পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৪৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উমি্মখের 860 করেচে কিনা তাই বা কে জানে ? কারণ হরিপদ দাদার টাকা আছে সবাই জানে। ও আজ কাঁদতে কাঁদতে সে কথার কিছু আভাস দিলে । এই ব্যাপারের পর ওর সঙ্গে এই প্রথম আমি দেখা করলাম,—যতটা খারাপ লোকে ওকে মনে করে, আমি ততটা ভাবতে পারলাম না। তবে একটা কথা ঠিকই যে, সমাজের পক্ষে এই আদশটা বড় খারাপ। গ্রামের বাইরে গিয়ে যা খুশি কর বাপ, গ্রামের মধ্যে কেন ? গহধমে'র আদশ" ক্ষণ করে লাভ কি ? আবার সজোরে বটি এল । 鹼 তারপর বেলা পাঁচটা থেকে ভীষণ ঝড় উপস্হিত হোল। গাছপালায় বেধে কুমবর্ধমান ঝটিকার সে কি ভীষণ শব্দ ! আমি ভাবলাম যে রকম কান্ড, একটা সাইক্লোন না হয়ে আর যায় না । গতিক সেই রকমই দেখাতে লাগল বটে। সন্ধ্যার আগে এমন ভয়ানক বাড়ল যে আমি আর ঘরে থাকতে না পেরে বাঁশবাগানের পথ দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম নদীর দিকে। দেখব ঝড়ের দশ্যটা। আমাদের বাড়ি যেতে বড় একটা বাঁশ পড়েচে—পাড়ার শ্যামাচরণ দাদাদের বাগানেও বড় বtশ পড়েচে । গাছপালা, বাঁশবনে ঝড়ের কি শবদ—আর সে কি দশ্য ! প্রত্যেক গাছতলায় আম পড়ে তলা বিছিয়ে আছে ঠিক যেন পিটুলি ফলের মত, কিন্তু সন্ধ্যার অন্ধকারে আর এই ভয়ানক দুযেf্যাগ মাথায় জনপ্রাণী বাড়ির বার হয় নি। আমি যা পারলাম কুড়িয়ে নিলাম-কিন্তু কোন পাত্র সঙ্গে আনি নি, আম রাখি কিসে? মাঠের মধ্যে নদীর ধারে গিয়ে আর অগ্রসর হতে পারি নে। যে-দিকে যাব, সে-দিক থেকেই ঝড় উড়িয়ে আনছে বটির ধারা, ঠিক যেন বন্দকের ছররার বেগে । ধোঁয়ার মত ব্যটির ঢেউ উড়ে চলেচে । গাছপালা মাটিতে লটিয়ে লুটিয়ে পড়েচে । ঝড়ের শব্দে কান পাতা যায় না। সে দশ্য আমাকে মগধ ও বিস্মিত করল । অনেকদিন প্রকৃতির এ রপে দেখি নি, কেবল শান্ত সন্দের রপেই দেখে আসচি । 翻 তারপর মনে হোল আমিই বা কম কি ? এই ঝড়ের বেগ আমার নিজের মধ্যে আছে । আমি একদিন উড়ে যাব মণ্ডপক্ষে ওই বিদ্যুৎগভ* মেঘপুঞ্জের পাশ দিয়ে, ওই বিষম ঝটিকা ঝঞ্চাকে তুচ্ছ করে ওদের চেয়েও বহন গণ বেগে । আমি সামান্য হয়ে আছি—তাই সামান্য । এই কথাটা যখন ভাবি, তখন আমার মধ্যে যেন কেমন একটা নতুন শক্তির আবিভাব হয়। সে শক্তি কিন্তু বেশীক্ষণ সহায়ী হয় না, সেদিন সেখানেই শেষ । কাল সপ্রভার চিঠিখানা ডাকে ফেলে দিয়ে আজ সকালে বাগান-গাঁয়ে পিসিমার বাড়ি যাব বলে বেরিয়ে পড়েচি । আজ দিনটা সকাল থেকে মেঘ ও বটি, পথ হাঁটার পক্ষে উপযুক্ত দিন, রোদ নেই, অথচ বটি খুব বেশীও হচ্চে না। ঠাণ্ডা জোলো হাওয়া বইচে মাঝে মাঝে । কুঠীর মাঠে আসতেই আমাদের ঘাটের পথে শায়োখালী আমগাছে অনেকগলো আম পড়ল দুবঢ়াব করে। গোটাকতক আম কুড়িয়ে পথের ধারে বসেই খেলাম। কারণ যেতে হবে প্রায় তের চোদ মাইল পথ, কখন গিয়ে পৌছবে তার নেই ঠিকানা। কুঠীর মাঠ দিয়ে, বণ্টিধোয়া বনঝোপের মধ্যে দিয়ে আসতে আসতে কি আনন্দই পেলাম। পথ হাঁটতে আমার বড় আনন্দ । এই যে বাড়ি থেকে বেরিয়েচি, পথে পথে অনিন্দ্ৰি'ষ্ট গন্তব্য হানের উদ্দেশ্যে চলেচি, এতেই আমার আনন্দ । কচি-কাটার পল পার হয়ে একটা লতা-ঝোপওয়ালা সন্দের বাবলা গাছ ভেঙে পড়েচে রাস্তার ওপরে, এ রকম সন্দের গাছ ভাঙলে আমার বড় কষ্ট হয় । বড় বড় বট অশখ গাছের ঘন ছায়া, পথের দু-ধারে বনো খেজর গাছে কাঁদ কাদি গণবণ খেজর দলচে, বউ-কথা-কও পাখী ডাকচে-বাংলা দেশের রােপ যদি কেউ দেখতে চায়, তবে এই সব গ্রাম্য পথে যেন প্রথম বর্ষার দিনে পায়ে হেটে বহৃদর গ্রামের উদ্দেশ্যে যায়, তবেই সে বাংলাকে চিনবে, পাখী আর বনসম্পদ, তার