পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

2օ/օ সম্বন্ধে বিভূতিভূষণের উৎসাহ সর্বজন-বিদিত—কেউ কেউ এজন্য তাকে Botany-বাত্তিকগ্রস্ত বলে বিদ্রপও করে থাকেন। সেই উৎসাহ বা বাত্তিক এখানেও পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান। গোরাই নদীর তীরের শু্যাওড়াগাছই হোক কিংবা আরাকান-ইয়োমার রবার গাছই হোক কিংবা কাজরা উপত্যকার বুদ্ধ-নারিকেলই হোক—গাছ চিনবার, গাছের নাম জানবার, গাছের সঙ্গে একটা অন্তরঙ্গ ব্যক্তিগত সম্পর্ক স্থাপন করবার আগ্রহ তার এখানেও যথেষ্ট আছে৷— তথাপি এই প্রকৃতি-বর্ণনার মধ্যে একটা অভাব অনুভব না করে পারা যায় না। সেট হল exaltation-এর অভাব, চিত্ত-সমুন্নতির অভাব—ষে অভাব আমরা আরণ্যক’-এর মত গ্রন্থে মুহূর্তের জন্তও অনুভব করি না। এই অভাবের কারণ খুঁজতেও আমাদের বেশিদূর যেতে হবে না – তৃণাঞ্জুর'-এর আলোচনার আমি যে ত্রিতত্ত্বের উল্লেখ করেছি তার পরম ও চরম তত্ত্বটিই ‘অভিযাত্রিক’-এ অনুপস্থিত। এ গ্রন্থের কুত্রাপি ঈশ্বরের আবির্ভাব নেই—উল্লেখ পর্যন্ত নেই ; কারণ এই সময়ে, অর্থাৎ প্রথম যৌবনে, বিভূতিভূষণের বিশ্বাস ছিল যে তিনি agnostic বিভূতিভূষণের ব্যক্তিমানসের ও শিল্পীমানসের সঙ্গে যার একটু ঘনিষ্ঠ পরিচয় আছে তিনি সহজেই বুঝতে পারবেন যে তার এই বিশ্বাস এক ধরনের সাময়িক আত্মপ্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু তবু এরই ফলে প্রকৃতি তার কাছে এই সময়ে এমন একটা যান্ত্রিক রূপ ধরে দেখা দিয়েছিল যা শুধু দেখবার, জানবার ও বুঝবার বস্তু, যার মধ্যে কোন mystic ব্যঞ্জনা নেই, কোন রকম উধ্বর্ণয়নের বা চিত্ত-সমূদ্ধতির অবকাশ নেই। তাই তার কবিমন এখানে নীরব। ‘অপরাজিত'-র আস্তিক্যবোধসম্পন্ন অপু মধ্যপ্রদেশের আরণ্য অঞ্চলে প্রবাসজীবন যাপন করেছিল ; ‘অভিযাত্রিক’-এর agnostic বিভূতিভূষণও সেখানে ভ্রমণ করতে গিয়েছিলেন। দুই গ্রন্থের এই দুটি অংশের প্রকৃতি-বর্ণনা তুলনা করে দেখলে আমি যা বলতে চাই তা সহজেই বোঝা যাবে। না—প্রকৃতি নয়, মানুষ। "অভিযাত্রিক’-এর বিভূতিভূষণ মানব-ভীর্থের তীর্থযাত্রী ; ‘অভিযাত্রিক-এর মূল রস মানবরল। কথাটা বিভূতিভূষণ নিজে বেশ পরিষ্কার ভাবে বুঝিয়ে দেবার চেষ্টা করেছেন একাধিক স্থানে ; ‘দেশ বেড়িয়ে যদি মানুষ না দেখলুম, তবে কি দেখতে বেরিয়েচি ?...মাজৰ সব জায়গাতেই আছে। প্রত্যেকের মধ্যেই এক একটা অদ্ভুত জগৎ, দেখতে জানলেই সে জগৎটা ধরা দেয়। তাই দেখতেই পথে বার হওয়া। মানুষের বিভিন্ন রূপ দেখবার আমার চিরকাল আগ্রহ, নতুন মাহৰ দেখলেই মনে হয় ওর সঙ্গে বসে একটু আলাপ করে ওকে চিনি।. মানুষের অন্তর একটি রহস্যময় বিরাট বিশ্ব, এর সীমা নেই, শেষ নেই। মানুষের অন্তলোক আবিষ্কারের অভিযান উত্তর দক্ষিণমেরু অভিযানের মতই কষ্ট- ও অধ্যবসায়-সাপেক্ষ, সেই ब्रकमहे दफ्रिकामब्र ।' go - ‘অভিযাত্রিক'-এর প্রত্যেকটি ভ্রমণকাহিনীই তাই মানুষের অন্তলোক আবিষ্কারের অভিধান