পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৪২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8R8 বিভূতি-রচনাবলী কথা মনে করিয়ে দেয়-সযেf্যর আলো না থাকলে এসব পাহাড় শ্রেণী, এ পাহাড়ী নদী, এই গাছপালা—এই প্রসারতা এত ভাল লাগত ? এই এখন বসে আছি বাংলোর বারান্দাতে, দুরে দরে কালাঝোর ও অন্যান্য পাহাড় শ্রেণী অপরাহ্লের পড়ন্ত রোদে কি সুন্দরই না দেখাচ্চে । দুপুরে মহলিয়ার পোস্ট মাস্টার এসেছিল, কেট আবার এসেছিল—ওরা বললে সেদিন যে হাতীঝরনায় গিয়ে চা খেয়েছিলাম, তার ওদিকে বাঁকাই বলে গ্রাম আছে, গভীর জঙ্গল তার ওপারে—ধান পাকলে নিত্য হাতীর দল বার হয় । বাসাড়েরা ও ধাড়াগিরির পথ এখন নিরাপদ নয়; কেটে বলছিল। সেদিকে এখন জঙ্গলও খুব ঘন, তাছাড়া বড় বাঘের ভয় হয়েচে, অনেকগুলো মানুষ-গরকে বাঘে নিয়েচে এ বছর । সাতগড়মের পথেও বাঘের উপদ্রব হয়েছে এ বছর । পোস্ট মাস্টার বললে—আপনার জন্যে জমি রেখে দিলে বিলুটু প্রধান, আর আপনি মোটে এলেন না । নেন যদি, জমি এখনও আছে । বিজয়ার দিন মহলিয়া যাবো, সেখান থেকে টাটানগর ও চাইবাসা । এইমাত্র পাহাড়ের সান দেশে বসে হালয়া তৈরী করে চা খাওয়া গেল। মাথার ওপর অষ্টমীর চাঁদ, আকাশে দু-দশটা তারা, সামনে অরণ্যাবত পাহাড়ের অন্ধকার সীমারেখা, দরে বামদিকে অরণ্য আরও গভীর, মদন জ্যোৎস্নালোকে পাহাড়, উপত্যকা, সান দেশসহ বনানী অদ্ভুত হয়েচে দেখতে। আজই পট্টনায়েকবাব বলেছিলে ৪নং shift-এ বাঘ আছে, সেজন্যে সন্ধ্যার পরে আমাদের সকলের গা ছমছম করচে । রামধন কাঠ কুড়িয়ে আগুন জালিয়ে রেখেচে পাছে বাঘভাল্পক আসে সেই ভয়ে । কেবলই মনে পড়তে থাকে আজ মহাষ্টমীর সন্ধ্যা, বাংলাদেশের গ্রামে-গ্রামে এই সময়টিতে পুজোর চণ্ডীমণ্ডপে দেবীর আরতি হচ্চে শঙ্খঘণ্টা রবের মধ্যে, ছেলেমেয়েরা হাসিমুখে নতুন ফাপড় পড়ে ঘরচে—আর আমরা সিংডুমের এক নিৎজ’ন বন্যজন্ত-অধ্যুষিত পাহাড়ের মধ্যে বসে গল্প করচি ও প্রকৃতির শোভা দেখচি।* ওখান থেকে ফিরচি, রথোমের মদেীর দোকানের সামনে সাঁওতালী নাচ হচ্চে, মাদল বাজার তালে তালে । আমাদের একটা কবল পেতে দিলে, আমরা অষ্টমীর চাঁদের নিচে পাহাড়ের সামনের ছোট গ্রামে খাঁটি সাঁওতালী নাচ দেখে বড় আনন্দ পেলাম । কবিরাজের সঙ্গে বসে একটু গল্প করা গেল। তার বাংলোর সামনে কবে রাত্রে চিতাবাঘ এসে দাঁড়িয়েছিল। সাঁওতালদের গোরস্হানে সেবারে ভুত দেখেছিল, ইত্যাদি কত গল্প । মহলিয়াতে আজ সারা দরপর ঘরে বেড়িয়েচি ৷ বাদলবাবরে বাংলো থেকে কালাঝোরের দশ্যটি বেশ লাগল। বলরাম সায়েবের ধারে সেই গাছটি, নানারকমের পটভূমিতে দুপুরের পরিপণ সময"ালোকে কি অদ্ভুত যে দেখাচ্ছিল । তিনটের ট্রেনে গেলাম টাটানগর। বাসে কাশিডি নেমে আশর বাসা খোঁজ করে বার করি । সে একটা গন্ধরাজ ফুলগাছের তলায় চেয়ার পেতে বসে আছে । দু-জনে সন্ধ্যার পরে নিউ এল-টাউনে প্রতিমা দেখে এলাম। লোকজনের ভিড়, মেয়েদের ভিড়, তারপর ওল্ডএল-টাউনের প্রাইমারি স্কুলে ঠাকুর দেখি । একবার আশা বাড়ি এল মোটর লরি দেখতে—পাওয়া গেল না, তারা সব বামা জিকে ঠাকুর দেখতে যাচ্চে। হেটে বাম"া জিঙ্ক যাবার পথে ডুপ্লে প্ল্যান্ট ও slug ঢালার সময়কার রক্ত আভা থেকে মন হ’ল আগ্নেয়গিরি কখনো দেখি নি, বোধ হয় এই ধরনের জিনিস হবে । ওই সাদা আগনের স্রোতের মতই তার উষ্ণ লাভা-স্রোত। বামা মাইনসের ঠাকুর সাজিয়েচে খব ভাল, আবার তার সামনেই একটা কৃষ্ণলীলার ছবি সাজিয়েচে । বাসে স্টেশনে জগন্নাই ও

  • এই অংশটি ৪নং shift-এর বসে লেখা ।