পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মৌরীফুল &ፃፃ আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই সে বাড়ির মধ্যে চলে গেল, কিন্তু সেদিন আর সে বাইরের ঘরে দেখা দিলে না। বীণার খামখেয়ালি ধরন আমার জানা ছিল কাজেই এতে আমি কিছুমাত্র আশ্চর্য হলাম না। পর দিন সকালে সে এল—হাতে একখানা “বঙ্গ-বন্ধু" । আমার দেখিয়ে বললে—এই নিন, দিন দিকি বুঝিয়ে । লাল পেন্সিলে দিদি দাগ দিয়ে দিয়েছে জায়গাগুলো। সেই মাসের “বঙ্গ-বন্ধু"তে আমার ‘ধৌথ-ব্যাঙ্ক ও মধ্যবিত্তের কর্তব্য” বলে প্রবন্ধটা বেরিয়েছিল। হাতে নিয়ে মনে মনে ভাবলাম যদি ম্যাটিক ক্লাসের একটি মেয়েকেও তাক লাগিয়ে না দিতে পারলাম তবে অনবরত দিন-পনরো ধীরে, ইম্পিয়ীয়াল লাইব্রেরী যাতায়াত এবং নানান Year-Book নাড়-চাড়া করবার সার্থকতা আর কি হোল ? বীণা বিকেল বেলা একখানা খাতা হাতে নিয়ে এসে বললে—চ-টা খেয়ে নিন—নিয়ে দিদির এই ট্রানস্লেশনটা হয়েছে কিনা দেখে দিন তো। দিদি বললে আপনাকে দেখাতে--- সেটা হাতে নিয়ে দেখলাম—বেশ গোটা গোট মুক্তোর ছাদের লেখাটা বটে কিন্তু ট্রান্‌ষ্ট্রেশনটা বিশেষ উচুদরের নয়। কাজেই যখন বীণা বললে—ধরুন কুড়ি নম্বর আছে, কত নম্বর দেবেন আপনি ? তখন একটু আমতা আমতা করে বললাম—নম্বর ? তা এই ধরে, অবিপ্তি বাংলাটা খুব শক্ত, তা ধরে এই চার কি পাচ দিতে পারি: —মোটে । তবেই হয়েছে, দিদি তাহলে এবার ইংরেজিতে ফেল, ফেলতু, ফেলু– কথাটা শেষ করেই সে মুখে হাতখান চাপা দিয়ে খিল খিল করে হেসে উঠলো। আমি একটু অপ্রতিভ হয়ে বললাম—না না ফেল কেন হবেন--আর একটা সোজা দেখে করলেই —এটা বেজায় শক্ত কিনা ? বিকেলে এসে বীণা বললে—দিদি বলে দিলে আপনাকে রোজ রোজ তার ট্রান্‌স্লেশন দেখে দিতে হবে- পারবেন তো ? —খুব খুব—নিয়ে এসো না কাল থেকে। কেন দেখে দেবো না ? সেদিন থেকে আমার কাজ হোল রোজ রোজ এক রাশ করে ইংরাজি ও বানানের ভুল সংশোধন করা । বেশ হাতের লেখাটি কিন্তু—খাতার শেষে গোটা গোটা ছাদে আমার নেপথ্যপথবর্তিনী ছাত্রীটির নাম লেখা থাকে—প্রতিমা দেবী । কয়েকদিন খুব গুমটের পর বৈকালের দিকে সেদিন খুব বৃষ্টি হোল। উকীলবাবুর বাড়ির সামনে একটা বড় বটগাছে নতুন পাতা গজিয়েছে, বারানাটাতে বসে সেদিকে চেয়ে আমি আমার দেশের বাড়ির কথা ভাবছিলাম—কত দিন যাইনি, কাজের খাতিরে বিদেশে বিদেশে বেড়াতে হয়। তবুও যখন নববর্ষ নামে, বৃষ্টি-সজল বাতাসে এখান থেকে তিনশো মাইল দুরের সে গ্রামখানির ভিজে মাটার গন্ধ যেন ভাসিয়ে আনে.মনে হয় আমার ছোট ভাই অস্তু হয়ত এতক্ষণ আমাদের উঠানের বৃষ্টির জলে কাগজের নৌকো ভাসিয়ে খেলা করছে।... গোসাই কাকাদের বৈঠকখানাতে এভক্ষণ তাসের খুব মজলিস বলেছে...তখন মন বড় খারাপ হয়ে যায়, ইচ্ছা হয় চাকরি-বাকরি ছেড়ে দিয়ে বাড়ি গিয়ে উঠি । উকীলবাবু কয়েকদিন রক্তাধিক্যের অমুখ হওয়ার বাড়ির মধ্যেই ছিলেন, কাছারিও