পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৪০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

sరి0 বিভূতি-রচনাবলী খানায়—বছর তিনেক দেখে শুনে শিখলে তবুও অন্য চাষা গাঁয়ে গিয়ে হাতুড়েগিরি করেও দটো খেতে পারবে । সতীশের চোখ জলে ভরিয়া আসিল ভগ্নহৃদয় বন্ধ চিকিৎসকের অস্তিম শয্যা-পূবে বসিয়া । সে আশ্বাস দিল, এ বিষয়ে তাহার দ্বারা যতদর সাধ্য সে করিতে তাটি করিবে না। যাদরাম এমন পয়সা রাখিয়া যায় নাই, যাহাতে তাহার শ্রাধের খরচ নিৰ্বাহ হইতে পারে— সতীশ নিজে শ্রান্ধ সংক্রান্ত যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করিল। নাতিকে নিজের ডাক্তারখানায় আনিয়া কাজ শিখাইতে লাগিল, খুচরা কিছু দেনা ছিল বন্ধের, তাহারও একরপে সাময়িক মীমাংসা করিয়া দিল । এই সময় সতীশের নিজের সময়েরও পরিবত্তন দেখা দিল । ছোট ছেলের কলেজের খরচ, বড়ছেলের ডাক্তারী পড়ার খরচ—এদিকে কি জানি কেন রোগীর সংখ্যা কমিতেছে। হানটা কি হঠাৎ স্বাস্হ্যনিবাস হইয়া উঠল নাকি ? সঞ্চিত অথে* কুমশঃ হাত পড়িতে লাগিল—এবং সাধারণতঃ যাহা ঘটিয়া থাকে, একবার সঞ্চিত অথে* হাত যখন পড়িল, সে হাতকে আর গটানো গেল না—বৎসরের পর বৎসর ক্ৰমশঃ খরচ বাড়িয়াই চলিয়াছে—আয় তেমন নাই, হাতের টাকা নিঃশেষ হইতে এ অবস্হায় কত দিন লাগে ? সতীশ অমানষিক পরিশ্রম করিতে লাগিল । আর দুটো বছর, বিনয় মানুষ হইলে আর কিসের ভাবনা ? এ অঞ্চলে এম-বি পাশ করা ডাক্তার কটা আছে ? কখনো যে সব গ্রামে দশ টাকা ভিজিটের কমে সতীশ যায় নাই—এখন চার টাকা লইয়াও সেখানে যাইতে হইতেছে। নিজে দুধ খাওয়া ছাড়িয়া দিল—বাড়ির চাকরকে জবাব দিল । খরচ কম পড়িবে বলিয়া সন্ত্রী ও পরবধকে কলিকাতায় পাঠাইয়া ছেলেদের বাসা করিয়া দিল— নিজে দেশে হাত পড়াইয়া রাঁধয়া খাইয়া এবং সারাদিন টো টো করিয়া গ্রামে গ্রামে রোগী দেখিয়া যাহা পায়, প্রতি সপ্তাহে কলিকাতার বাসাতে বিনয়ের নামে মণিঅডার করে। বিনয় এম-বি পাশ করিয়া যন্ধে গেল । সতীশের দুঃখ ঘুচিল এতদিনে । গ্রামের মধ্যেও একটা সাড়া পড়িল না এমন নয়। এ অঞ্চলে এম-বি পাশ করা ডাক্তার এই প্রথম । তাহার উপর বিনয় আবার গবন মেন্টের চাকরি পাইয়া সদর মোসোপটেমিয়ায় গিয়াছে । সেদিন নাকি ছোটখাটো একটি খণ্ডযুদ্ধে আরবদের গুলি বিনয়ের কানের পাশ কাটাইয়া বাহির হইয়া গিয়াছে, পয়সা কি এমনি হয় ? বিনয় পত্রে এই ঘটনাটি বাবাকে জানাইয়াছিল। নরহরিপরের বাজারে ভুষণ দাঁ-এর পরানো আন্ডাটি আর ছিল না—কারণ পনেরো বৎসর হইল ভুষণ মরিয়া গিয়াছে। তবুও এ দোকানে, ও দোকানে বসিয়া সতীশ গবে'র সঙ্গে পত্রের চিঠি হইতে যতটুকু সে-দেশের খবর পায়, তারই সাহায্যে যন্ধের গল্প করে । সঙ্গে সঙ্গে বলে—কিস্ত আমাদের নেপালে যখন প্রাইম-মিনিস্টারের বাড়ির সামনের ময়দানে প্যারেড হোত, তাতে আমরা বন্ধের কৌশল সবই দেখেচি । মেশিন গান ? ও তো আমাদের সময়েই প্রথমে নেপালে এল-“আমাদের কাছে ও সব নতুন নয়— অর্থাৎ নেপাল ও সতীশের যৌবন—ইহারা কাহারও কাছে পরাজয় স্বীকার কারবে না । সব ছিল নেপালে। দ’চারবার মোটা টাকার মণিঅডার পাইয়া সতীশ মহা উৎসাহে বাড়ি নতুন করিয়া তৈরী করিবার জন্য মিশিী লাগাইল । ছেলে বড় ডাক্তার হইয়া ফিরিয়া আসিতেছে, সাহেবী মেজাজ এখন তার—এ ধরণের বোমেরামতি পরানো বাড়িতে থাকিতে তাহার কন্ট হইবে । সতীশ ছেলের উপর্যন্ত মত বাড়ির পুনরায় সংস্কার করিতে অনেক ব্যয়