পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অভিযাত্রিক vඵ6) মুতরাং বললুম, জানি। —আচ্ছ, আপনার ঠিকানা দিয়ে যান, কাল বেলা দশটার সময় আসবেন। পরদিন দশটার সময় কেশোরামবাবুর আপিসে গিয়ে দেখি লোকে লোকারণ্য। আমার মতো আরও পঞ্চাশ ষাটটি বেকার কেশোরামবাবু খাস বাইরের হলে অপেক্ষ করচে। এরা সবাই বক্তৃতা দেবে আজ এখানে। বুঝলুম, সবারই মরিয়া অবস্থা। বকৃত বস্তৃতাই সই। আমার পূর্বে একে একে আট দশ জন লোকের ডাক পড়লো। এদের মধ্যে বৃদ্ধ থেকে ছোকরা পর্যন্ত সব রকমের লোকই আছে। লক্ষা করে দেখলুম কেউ দুমিনিট পরে ফিরে আসচে, কেউ আসচে পাচমনিট পরে—কেউ বা ঢুকবা-মাত্র বেরিয়ে আসচে। অবশেষে আমার ডাক পড়লো। কেশোরামজি দেখলুম তার খাস কামরায় নেই, ওদিকের বারান্দার দূর কোণে একথান চেয়ারে তিনি বসে। কাছে যেতেই বললেন, আপনি কিছু বলুন— —ইংরিজিতে না বাংলাতে ? —বাংলায় বলুন— ইউনিভার্সিটি ইন্‌ষ্টিটিউটের আবৃত্তি-প্রতিযোগিতার জন্তে বঙ্কিমচন্দ্রের লেখা খানিকট মুখস্থ করেছিলুম, মনেও ছিল। সামনের থামের দিকে চেয়ে মরিয়ার মুরে তাই আবৃত্তি করে গেলুম। কেশোরাম খুশী হলেন। চাকুরি আমার হয়ে গেল । দিন পাচ-ছয় পরে ট্রেনে কুষ্টিয়া গিয়ে নামলুম। কলকাতার কাছে কুঠিয়া, নদীয়া জেলায় একটা মহকুমা। এখানে কি থাকবে ? কিন্তু আমার কাছে একটা দেখবার জিনিস ছিল । আমার মাতামহ সেকালের এঞ্জিনিয়ার ছিলেন, গোরাই নদীর ওপর রেলওয়ে ব্রিজ তিনি তৈরি করেন এ গল্প অনেকদিন থেকে মাতুলালয়ে শুনে আসচি। ঘুমের ঘোরে ভালো দেখতে পেলুম না ব্রিজট । জীবনে চাকুরি উপলক্ষে সেই প্রথম বিদেশে যাওয়া। ডাকবাংলোয় গিয়ে উঠলুম, তিনদিন মাত্র এখানে থাকতে হবে। পথে বেরিয়েচি, আমার এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা, কলেজে তার সঙ্গে পড়েছিলুম। সে আমায় দেখে তো অবাক। ধরে নিয়ে গেল তাদের বাসাতে একরকম জোর করেই—আমার কোনো আপত্তি শুনলে না। আমি তাকে বললুম-ভাই, গোরাই নদীর ব্রিজটা দেখাবি ? —সে আর বেশি কথা কি, চলে আজই। বনজঙ্গল আর কচুবন ঠেলে ঠেলে গোরাই নদীর ধারে আমরা গিয়ে পৌঁছলাম। গোরাই নদীর উভয় তীরের মাঠে, জঙ্গল বাশবনুের শোভা দেখে সত্যি আমার চোখ জুড়িয়ে গেল । কত কাল কলকাতায় পড়ে আছি, বেরুতে পারিনি কোথাও । বন্ধুকে বললুম—ভাই, বসি একটু— —এখানে কেন ? চলো এগিয়ে—