পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ર૭8 বিভূতি-রচনাবলী ততক্ষণ মশলাগুলা বাটিয়া রাখা যাক। সে মাঝে মাঝে কাজের সুবিধার জন্ত কয়েকদিনের মশলা একসঙ্গে বাটিয়া রাথিত । বেলা প্রায় দশটার সময় একটি অল্পবয়সী ফুটফুটে বউ, পরনে একখানা পুরানো চেলীর কাপড়, হাতে থাকিবার মধ্যে গাছি শাখা—একটি বাটি হাতে রান্নাঘরের দোরের কাছে ভয়ে ভরে উকি মারিয়া বলিল—দিদি আছ নাকি ? স্বশীলা মশলা বাটিতে বাটিতে মুখ তুলির চাহিয়া বলিল—আর আর ছোট বউ—জায় না ঘরের মধ্যে—ঠাকরুণ নেই.. বউটি ঘরে ঢুকিয়া বলিল—একি দিদি, এত বেলা হ’ল এখনও রান্না চড়াওনি যে ! সুশীলা মুখ ঘুরাইয়া বলিল—রান্না চড়াব। হাড়ি-কুড়ি ভেঙে ফুেলি নি এই কত ••• বউটর চোখে ভরের চিহ্ন পরিস্ফুট হইল, সে বলিল—না দিদি, ও সব কিছু কোরো না, ভাত চড়িয়ে দাও লক্ষ্মীটি, নইলে জান তো কি রকম লোক সব —দেব—দেখবে সব আজ কি রকম মজা, রোজ রোজ কাঠ কাটবো অার ভাত রাধবো, উ: | —কাঠ নেই বুঝি? আচ্ছা, দী-খানা দাও দিদি, আমি দিচ্ছি কেটে। —তোর কি দায় তুই দিতে যাবি ? বোস ঠাণ্ড হয়ে—যাদের গরজ আছে তারা নিজেরা বুস্তুক গিয়ে. —তোমার পীয়ে পড়ি দিদি, দাও রান্নাটা চড়িয়ে, জান তো ওরা •• —তুই বোস দেখি ওখানে চুপ করে, দেখিস এখন মঙ্গ—আজ দু'মাস ধরে রোজ বলছি কাঠ নেই, কথা কানে যায় না কারুর—আজি মজাটি দেখাবো. সুশীলার একগুয়েমিতে বউটি কিছু ভীত হইল, কারণ মজা কোন পক্ষ দেখিবে এ সম্বন্ধে তাহার একটু সন্দেহ ছিল। কিন্তু সাহস করিয়া আর কিছু বলিতে না পারিয়া সে চুপ করিয়া রহিল। এই বউটি রামতনু মুখুয্যের জাঠতুত ভাই রামলোচন মুখুয্যের পুত্রবধূ। পাশেই এদের বাড়ি। রামলোচনের অবস্থা খুবই খারাপ—তা সত্ত্বেও তিনি বছর দুই হইল ছেলের বিবাহ দিয়াছেন–রামলোচনের স্ত্রী ছিল না, পুত্রবধুই গৃহিণী। দুরবস্থার সংসারে ছেলেমাস্থ্য বউকে সংসার করিতে অত্যন্ত বেগ পাইতে হইত। সে সময়ে-অসময়ে বাটি হাতে খুঁচি হাতে এ বাড়িতে হাত পাতিয়া তেলট মুনটা লইয়। যাইত, চাউল না থাকিলে আঁচলে করিয়া চাউল লইয়া যাইত—ধার বলিয়াই লইয়া যাইত—কখনও শোধ করিতে পারিত, কখনও পারিত না। মোক্ষদ। ঠাকরুণকে বউটি বড় ভয় করে—তিনি থাকিলে জিনিসপত্র তো দেনই না, যদি বা দেন ডাহা বহু মিষ্ট বাক্যবর্ষণ করিবার পর। তবু বউটর আসিতে হয়, কি করিবে, অভাব। সুশীল। তাহাকে মোক্ষদা ঠাকরুণের হাত হইতে বাচাইয়া গোপনে এটা ওটা যখন স্বাহা দরকার সাধ্যমত সাহায্য করিত। সামান্ত একবাট তেল লইয়া গেলেও হুঁশিয়ার মোক্ষদ ঠাকরুণ তাহা কখনও তুলিতেন না—গলা টিপিয়া কড়া-ক্ৰাপ্তিতে তাহ আদায়