পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৪১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

* 8Oህ বিভূতি-রচনাবলী আসচে, তা ভেবে তখন কে দেখে ? ভিড়ের মধ্যে বেশীর ভাগ ছিল হিন্দহানী কুলীখালাসীর দল, তারা খৈনি টিপতে টিপতে নিজেদের কাজে চলে গেল । আমি একটু দরে দাঁড়িয়ে ছিলম—ভদ্রলোক আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকলেন । কাছে যেতেই আকুল ভাবে বল্লেন—মশাই আপনি তো দেখচেন, একটা ব্যবস্হা করন দয়া করে । এখন কি করি আমার মাথামড়ুে, এই অচেনা দেশ, তাতে শীতের রাত । আমরা ব্রাহ্মণ, ব্রাহ্মণের দেহ শেষে কি অন্য জাতে ছোবে ?---এই একটা বাচ্চা, এরই বা উপায় কি করি ? মখে অবিশ্যি তাঁকে সাহস দিলাম। কিন্তু তারপর আধ ঘণ্টা এদিক ওদিক ঘরেও সৎকারের কোনো ব্যবস্হাই আমায় দিয়ে হয়ে উঠলো না । না আমাকে এখানে কেউ চেনে, না আমি কাউকে চিনি—অধিকাংশ লোকই বলে তারা যাত্রী, এই ট্রেনেই তাদের অমুক জায়গায় যেতে হবে । কেউ কথা শোনে না । আকস্মিক ব্যাপারের উত্তেজনাটুকু কেটে যাবার পরে সবাই বঝেচে বেশী ঘনিষ্ঠতা কত্তে গেলে এই শীতের রাত্রে দভোগ আছে কপালে—কাজেই সবাই আমায় এড়িয়ে চলতে চায় । অবশেষে একজন টিকিট কালেক্টরকে কথাটা বল্লম । অনেক সাধ্য-সাধনার পরে তাঁকে রাজীও করানো গেল । তিনি বল্লেন, কিন্তু শধে আমি আর আপনি এতে তো হবে না ? আপনি দাঁড়ান—আমি দেখে আসি । একটু পরে একজন অতি কদৰ্য্য চেহারার ময়লা কাপড় পরা লোককে সঙ্গে করে তিনি ফিরে এহেন । আমায় বল্লেন—শনেন মশাই, লোক যেতে চায় না কেউ শীতের রাতে । এই লোকটি ভাল বামন, আমাদের ইস্টিশানে পাউরটির ভেন্ডার, এ যেতে রাজী হয়েচে, এ আরও দুজন লোক আনতে রাজী আছে । কিন্তু— টিকিট বাব সরে নীচু করে বল্পেন—জানেন তো ছোট লোক—ওদের কিছু খাওয়াতে হবে, নৈলে রাজী হবে না। একটু ইয়ে—মানে—বাঝলেন তো ? ওরা নেশাখোর লোক, লেখাপড়া জানে না—সবই বুঝতে পারচেন। তার একটা ব্যবস্হা কত্তে হয়— আমি বল্লম—সে কি রকম খরচ পড়বে না পড়বে আমায় বললন, আমি গিয়ে বলচি । ঘাট খরচের হিসেবটাও ধরবেন— টিকিট বাব টাকা-পনেরোর এক ফন্দ দাখিল করলেন। আমি ফিরে গিয়ে বলতেই ভদ্রলোক মণিব্যাগ খুলে দুখানা দশ টাকায় নোট আমার হাতে দিয়ে বল্লেন—এই নিন—যা ব্যবস্হা করবার করন, আমায় এ দায় থেকে উদ্ধার করুন, বাঁচান আপনি—কথা শেষ না করেই আমার হাত দটো জড়িয়ে ধত্তে এলেন—আর আমার এই খোকার একটা কিছল--"ওকে তো এই ঠাণ্ডায় সেখানে নিয়ে যেতে পারি নে, তা হোলে ও কি বাঁচবে ?--- আমি ফিরে এসে খোকার কথা তুলতেই তিনি বল্পেন—আমার তো ফ্যামিলি এখানে নেই, তা হোলে আর কি কথা ছিল ? আচ্ছা দাঁড়ান, দেখি-ছোট বাবর বাসায়— ছোট বাবর বাসায় খোকার ব্যবস্হা হয়ে গেল। ভদ্রলোকের কাছে গিয়ে বল্লম দিন ওকে আমার কাছে । ছোট বাবর বাসায় তাঁরা রাখবেন বলেচেন । ভদ্রলোক বল্লেন—যাও খোকন বাবা, বাবর কাছে যাও । তোমার মাসীমার বাড়ি নিয়ে যাবেন, যাও বাবা— তাঁর চোখ দিয়ে টপ টপ করে জল পড়তে লাগলো। আমায় বল্লেন—অনেকক্ষণ কিছল খায় নি, রাণাঘাটে ওর মা গজা কিনে দিয়েছিল—একটু গরম দুধ যদি— খোকা বেশ সপ্রতিভ। বেশ শাস্ত ভাবেই আমার কাছে এল, হাসি হাসি মুখে। তাকে কোলে নিয়ে মনে হল খোকার যত বয়স ভেবেছিলাম তার চেয়ে ছোট—এখনও তেমন কথা বলতে পারে না । ছোট বাবরে বাসায় ঝি তাকে কোলে করে বাড়ির ভিতর নিয়ে গেল । ওকে কোলে তুলে নিয়ে কাঁদো কাঁদো সরে বল্লে—আহা, এ যে একেবারে দধের বাছা ? এস