পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

O》 বিভূতি-রচনাবলী সচনা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে অসীম আনন্দের সহিত বিছানায় শইয়া ভাবিয়াছিল-বৎসর দই পরে আজ লীলার সঙ্গে ওবেলা দেখা হইবে এখন ! সেই লীলাই নাই এখানে ৷” বিমলেন্দ তাহাকে উঠিতে দিল না। চা ও খাবার আনিয়া খাওয়াইল । বলিল— লসন, এখন উঠতে দেব না, নতুন আইসক্লিমের কলটা এসেছে—বড়মামার বন্ধদের জন্যে সিদ্ধির আইসক্রিম হচ্ছে—খাবেন সিদ্ধির আইসক্লিম ? রোজ দেওয়া—আপনার জন্যে এক ডিশ আনতে বলে এলাম। আপনার গান শোনা হয় নি কতদিন, না সত্যি, একটা গান করতেই হবে-ছাড়ছি নে । —লীলা কি সেই রায়পরেই আছে ? আসবে-টাসবে না ?--- - —এখন তো আসবে না দিদি-দিদির নিজের ইচ্ছেতে তো কিছু হবার জো নেই – দাদামশায় পত্র লিখেছিলেন, জামাইবাব উত্তর দিলেন এখন নয়, দেখা যাবে এর পর । তাহার পর সে অনেক কথা বলিল । অপর এ-সব জানিত না -জামাইবাব লোক ভাল নয়, খাব রাগী, বদমেজাজী । দিদি খুব তেজী মেয়ে বলিয়া পারিয়া উঠে না-তবর ব্যবহার আদৌ ভাল নয়। নীচু সরে বলিল—নাকি খুব মাতালও—দিদি তো সব কথা লেখে না, কিন্তু এবার বড়দিদির ছেলে কিছুদিন বেড়াতে গিয়েছিল নাকি গরমের ছটিতে, সে এসে সব বললে । বড়দিদিকে আপনি চেনেন না ? সজোতাদি । এখানেই আছেন, এসেছেন আজ—ডাকব তাঁকে ? p অপর মনে পড়িল সজোতাকে। বড় বৌরানীর মেয়ে বাল্যের সেই সন্দেরী, তবী সঙ্গোতা—বখ'মানের বাড়িতে তাহারই যৌবনপপিত তনলতাটি একদিন অপর অনভিজ্ঞ শৈশবচক্ষর সমখে নারী-সৌন্দয্যের সমগ্ৰ ভাণ্ডার যেন নিঃশেষে উজাড় করিয়া ঢালিয়া দিয়াছিল—বারো বৎসর পক্ষেবর সে উৎসবের দিনটা আজও এমন স্পষ্ট মনে পড়ে ! একটু পরে সজাত হাসিমখে পুন্দা ঠেলিয়া ঘরে ঢুকিল, কিন্তু একজন অপরিচিত, সাদশ’ন, তরণ যুবককে ঘরের মধ্যে দেখিয়া প্রথমটা সে তাড়াতাড়ি পিছ হটিয়া পদ"াটা পুনরায় টানিতে যাইতেছিল—বিমলেন্দ হাসিয়া বলিল—বাঃ রে, ইনিই তো অপববাব বড়দি, চিনতে পারেন নি ? অপর উঠিয়া পায়ের ধলা লইয়া প্রণাম করিল। সে সজোতা আর নাই, বয়স ত্রিশ পার হইয়াছে, খাব মোটা হইয়া গিয়াছে, মাথার সামনের দিকে দু-এক গাছা চুল উঠিতে শর হইয়াছে, যৌবনের চটুল লাবণ্য গিয়া মুখে মাতৃত্বের কোমলতা । বন্ধমানে থাকিতে অপর সঙ্গে একদিনও সুজাতার আলাপ হয় নাই—রধিনীর ছেলের সঙ্গে বাড়ির বড় মেয়ের কোন আলাপই বা সম্ভব ছিল ? সবাই তো আর লীলা নয় ! তবে বাড়ির রাঁধনী বামনীর ছেলেটিকে ভয়ে ভয়ে বড়লোকের বাড়িতে একতলা দালানের বারান্দাতে অনেকবার সে বেড়াইতে, ঘোরাফেরা করিতে দেখিয়াছে বটে । - সজাতা বলিল—এসো এসো, ব’স । এখানে কি কর ? মা কোথায় ? —মা তো অনেকদিন মারা গিয়েছেন । —তুমি বিয়ে-থাওয়া করেছ তো—কোথায় ? সে সংক্ষেপে সব বলিল । সুজাতা বলিল—তা আবার বিয়ে কর নি ? না না, বিয়ে করে ফেল, সংসারে থাকতে গেলে এ-সব তুা আছেই, বিশেষ যখন তোমার মা-ও নেই। সে বাড়ির আর মেয়ে-টেয়ে নেই ? অপর মনে হইল, লীলা থাকিলে, সে তোমার মা’ এ-কথা না বলিয়া শধে মা বলিত, তাহাই সে বলে। লীলার মত আর কে এমন দয়াময়ী আছে তাহার জীবনে, যে তাহার সকল দারিদ্র্যকে, সকল হীনতাকে উপেক্ষা করিয়া পরিপণ কর্ণার ও মমতার নেহপাণি