পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত 8్స দটো দ-ঠাই ভালয় ভালয় হয়ে গেলে আমি মায়ের পজো দেবো । ঘরের চাবি পিণটুর মায়ের কাছে রহিল। রেলে ও স্টীমারে অনেকদিন পর চড়া। দুজনেই হফি ছাড়িয়া বাঁচিল । দুজনেই খুব খশী। অপণাও পল্লীগ্রামের মেয়ে, শহর তাহার ভাল লাগে না। এতটুকু ঘরে কোনদিন থাকে নাই, সকাল ও সন্ধ্যাবেলা যখন সব বাসাড়ে মিলিয়া একসঙ্গে কয়লার উনুনে আগন দ্বিত, ধোঁয়ায় আপণার নিঃশ্বাস বন্ধ হইয়া আসিত, চোখ জালা করিত, সেকি ভীষণ যন্ত্রণা । সে নদীর ধারের মুক্ত আলো-বাতাসে প্রকান্ড বাড়িতে মানুষ হইয়াছে। এসব কট জীবনে এই প্রথম—এক একদিন তাহার তো কান্না পাইত । কিন্তু এই দুই বৎসরে সে নিজের সখেসুবিধার কথা বড় একটা ভাবে নাই । অপর উপর তাহার একটা অদ্ভুত স্নেহ গড়িয়া উঠিয়াছে, ছেলের উপর মায়ের স্নেহের মত । অপর কৌতুকপ্রিয়তা, ছেলেমানষি, খেয়াল, সংসার-অনভিজ্ঞতা, হাসি-খুশি, এসব অপণার মাতৃত্বকে অদ্ভুতভাবে জাগাইয়া তুলিয়াছে। তাহার উপর স্বামীর দুঃখময় জীবনের কথা, ছাত্রাবস্হায় দারিদ্র্য ও অনাহারের সঙ্গে সংগ্রাম —সে সব শুনিয়াছে। সে-সব কথা অপ বলে নাই, সে-সব বলিয়াছে প্রণব । বরং অপর নিজের অবস্হা অনেক বাড়াইয়া বলিয়াছিল—নিশ্চিন্দিপুরের নদীর ধারের পৈতৃক বহৎ দোতলা বাড়িটার কথাটা আরও দু-একবার না তুলিয়াছিল এমন নহে—নিজে কলেজ হোস্টেলে ছিল এ কথাও বলিয়াছে । বৃদ্ধিমতী অপণার স্বামীকে চিনিতে বাকী নাই । কিন্ত স্বামীর কথা সে যে সদৈবব মিথ্যা বলিয়া বুঝিয়াছে এ ভাব একদিনও দেখায় নাই । বরং সস্নেহে বলে—দ্যাখো, তোমাদের দেশের বাড়িটাতে যাবে যাবে বললে, একদিনও তো গেলে না— ভাল বাড়িখানা,—পলদার মুখে শুনেছি, জমিজুমাও বেশ আছে—একদিন গিয়ে বরং সব দেখে-শনে এসো। না দেখলে কি ও-সব থাকে ?-- অপর আমতা আমতা করিয়া বলে—তা যেতামই তো কিন্তু বড় ম্যালেরিয়া। তাতেই তো সব ছাড়লাম কিনা ? নৈলে আজ অভাব কি ?-- কিন্ত অসতক মহত্তে দ-একটা বেফাঁস কথা মাঝে মাঝে বলিয়াও ফেলে, ভুলিয়া যায় আগে কি বলিয়াছিল কোন সময় । অপণা কখনও দেখায় নাই যে, এ সব কথার অসামঞ্জস্য সে বুঝিতে পারিয়াছে। না খাইয়া যে কষ্ট পায় অপণার এ কথা জানা ছিল না। সচ্ছল ঘরের আদরে লালিতা-মেয়ে, দুঃখ-কষ্টের সন্ধান সে জানে না। মনে মনে ভাবে, এখন হইতে স্বামীকে সে সুখে রাখিবে । এটা একটা নেশার মত তাবুকে পাইয়াছে। অলপদিনেই সে আবিকার করিয়া ফেলিল, অপর কি কি খাইতে ভালবাসে । তালের ফুলরি সে করিতে জানিত না, কিন্ত অপ খাইতে ভালবাসে বলিয়া মনসাপোতায়-নিরপেমার কাছে শিথিয়া লইয়াছিল। এখানে সে কতদিন অপকে কিছল না জানাইয়া ৱাজার হইতে তাল আনাইয়াছে, সব উপকরণ আনাইয়াছে। অপর হয়তো বর্ষার জলে ভিজিয়া অফিস হইতে বাসায় ফিরিয়া হাসিমখে বলিত—কোথায় গেলে অপণা ? এত সকালে রান্নাঘরে কি, দেখি ? পরে উপক দিয়া দেখিয়া বলিত, তালের বড়া ভাজা হচ্ছে বুঝি ! তুমি জানলে কি ক’রে—বা রে!-- অপণা উঠিয়া স্বামীর শুকনো কাপড়ের ব্যবস্হা করিয়া দিত, বলিত, এসো না, ওখানেই বসে থাবে, গরম গরম ভেজে দি— । অপর বকেটা ছৎি করিয়া উঠিত। ঠিক এই ভাবেরই কথা বলিত মা । অপর অদ্ভুত্ব মনে হয়, মায়ের মত স্নেহশীলা, সেবাপরায়ণা, সেইরকম অস্তবামিনী । বান্ধক্যের কম ক্লান্ত মা যেন ইহারই নবীন হাতে সকল ভার সপিয়া দিয়া চলিয়া গিয়াছে। মেয়েদের দেখিবার চোখ তাহার নতুন করিয়া ফোটে, প্রত্যেককে দেখিয়া