পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত Գծ মনে হইল—চেনা-চেন মুখ! একটু পরে সেও অপুর দিকে চাহিতে দুইজনে চোখাচোখ হইল। এবার অপু চিনিয়াছে—মুরেশদ া নিশ্চিন্দিপুরের বাড়ির পাশের সেই পোড়ো ভিটার মালিক নীলমণি জ্যাঠামশায়ের ছেলে সুরেশ ! সুরেশও চিনিয়াছিল। অপু তাড়াতাড়ি কাছে গিয়া হাসিমুখে বলিল, মুরেশদা ষে । যেবার দুর্গ মায়া যায়, সে বৎসর শীতকালে ইহারা যা কয়েক মাসের জন্ম দেশে গিয়াছিল, তাহার পর আর কখনও দেখাসাক্ষাৎ হয় নাই। সুরেশ আকৃতিতে যুবক হইয়া উঠিয়াছে। দীর্ঘ সবল দেহ, সুগঠিত হাত পা। বালোর সে চেহারার অনেক পরিবর্তন হইয়াছে। সুরেশ সহজ-সুরেই বলিল-আরে, অপূর্ব ? এখানে কোথা থেকে ? স্বরেশের খাটি শহুরে গলার মুরে ও উচ্চারণ-ভঙ্গিতে অপু একটু ভয় খাইয়া গেল । সুরেশ বলিল—তারপর এখানে কি চাকরি-টাকরি করা হচ্ছে ? —ন—আমি যে পড়ি ফাস্ট ইয়ারে রিপনে— —তাই নাকি ? তা এখন ধাওয়া হচ্ছে কোথায় ? অপু সে-কথার কোনও উত্তর না দিয়া আগ্রহের স্বরে বলিল, জ্যেঠিম কোথায় ? —এখানেই, গুণমবাজারে! আমাদের বাড়ি কেনা হয়েছে সেখানে— সুরেশের সহিত সাক্ষাতে অপু ভারী খুশী হইয়াছিল। তাহদের বাড়ির পাশের যে পোড়ে ভিটার বনঝোপের সহিত তাহার ওদিদি দুর্গার আবাল্য অতিমধুর পরিচয়,সেই ভিটারই লোক ইহারা। যদিও কখনও সেখানে ইহারা বাস করে নাই, শহরে শহরেই ঘোরে, তবুও তো সে ভিটারই লোক, তাহ ছাড়া দশ রাত্রির জ্ঞাতি, অতি আপনার জন । অপু বলিল—অতসীদি এখানে আছে ? মুনীল ? মুনীল কি পড়ে । —এবার সেকেন ক্লাসে উঠেছে—আচ্ছ, যাই তাহলে, আমার ট্রাম আসছে— সুরেশের সুরে কোনও আগ্রহ বা আস্তরিকতা ছিল না, সে এমন সহজ সুরে কথা বলিতেছিল, যেন অপুর সঙ্গে তাহার দুইবেলা দেখা হয়। অপু কিন্তু নিজের আগ্রহ লইয়া এত ব্যস্ত ছিল যে মুরেশের কথাবার্তার সে-দিকটা তাহার কাছে ধরা পড়িল না। —আপনি কি করেন সুরেশদা ? —মেডিকেল কলেজে পড়ি, এবার থার্ড ইয়ার— —আপনাদের ওখানে একদিন যাব সুরেশদা—জ্যেঠিমার সঙ্গে দেখা ক’রে আসবে।— সুরেশ ট্রামের পা-দানিতে পা দিয়া উঠিতে উঠিতে অনাসক্ত সুরে বলিল, বেশ বেশ, আমি আসি এখন— এতদিন পরে সুরেশদার সহিত দেখা হওয়াতে অপুর মনে এমন বিস্ময় ও আনন্দ হইয়াছিল, যে ট্রামটা ছাড়িয়া দিলে তাহার মনে পড়িল—মুরেশদার বাড়ির ঠিকানাটা তো জিজ্ঞাসা করা হয় নাই! সে চলন্ত ট্রামের পাশে ছুটিতে ছুটিতে জিজ্ঞাসা করিল—আপনাদের বাড়ির ঠিকানাটা— ও সুরেশদ, ঠিকানাটা যে— @