পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৪৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উমি্মুখর 8&S আজ অমাবস্যার রাত—জিনিসটা-পত্রটা আছে, ফেলে রেখে ভরসা করে যেতে পারচি নে । রোয়াকে বসে লিখচি ভারী আরামে, বকুলগাছে, কুলগাছে কত কি পাখী ডাকচে— বিবেপাপের মধর গন্ধ ভেসে আসচে বাতাসে—দটো বিড়ালছানা আমার মাদরের ওপর লাফিয়ে লাফিয়ে খেলা করচে, সামনের রাস্তা দিয়ে ছেলেরা আম পাড়তে যাচ্চে, জেলেরা মাছ নিয়ে যাচে । একবার পটল যাচ্ছিল, আমি ডেকে বললাম—ও পটল, উমা চলে গিয়েচে ? পটল বড় লাজকে মেয়ে । পেয়াগ্নাতলা পয্যন্ত এসে নিচুমুখে দাঁড়িয়ে বললে—দি্রদ ২৭শে জ্যৈষ্ঠ চলে গিয়েচে, দাদা । ছেলেবেলার সেই বড়ো আকন্দ গাছটায় থোলো-থোলো ফুল ফুটেচে। পাখীর ডাক আর পীপের সবাসে স্হানটা মাতিয়ে রেখেচে । বিকেলে হাটে গেলাম। এ বছর গ্রীমের ছয়টির প্রথম হাট। পথেই আফজলের সঙ্গে দেখা, সে হাটে পটল বেচতে যাচে । তুততলার স্কুলের ভিটে দেখিয়ে বললে—দা-ঠাকুর, এখেনে মোরা পড়িচি, কত আনন্দই করিচি এথেনে, মনে আছে ? তা আছে। তুততলার স্কুলের কথায় হাঁড়ি-বেচা মাস্টারের কথা উঠল, আর কে কে আমাদের সঙ্গে পড়তো, সে কথাও উঠল । অনেকদিন পরে গোপালনগরের হাটে গিয়েচি । সেই আবিন মাসের পুজোর ছয়টির পর আর আসি নি। সবাই ডাকে, সবাই বসতে বলে । মহেন্দ্র সেকয়ার দোকান থেকে আরম্ভ করে সবজির গোলা পয্যন্ত । হাটে কত ঘরামী ও চাষী জিজ্ঞেস করে—কবে এলেন বাব ? ওদের সকলকে যে কত ভালবাসি, কত ভালবাসি ওদের ওই সরল আত্মীয়তাটুকু, ওদের মখের মিষ্টি আলাপ । যুগল বৈষ্ণব এসে আমার ছেলেবেলার গল্প করলে, আশা ঠাকুর এসে আমায় অনযোগ করতে বসলো, আমি বিয়ে করচি না কেন এই বলে । ব্ৰজেন মাস্টার নতুন লাইব্রেরী দেখাতে নিয়ে গেল, মন রায় তার বিড়ির দোকানে ডেকে নিয়ে বসিয়ে বিড়ি খাওয়ালে, যুগল ময়রা নতুন তৈরী দোকান ঘরে বসিয়ে তামাক সেজে দিলে—এদের ষত্ব— আত্মীয়তার ঋণ কখনো শ,ধতে পারবো না। গৌর কলর দোকানে চা কিনতে গেলাম, সে আর আমায় কিছুতেই ছাড়তে চায় না। সেও আমার এক সহপাঠী, ওই তুততলার স্কুলে ১৩১০-১১ সালে তার সঙ্গেও পড়েচি । সে সেই কথা ওঠালে, আবার একবার হিসেব হোল কে কে আমাদের সঙ্গে পড়তো । একবছর পরে দেশে যখন আসি, সবাই আমায় পেয়ে আবার সেই পরানো কথাগুলো ঝালিয়ে নেয় । এ বছরটা কলকাতায় বড়.কমব্যস্ত জীবন কাটিয়েচি। এই একটা মাস এদের সরল সাহচৰ্য্য, সপ্রচুর গাছপালার সান্নিধ্য, নদী, মাঠ বনের রপবিলাস আমার সমস্ত ক্লাস্তি, সমস্ত অবসাদ জড়িয়ে দেয়। গত দেড় মাস রোজ রাত সাড়ে তিনটার সময় উঠে ইলেকট্রিক লাইট জেলে খাতা দেখতে বসেচি, সেই কাজ শুরু করেচি আর রাত বারোটা পযf্যস্ত চলেচে নানা কাজ, চাকরি, লেখা, পাটি, টাকার তাগাদা, বক্ততা করা ও শোনা, বন্ধ-বান্ধবদের বাড়ি দেখা করতে যাওয়া, আমার এখানে যাঁরা আসেন তাঁদের সঙ্গে কথাবাত্তfা—সমানে চলেচে । এদিকে শয়েচি রাত সাড়ে বারোটা—আবার ওদিকে উঠোঁচ রাত সাড়ে তিনটাতে। এখানে এসে বেচেছি একটু মন ছড়িয়ে বিশ্রাম করে । হাট থেকে এসে নদীর ধারের মাঠে বেড়াতে গিয়ে এই কথাই ভাবছিলাম। ঝির-ঝির করচে হাওয়া, সৌদালি ফুল ফুটেচে নদীর ধারে । কোকিল ডাকচে-বেলা পড়ে গিয়েচে একবারে---কি সন্দের যে লাগছিল। আর উঠতে ইচ্ছে যায় না নদীর ধার থেকে,কি অদ্ভুত শান্তি !