পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৪৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

860 বিভূতি-রচনাবলী আজ একটি অদ্ভুত তালজাতীয় গাছের কথা পড়লম, নাম Microzeminar Plum । অস্ট্রেলিয়ার Tambourine mountain-এ বিস্তর রয়েচে । এই গাছ নাকি বহুকাল বাঁচে । সেখানে পনেরো হাজার বছর একটা গাছ বেচে ছিল, সেটা দশো ফুট উচু হয় । Prof. Chamberlain সেখানে অত উচু গাছ দেখে খুব উৎসাহিত হয়ে গিয়েছিলেন । পনেরো হাজার বছর বয়সী প্রাচীন গাছটা কে সেদিন কেটে ফেলে দিয়েচে, তাই নিয়ে অস্ট্রেলিয়াতে হৈ হৈ পড়ে গিয়েচে, ব্রিসবেনের টেলিগ্রামে প্রকাশ ( রয়টার, ৮ই মে, ১৯৩৫, অমত বাজার পত্রিকাতে পড়লম ) বাকী গাছ যা সব আছে, তার মধ্যে একটার বয়েস এগারো হাজার বছর, বাকীগুলি তিন-চার হাজার বছরের শিশ । কাল স্কুলের ছয়টি হবে । আজ ছেলেরা খুব খাওয়ালে । আমি নানা জায়গায় ঘরে টরকে সঙ্গে নিয়ে রমাপ্রসন্নদের বাড়ি গেলাম। কুসমের সন্ধান করে তার ঠিকানা পেলাম । টরকে সঙ্গে নিয়ে তেত্রিশ বছর পরে গিয়ে কুসমের সঙ্গে দেখা করলাম । আমার ন-বছর বয়সে কুসম আমায় কত গলপ বলত। এখন তার বয়স যাট-এর কম নয়—গরীব, লোকের বাড়ির ঝি। সে চেহারাই আর নেই। ওর সে চেহারা আমার মনে আছে। মানুষের চেহারার কি ভয়ানক পরিবত্তন হয় । g তপর সঙ্গে সেদিন দেখা হয়েচে, আজ দিন তিনেক আগে । তাকে দেখেছিলম ছ-বছরের ছেলে—এখন তার বয়েস তের-চৌদ্দ বছর। এ বছরটিতে পরোনো আলাপী লোকের সঙ্গে দেখা হচেচ ॥ আজ এ বছর গ্রীমের ছয়টির প্রথম দিন এখানকার । বাড়িতে কেউ নেই, পাড়া নিৎজ’ন। একমাত্র পাঁচী ও ন-দিদি আছে । বকুলতলায় দপেরে অনেকক্ষণ বসে Valia গলপটি পড়ছিলাম। একটা দাঁড়াশ সাপ সৃপদের নারকেল গাছটাতে উঠে পাখীর বাসায় পাখীর ছানা খ:জচে । আর পাখীগুলো তাকে ঠুকরে কি বিরউই করচে । গঙ্গাহাঁর, তুলসী, হাজ সবাই আমার কাছে এল । দুপুরের পরে একটু ঘুমিয়েচি, নিজ'ন মেঘমেদ,র অপরাহ, বশিবনের দিকে গরম চরচে, মেজ খুড়ীমার বাড়ির দিক থেকে মেজ খড়ীমার গলার সর পাওয়া যাচ্চে। বাবার একটা শ্লোকের খানিকটা মনে এল ঘুমের ঘোরে । এত সপস্ট মনে এল যেন বাবার সঙ্গে বসে আমি কবিতা আবৃত্তি করiচ বাল্যদিনের মত । কথাটি এই —‘নীচৈমবভিরচিঃ' এই টুকরোটুকু যেন উদ্ভট শ্লোকে ছেলেবেলায় পড়েছিলাম। আমাদের ভিটের পিছনের বাঁশবাগানে গেলাম বেড়াতে ও আমগাছের ফল গানতে । ওখান থেকে বেলেডাঙার মাঠ। কুঠীর মাঠের বাড়ির দু-ধারে বন কেঁটে উড়িয়ে দিয়েচে—সেই লতাবিতান সেই ঝোপ-ঝাপ এবার কোথায় উড়ে গিয়েচে । দেশময়ই দেখচি এই অবজ্ঞা । বেলেডাঙ্গার পথের ধারে একটা কামারের দোকানে দশ-বারো জন লোক বসে আছে—তার মধ্যে বিরাশি বছরের সেই হরমোতীও বসে আছে। বহু বছর আগের মোল্লাহাটী কুঠীর সাহেবদের গল্প সে করলে ৷ পলের ওপারে গিয়ে দাঁড়ালম—এক ফকির সেখানে গোয়ালপাড়ায় একটা মেয়ের সঙ্গে বসে গল্প করচে । আমায় আবার সে ভক্তি করে একটা বিড়ি খাওয়ালে। আমি তাকে একটা পয়সা দিলাম। হরমোতী এসে বললে—‘বাব, দকেখের কথা বলব কি, আমার ছেলেডা বলে, তোমাকে আর ভাত দেব না । বিরাশি বছর বয়স আমার, কোথায় এখন যাই আমি এই বেগধ বয়সে ?’ সন্ধ্যাবেলা ন-দির সঙ্গে রেণুর গলপ করি । রাত্রে এখন ঢোল বাজচে, জিতেন কামারের বাড়ি নাকি মনসার ভাসান হচ্ছে । একবার ভাবচি যাই, কিস্ত বাড়িতে আমি একা, তার ওপর