পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨૨8 বিভূতি-রচনাবলী আর মনে পড়ে আমাদের পোড়ে ভিটের পশ্চিম ধারের সেই কি অজানা গাছগুলো, যার সল্প বাল্য থেকে আমার কত পরিচয়-ওগুলোর কথা মনে কল্পনা করলেই আবার আমার বারে বছরের মুগ্ধ শৈশব যেন ফিরে আসে। কাল বৈকালে এথানকার মহারাজবাগ ও মিউজিয়াম দেখলাম। মিউজিয়মে অনেক পুরনো শিলাখণ্ড আছে—কয়েকটি খ্ৰীষ্টীর তৃতীয় ও চতুর্থ শতাব্দীর। বিলাসপুর জেলায় একটা ডাকাতের কাছে পাওয়া কতকগুলো তীর দেখলাম, ভারী কৌতুহলপ্রদ জিনিস বটে। একটি জীবন্ত অজগর সাপ দেখা গেল। মহারাজবাগে একটা বড় সিংহ আছে, কিন্তু সে-সব যতই ভাল লাগুক, সে-সব নিয়ে আজ লিখব না। আজ যা নিয়ে লিখতে বসেচি, তা হচে আজকার বিকেলের মোটর ভ্রমণটি । নাগপুর শহরের চারিধারে ষে এমন অদ্ভূত ধরণের প্রাকৃতিক সৌন্দৰ্য-বিশিষ্ট স্থান আছে সে-সব কথা আমি কখনও জানতুম না। কেউ বলেও নি। শহরের উত্তর দিকে পাহাড়ের ওপরকার রাস্ত দিয়ে আজ আমরা মোটর নিয়ে গিয়েছিলাম। যোধপুরী ছাত্রটি আমাদের নিতে এসেছিল। সে যে কি অপূর্ব সৌন্দর্য, তা লিখে প্রকাশ করতে পারি নে। সন্ধ্যা হয়ে আসচে, অন্তদিগন্ত রঙে রঙে রঙীন। বহুদূরে, দূরে, উচ্চ মালভূমির মুদুর প্রান্ত সান্ধ্যছয়াচ্ছন্ন, দিক্‌চক্রবালরেখা নীল শৈলমালায় সীমাবদ্ধ, সামনে, পিছনে, ডাইনে ব’য়ে যেদিকে চাই, ধূৰু বৃক্ষহীন, অন্তহীন উচ্চাৰচ মালভূমি, শৈলমাল, শিলা এ-দু’চারটা শালপলাশের গাছ। মাথার উপর অপূর্ব নীল আকাশ, ঈষৎ ছায়াভরা কারণ সন্ধ্যা হয়ে আসচে–পিছনের পাহাড়টি ক্রমে গাড়ির বেগে খুব দূরে গিয়ে পড়চে, তার ওপরকার বৃক্ষশ্রেণী ক্রমশঃ অস্পষ্ট হয়ে আসচে–সামনের শৈলমালা ফুটে উঠছে—ক্রমে অনেক দূরে সিজাবলডির পাহাড় ও বেতার টেলিগ্রাফের মাস্তুল দেখা যাচ্ছে। তার নীচে চারিদিকের মালভূমি ও পাহাড়ে ঘেরা একটা খাজের মধ্যে নাগপুর শহরটা। এমন একটা মহিমময় দৃশ্বের কল্পনা আমি জীবনে কোনদিনই করতে পারি নি—বাংলাদেশ এর কাছে লাগে না—এর সৌন্দর্য যে ধরনের অনুভূতি ও পুলক মনে জাগায়, বাংলাদেশের মত ভূমিসংস্থান যে সব দেশে, সে সব দেশের অধিবাসীদের পক্ষে ত মনে কল্পনা করাও শক্ত। উড়িষ্কার দৃশ্যও এর কাছে ছোট বলে মনে হয়—সেখানে জঙ্গল আছে, বুনো বাশের ঝাড় আছে বটে, কিন্তু এ ধরনের অবর্ণনীয় সুমহান, বিরাট, রুক্ষ সৌন্দর্য সেখানকারও নয়। তখন আমি এসব দেখি নি, কাজেই উড়িষ্যাকেই ভেবেছিলাম এই প্রাকৃত্তিক সৌন্দর্যের চরমতম স্বষ্টি। আমি বনশ্ৰী খুব ভালবাসি, বন না থাকলে আমার চোখে সে সৌন্দর্য সৌন্দর্যই নয়—কিন্তু বন না থাকলেও ধে এমন অপূর্ব রূপ খুলতে পারে, এমন Superb অনুভূতি মনে জাগাতে পারে তা আমার ধারণাও ছিল না। § সন্ধ্যা প্রায় হয়ে এসেচে। এখানে পাহাড়ের ওপর দুটো বড় হ্রদ আছে, একটার নাম আম্বাজের আর একটার নাম কি বললে যোধপুরী ছাত্রটি ঠিক বুঝতে পারলাম না। দুটােই বড় মুলার—অবিপ্তি আম্বাজেয়ী হ্রদটা অনেক বড় ও সুন্দরতর। হ্রদের সামনে কলকাতার