পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দশম খণ্ড).djvu/৩৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

©ჯსz বিভূতি-রচনাবলী গতবার বলে যান নি। শাশুড়ী মিথ্যে কথা বলেছিলেন। সন্ধ্যার ট্রেনে স্বকুমার এল। অমলার জন্ধে শাড়ী নিয়ে–নিজে আহলাদ করে দেখাতে গেল। মা কাপড়খানা ছিনিয়ে নেন ছেলের হাত থেকে। বলেন—এ আমার পাচীর সাধের সময় তাকে দেবো। বৌয়ের জন্যে আর রোজ রোজ কাপড় আনতে হবে না । যে গুণধর বে। সংসারের কুটোটুকু দু-খানা করে উপকার নেই। সারা বিকেল সেজেগুজে ঠায় বসে রইল জানলায়। বলে, কোনো কাজ করতে পারবে না । যেমন হেজল-দাগড় তেমনি বদমাইস। হবে না ? ছোট ঘরের মেয়ে যে ! ওর বাবার নাম পাগলা মাস্টার। অমলা আড়াল থেকে স্বামীকে দেখবার জন্য এসে দাড়িয়েছিল। বাবার প্রতি আমন অপমানসূচক শব্দ প্রয়োগে সে আর স্থির থাকতে পারে না । সামনে এসে বলে—বাবার নামে আমন যা তা বলবেন না আপনি । আমি কি করেচি না করেচি আপনাদের তা জানি নে, কিন্তু আমার বাক যে কারো কোনো অনিষ্ট করেন নি বা করতে পারেন না এটা আমি ভালো করেই জানি । ● শাশুড়ী ঠাকুরুশ রণচণ্ডী মূৰ্ত্তি ধারণ করলেন। ছেলেকে দিব্যি দিলেন সে যেন ও বৌয়ের মুখদর্শন না করে। অনেকরাত্রি জেগে দু-জন দু-জানালায় বসে রইল । সেদিন নারাণবাবু আহার করতে বসে বললেন—এ চড় কোথা থেকে পেলে ? অসময়ে এ চড় । • মনোরমা বললেন—আমি জানে নে, ননীমাধব কোথা থেকে এনেচে । নারাণ মাস্টার বললেন—কোথা থেকে আনবে ? এ নিশ্চয় অন্য কারে গাছ থেকে চুরি করে এনেচে । আমাদের নিজেদের গাছ নেই—কেই বা দেবে অসময়ে ? বলি শোনো, চুরির জিনিস আমার পেটে সইবে না। আমার সংসারে কেউ খাবে না। ফেলে দাও সবটুকু। মনোরম অনেক যত্ব করে দরিদ্র সংসারে অসময়ের এ চড় রেখেছিলেন। স্বামী খেতে ভালবাসেন বলে তার অত আগ্রহ। এই আগ্রহের জিনিসটা নিৰ্ম্মম ভাবে ফেলে দিতে তার চোখে জল এল। কিন্তু কিছু বলতে পারলেন না মুখে । তিনি র্তার স্বামীকে ভাল ভাবেই চেনেন। অনুনয় বিনয়ে এক্ষেত্রে কোনো ফল হবে না। অভিমান করে চুপ করে রইলেন। মনোরমাকে বুঝিয়ে বললেন নারাণ মাস্টার-দেখো, ছেলেকে শুধু উপদেশ দিলে কাজ হবে না। “আপনি আচরি ধৰ্ম্ম পরেরে শিখায়”—আমরা পিতামাতা, এই আমাদের জীবনের মূলমন্ত্র হওয়া দরকার। মুখে বলি, অথচ চুরির এ চড় রোধে খাই—এতে ছেলেপিলে ভালো উপদেশ কখনো নেবে না। আমি জানি তোমার মনে কষ্ট হয়েচে, কিন্তু আমি যে পিতা, তুমি যে মা—আমরা যে শিক্ষক। নারাণ মাস্টারের ক্লাসে জানলা বন্ধ ছিল। তিনি ক্লাসে গিয়েই জানলা খুলে দিতে বজেন ।