পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৪১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8SO বিভূতি-রচনাবলী আমি বললাম—আমি খাবো না। দজনেই আশ্চয' হয়ে আমার দিকে চাইলে । আমার কথা যেন বকতেই পালে না কিংবা বুঝে বিশ্বাস কত্তে পালে না। পাউরটি ভেণ্ডার বলে—খাবেন না কিছ ? সে কি মশাই ! এই হাড় কনকনে পৌষ মাসের রাত, খাবেন না তো এলেন কেন ?---পাগল ।--তাঁর বন্ধ বললে-খাবেন না কেন ? ভাল জিনিস মশাই, আমরা নিজে দাঁড়িয়ে থেকে কিনিয়েচি— খাসা চবিওয়ালা খাসি । লাল চক্কোত্তি নিজে রাঁধবে, অমন মাংস-রধিয়ে গঙ্গার এপারে পাবেন না। ওই যে দেখাচেন নৈহাটির বাজারের চাটের দোকানখানা—শুধ ওর রান্নার গণে আজ পনেরো বছর এক ভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে—দেখবেন খেয়ে— এই সময় টিকিট বাবর ইশারায় দুজনেই অন্যদিকে একটু দরে কি জন্যে উঠে গেল এবং একটু পরেই আবার নিজেদের জায়গাটিতে মুখ মুছতে মুছতে এসে বসল। আমায় বললে—আপনার চলে না বুঝি ? আমি বল্লম—কি ? —একটু আধটু...এই শীতের রাতে, নৈলে চলে কি করে বলন’বেশ ভাল মাল— কেন এদের টিকিট বাব ডেকেচে ওদিকে, তখন ব্যাপারটা বুঝলাম। ও আমার চলে না শনে তারা আরও আশ্চযf্য হয়ে গেল । এই শীতের রাতে শাশানে আসবার বাথটা যে আমার কি, এ তারা ভেবেই পেলে না। আমার দিকে আর কোনো মনোযোগ না দিয়ে তারা নিজেদের বিষয় কথাবাৰ্ত্তা বলতে লাগলো। নৈহাটি স্টেশনে পাউরটির ব্যবসা করে আর কেউ কিছ: কত্তে পারবে না। রেল কোম্পানীর লাইসেন্সের দাম ক্ৰমেই বাড়চে, তার ওপরে শিখেরা এসে চায়ের স্টল খালে ওদের অন্ধেক ব্যবসা মাটি করেচে। খরচা ওঠাই দায় ! দেশে সবিধে নেই তাই ওরা পেটভাতায় এখানে পড়ে আছে। নইলে কথিতে ওদের অমন চমৎকার দোকান ছিল— পাউরটি ভেন্ডারটির নাম বিনোদ বড়িয্যে । সে আর একবার উঠে গেল ওদিকে । আমি ওর বন্ধকে জিজ্ঞেস কল্পমে—খাবার-টাবার কত খরচ হোল ? —তা প্রায় টাকা সাতেক ধরন । কিছ মিটিও আছে । তা ছাড়া দু’একটা—আপনার তো দেখাচি ওসব চলে না । বিনোদ ফিরে এসে নিজেদের মধ্যে আবার গল্প শরে করলে । হঠাৎ আমার মনে পড়ল আমার গরম কোটের পকেটে বিস্কুট আছে, নৈহাটির প্ল্যাটফমে কিনেছিলাম সেই, কিন্ত খাওয়া হয় নি। টিকিট বাবর ভাইপোকে ডেকে বল্লম—আমার কোটের পকেটে বিস্কুট আছে দয়া করে আমার মখে খানকতক ফেলে দিন না—আমি এই হাত আরওতে দেবো না— আমায় ওভাবে বিস্কুট খেতে দেখে টিকিটবাব অবাক হোলেন । আমি শব ছয়ে স্নান না করেই বিস্কুট খাচ্চি ! আমায় বল্লেন-আপনার খুব খিদে পেয়েচে দেখচি, তা চলন নৈহাটিতে ফিরে খুব খাওয়াবো— আমি বল্লমে—আমি খাবো না কিছল । তাছাড়া আমি স্টেশনের দিকেও যাবো না— এখান থেকে সোজা ভাটপাড়া চলে যাবো । —খাবেন না আপনি, সে কি মশাই ? না না, তা কি হয় ?--অতটা মাংস-ওহে বিনোদ, কাঠ দাও ঠেলে—বসে বসে গল্প-গজব করবার জন্যে তোমাদের আনা হয় নি । টিকিট বাব আমার দিকে চেয়ে আবার কি বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু আমি তাঁকে সে সযোগ না দিয়েই নিজের জায়গাটিতে গিয়ে বসলাম । বিনোদ বড়িয্যে চিতায় কাঠ ঠেলে দিয়ে ফিরে এসেচে। দই বন্ধর মুখের বিরাম নেই। এবার তারা কার বিয়ের কৃথা আলোচনা করচে–বোধ হোল বিনোদ বড়িয্যের ভাইয়ের ।