গিরীন বললে, কেন, আবার নতুন কথা বলছো কেন ? কি শিখিয়ে দিয়েছিলাম ? —সে বাপ হবে না। ও বেজায় একগয়ে মেয়ে । আগে যা ভেবেছিলাম তা নয়—ও শুধু বঝতে পারে নি তাই এখানে রয়ে গেল। নইলে রসাতল বাধাত এতক্ষণ। আর একটা কথা কি, কিছুতেই খাচ্ছে না, এত করে বলছি, নানারকম ছতো করছে, পাড়াগাঁয়ের বিধবা মানুষ, ছচিবাই গো, ছচিবাই । কেন খাচ্ছে না আমি আর ওসব বুঝি নে ? আমি মানুষ চরিয়ে খাই— অরণ বললে, মানুষ চরাও নি কখনো হেনা বিবি, ভেড়া চরিয়েছ। এবার মানুষ পেয়েছ, চরাও না দেখি। বাকলে ? ওরা দুজনে নিচে নেমে গেল । চাটুজে মশায়ের বাড়ির গানের আসর ভাঙলো রাত এগারোটায়। তার পরে খাওয়ার