পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৩২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

లీషిE বিভূতি-রচনাবলী প্রায় দেড় বৎসর দু-বৎসর আগে গ্রাম থেকে কলকাতায় চলে যান। সেখান থেকে তাঁরা কোথায় চলে গিয়েছেন তা কেউ জানে না। কলকাতায় তাঁরা নেই একথাও ঠিক। যাদের সঙ্গে গিয়েছিলেন, তারাই ফিরে এসে বলেছে । go গোপেশ্বর চাটুজ্জে গ্রামের অনেককেই জিজ্ঞেস করলেন, সকলেই ওই এক কথা বলে । সেবার যে সেই মদির দোকানে কেদারের সঙ্গে বসে বসে গান-বাজনা করেছিলেন সেখানেও গেলেন। কেদার গাঁয়ে না থাকায় গানবাজনার চচ্চ" আর হয় না, মনদি খুব দুঃখ করলে। গোপেশ্বরকে তামাক সেজে খাওয়ালে। অনেকদিন কেদার বা তাঁর মেয়ের কোনো সন্ধান নেই, আর আসবেন কিনা কে জানে । বন্ধ তামাক খেয়ে উঠলেন। গ্রামের বাইরের পথ ধরে চিন্তিত মনে চলেছেন, শরতের বাপের যদি সন্ধান না-ই পাওয়া যায়, তবে উপস্হিত শরতের গতি কি করা যাবে ? কাশী থেকে এনে ভুল করলেন না তো ? এমন সময় পেছন থেকে একজন চাষা লোক তাঁকে ডাক দিলে—বাবাঠাকুর— গোপেশ্বর চাটুজে ফিরে চেয়ে দেখে বললেন—কি বাপ ? —আপনি ক্যাদার খড়ো ঠাকুরের খোঁজ করছিলে ছিবাস মদির দোকানে। আমিও সেখানে ছেলাম । আপনি কি তাঁর কেউ হও ? * —হ’্যা বাপ । আমি তাঁর আত্মীয়, কেন তুমি কিছ জান নাকি ? —আপনি কারো কাছে বলবেন না তো ? —না, বলতে যাবো কেন ? কি ব্যাপার বলো তো শুনি । আমি তাঁর বিশেষ আত্মীয়, আর আমার দরকারও খাব ৷ লোকটা সরে নীচু করে বললে—তিনি হিংনাড়ার ঘোষেদের আড়তে কাজ করছেন যে । হিংনাড়া চেনেন ? হলদপ কুর থেকে তিন ক্লেশ। আমি পটল বেচতে যাই সেবার মাঘ মাসে । আমার সঙ্গে দেখা । আমায় দিব্যি দিয়ে দিয়েলেন, গ্রামের কাউকে বলতে নিষেধ করে দিলেন। তাই কাউকে বলি নি। আপনি সেখানে যাও, পুকুরের উত্তর পাড়ে যে ধান-সষের আড়ত, সেখানেই তিনি থাকেন। আমার নাম করে বলবে, গেয়োহাটির ক্ষেত্তর সন্ধান দিয়েছে । আমাদের গায়ের শখের যাত্রার দলে কতবার উনি গিয়ে বেয়ালা বাজিয়েছেন। আমায় বড় স্নেহ করতেন। মনে থাকবে ? গেয়োহাটির ক্ষেত্তর কাপালী । গোপেশ্বর চাটুজে আশা করেন নি এভাবে কেদারের সন্ধান মিলবে । বললেন, বড় উপকার করলে বাপ । কি নাম বললে ? ক্ষেত্র ? আমি বলবো এখন তাঁর কাছে—বড় ভালো লোক তুমি । সেই দিনই সন্ধ্যার আগে গোপেশ্বর চাটুজে হিংনাড়ার বাজারে গিয়ে ঘোষেদের আড়ত খুজে বার করলেন । আড়তের লোকে জিজ্ঞেস করলে, কাকে চান মশাই ? কোথেকে আসা হচ্ছে ? —গড়শিবপুরের কেদারবাব এখানে থাকেন ? —হ’্যা আছেন । কিন্তু তিনি মালঞ্চার বাজারে আড়তের কাজে গিয়েছিলেন—এখনও আসেন নি । বসন । রারি প্রায় সাড়ে আটটার সময় কে তাঁকে বললে—মহেরী মশায় ঐ যে ফিরছেন— গোপেশ্বর চাটুজে সামনে গিয়ে বললেন, রাজামশায়, নমস্কার। আমায় চিনতে পারেন ? গোপেবরের দেখে মনে হ’ল কেদারের বয়স যেন খানিকটা বেড়ে গিয়েছে, কিন্তু হাবভাবে সেই পরানো আমলের কেদার রাজাই রয়ে গিয়েছেন পরোপুরিই ৷ কেদার চোখ মিট মিট করে বললেন, হ্যা, চিনেছি। চাটুজে মশায় না ?