পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী فياباني . কোনে আপত্তি নেই। তবে দু-ঘণ্টার বেশি আমার পক্ষে থাকা সম্ভব হবে না, কারণ আমার নিজের আপিসের কাজও রাত্রে আমায় করতে হবে । একদিন খুব বৃষ্টি হল । আমি সমুদ্রের ধারে বেড়াচ্চি, এমন সময় দেখি চট্টগ্রামবাসী সুকবি ও মুলেখক স্বরেন্দ্রনাথ ধর সেখানে আপন মনে এক জায়গায় চুপ করে বসে। স্বরেনবাবু আমার বিশেষ বন্ধু, এবার চট্টগ্রামে যে-কদিন ছিলাম, কর্ণফুলির ধারে একসঙ্গে মাঝে মাঝে দুজনে বেড়াতুম। স্বরেন ধর খামখেয়ালী ও ভবঘুরে ধরনের লোক। বললেন—চলে হে আমার সঙ্গে, কাল বন বেড়াতে যাই— আমারও খুব উৎসাহ, বললুম—বেশ চলুন, কোন দিকে যাবেন ? —আরাকান ইয়োম রেঞ্জ, যেটা এখান থেকে দেখা যাচ্চে, ওইদিকে নিবিড় টিক-উড ফরেস্ট। চলে ওদিকে যাবো— স্বরেনবাবুর জীবনে পায়ে হেঁটে এরকম বেড়ানো অভোস অনেকদিন থেকেই আছে জানি, র্তার কথায় তখনি সক্ষতি দিলুম। বললুম—এখানে কবে এলেন ? • —এখানে আমার এক বন্ধু আছেন ডাক্তার, তার ওখানে বেড়াতে এসেছিলুম, প্রায় দশ দিন আছি। শরীরটা ভালো ছিল না, এখন একটু সেরেচে। যদি বেরুতে হয়, এইবার—এই হুপ্তার মধ্যেই । আমি সন্ধ্যাবেল বর্মী ভদ্রলোকের বাড়ি গিয়ে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলতে তিনি আমায় অনেক ভয় দেখালেন। আরাকান ইয়োম পর্বতশ্রেণী বন্যজন্তু-সঙ্কুল, দুষ্প্রবেশু ও প্রার জনহীন। তা ছাড়া, সামনে যে পর্বত দেখা যায়, ওটা আসল রেঞ্জ নয়, ওর ত্রিশ বত্ৰিশ মাইল পেছনে যে ধোয়ার মতো পাহাড়শ্রেণী দেখা যাচ্চে, ওখানে তাদের ফরেস্ট ইজারা করা আছে, কার্যোপলক্ষে অনেকবার তিনি সেখানে গিয়েচেন, অত্যন্ত দুর্গম জায়গা। দুজন মাত্র লোকের পক্ষে সেখানে যাওয়া নিতান্ত দুঃসাহসের কাজ ছাড়া আর কিছু নয়। ভদ্রলোকের নাম মৌংপে। কাঠের ব্যবসা করে দুপয়সা করেচেন, তা তার বাড়ির আসবাবপত্র দেখেই বোঝা যায়। মৌংপে বললেন—আমার এই বড় মেয়েটি আমার সঙ্গে একবার সেখানে গিয়েছিল— আমি বিস্ময়ের স্বরে বললুম-গাড়ি যায় নাকি সেখানে ? কিলে গেলেন ? —হাতীর পিঠে । কাঠ বয়ে আনবার জন্তে আমাদের হাতী আছে জঙ্গলে, আমার নিজের ছ’টা হাতী আছে--আপনাকে হাতীর সুবিধে করে দিতে পারি, কিন্তু নদী পেরিয়ে সে সব হাতী এদিকে তো আসে না। চিঠি লিখে আনাতে গেলে পনেরো দিন দেরি হয়ে যাবে। মৌপের বড় মেয়েটি খুব বুদ্ধিমতী । লেখাপড়ায় আগ্রহ তারই বেশি। প্রাকৃতিক দৃপ্ত বলে যে একটা জিনিস আছে—মডু শহরের মধ্যে সে-ই একমাত্র বর্মী মেয়ে, যে এ খবর রাখে। ভার বাবা উঠে গেলে সে আমায় বললে—আপনি এখানে কতদিন থাকবেন ? --বেশিদিন না। দশ বারে দিন যদি থাকি খুব বেশি। —তবে আপনি আরাকান ইরোমা দেখবার আশা ছাড়ন—পারে ঘেঁটে যাবেন বলচেন,