পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৩৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈদ্যনাথ তিন দিন ধরিয়া কলিকাতায় বেজায় বষ' নামিয়াছে । এ ধরনের বষ*া এ বছর পড়ে নাই । ছাতিতে জল আটকায় না—কারণ সঙ্গে সঙ্গে হাওয়াও তেমনি, রাস্তায় রাস্তায় জল বাধিয়া গিয়াছে । ট্রামে দিনের বেলা আলো জালানো, দোকানে দোকানে সামনের দিকে তেরপল ফেলা, পথেঘাটে লোকজনও খুব বেশী যে চলাফেরা করিতেছে এমন নয় । আপিসে যাইতেছি, বেলা দশটা কি বড় জোড় দশটা পনেরো। ট্রামে যাইতে পারিতাম কিন্ত এ বষায় হাঁটিয়া যাইতে বড় ভাল লাগিতেছিল, ট্রাম লাইন পার হইয়া হাঁটা পথ ধীরলাম । বৌবাজারের মোড়ে কে পিছন হইতে ডাকিয়া বলিল—দাদা,—ও দাদা—দাদা শুননে— আমাকেই ডাকিতেছেন না কি ? ফিরিয়াই চাহিয়া দেখিলাম । যে ডাকিতেছিল, সে কাছে আসিল । বছর পনেরো যোল বয়স, পরনের কাপড় যৎপরোনাস্তি ময়লা, গায়ে চারপাঁচ জায়গায় ছে"ড়া কোট, মাথার চুল রক্ষে, ঝাঁকড়া, খালি পা ; রাঙা রাঙা দাঁত বাহির করিয়া হাসিয়া বলিল—চিনতে পাচ্ছেন না দাদা, আমি বন্দিনাথ । ও - সেজ মামার ছেলে বোদে ! এর বয়স যখন বছর দশেক তখন ইহাকে দেখিয়াছিলাম, তারপর বছর পাঁচ-ছয় আর দেখি নাই । কিন্ত না দেখিলেও ইহার বিষয় সব শুনিয়াছি । অতি বদ ছোকরা, দশ বছর বয়সে বাড়ি হইতে পলাইয়া হগেলীতে কোন যাত্রার দলে ঢোকে, বছর খানেক খোঁজখবর ছিল না, হঠাৎ রাজসাহী কুইতে এক বেয়ারিংপত্র পাওয়া যায় যে, বন্দিনাথ টাইফয়েডে মর-মর, শেষ দেখা করিতে হইলে কালবিলম্ব না করিয়া ইত্যাদি । সেজ মামার ছেলের উপর তত টান ছিল না । তিনি দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী-পত্ৰাদি লইয়া কায়েমী সংসার পাতাইয়াছেন—প্রথম পক্ষের অবাধ্য ছেলে বাঁচুক বা মরকে, তাঁর পক্ষে সমান কথা । কিন্ত বন্দিনাথের পিসি কাদা-কাটা শুরু করাতে তিনি দ্বিতীয় পক্ষের বড় শালাকে রাজসাহীতে পাঠাইয়া দেন । সেযাত্রা বন্দিনাথ বাঁচিয়া উঠিল, চুল-ওঠা জীণ’-শীণ* চেহারা লইয়া বাড়িও ফিরিল কিন্ত মাস তিনেকের মধ্যেই আবার উধাও, আবার নিখোঁজ । এবারও আর এক যাত্ৰাদলে বছরখানেক ঘুরিয়া বোদে নগদ সতেরোটি টাকা হাতে করিয়া বাড়ি আসিল ও সৎমায়ের কাছে জমা রাখিল ; অত বড় ছেলে বাড়ি বসিয়া খায় ও দু’তিনদিন অন্তর সৎমায়ের কাছে পয়সা চাহিয়া লয়, আজ আট আনা, কাল তিন আনা, তার পরদিন এক টাকা। চুল ছটিতে হইবে, শাট তৈরী করিতে হইবে, বন্ধু-বান্ধবে খাইতে চাহিয়াছে, নানা অজুহাত । আসলে জানা গেল যে, বিড়ি সিগারেটেই বন্দিনাথের মাসে চারি-পাঁচ টাকা লাগে । তাছাড়া চা, বাব গিরি, সাবান, কলিকাতায় যাওয়া ইত্যাদি আছে। সে সতেরো টাকার মধ্যে টাকা দই সংসারের সাহায্যে লাগিয়াছিল, বাকিটা বন্দিনাথের ব্যক্তিগত শখের খরচ যোগাইতে ব্যয়িত হয় । সেজ মামার সংসারের অবস্হা খুব স্বচ্ছলময়, দুইটাকায় যখন বন্দিনাথ সাত মাস বসিয়া খাইল এবং নিজের টাকা ফুরাইলে জোর-জলেম গাল-মন্দ করিয়া বিমাতার নিকট হইতে আরও দু’চার টাকা আদায় করিল—তখন সেজমামা পদ্ট জানাইয়া দিলেন, তাহাকে এরুপ ভাবে বসিয়া খাওয়াইতে তিনি পারবেন না । বন্দিনাথ সে কথায় কণপাত না করিয়া আরও সাত মাস বসিয়া সংসারের অন্নধংস করিল, খবে নিশ্চিত্ত মনেই করিল—আরও কয়েক টাকা সৎমায়ের নিকটে আদায় করিল, বৈমাত্র ভাই-বোনদেয় সঙ্গে. ঝগড়া বিবাদ মার-ধোর করিল—শেষে সেজমামার বাড়ির ( বশরেবাড়ির গ্রামেই সেজ মামাষ্ট্র .ইদানীং বাস করিয়াছিলেন ) কাহার পকেট হইতে টাকা চুরি করিয়া একদিনদপরেআহারাদির