পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88e বিভূতি-রচনাবলী দিকে আধ মাইলের মধ্যে একটা বাগান দেখবেন, তার ওপারে খানা। সেখানে থাকবার জায়গা মিলতে পারে। খানা খুজে বার করলুম। থানার দারোগা আর জেলার লোক, মুসলমান। তার আতিথ্য আমরা কখনো ভুলবো না। আমরা তাকে বললুম, আমরা কিছু খাবো না, শুধু ५क श्रांअंग्र 5ाँ३ ।। তিনি বললেন, তা কখনো হয় না। আমার হেড-কনস্টেবল ব্রাহ্মণ, তাকে দিয়ে রান্না করাবো, আপনাদের কোনো আপত্তির কারণ নেই। আমরা বললাম—সেজন্তে নয়, আপনার বাসা থেকে রোধে পাঠালেও আমাদের কোনো আপত্তি হবে না জানবেন। ভদ্রলোক শুনলেন না। হেড কনস্টেবলকে দিয়ে পুরী-তরকারি আর হালুয়া তৈরি করিয়ে দিলেন–নিজের বাসা থেকে সেরথানেক জাল দেওয়া দুধ পাঠিয়ে দিলেন। আহারাদির পরে আমাদের জন্তে বিছানা আনিয়ে দিলেন বাসা থেকে । আমাদের সঙ্গে খানিকক্ষণ বসে গল্প করলেন—তারপর আমাদের বিশ্রাম করতে বলে বাসায় গেলেন। আমরা খুব ভোরে উঠে রওনা হবে বলে রাত্রেই তার কাছে বিদার নিয়ে রেখেছিলুম। স্বর্য ওঠবার আগেই পথে বেরিয়ে পড়লুম। মাইল আট-নয় দূরে বাক-ভাগলপুরের একটা মহকুমা। এক জায়গায় দুটে রাস্তার মোড়, কেউ বলে দেওয়ার লোক নেই কোন রাস্তা বাকায় গিয়েচে । আমরা আন্দাজ করে নিয়ে অনেকখানি পথ চলে এসেচি, তথন একজন পথিকের সঙ্গে দেখা হওয়ার জিজ্ঞেস করলুম ঠিক পথে চলেচি কি না। সে বললে, বড় ঘুর-পথে যাচ্চেন বাবুজি, এই মাঠের মধ্যে দিয়ে যান, শীগগির পৌছোবেন। তার কথা শুনে মাঠের রাস্তায় নেবে আমরা আরও ভুল করলাম। পথ ভীষণ খারাপ, চষা-মাটির ওপর দিয়ে আল ডিঙিয়ে, থানা-ডোবা পার হয়ে মাইল তিনেক এসে আমার দুই পায়ে ফোস্ক পড়লো, আমি আর হাটতে পারি নে—অথচ এদিকে দিগন্তবিস্তীর্ণ প্রাস্তর সামনে, একটা গোটা টাউন তো দূরের কথা, একখান খোলার ঘরও নেই মাঠের কোনো দিকে। আমি বললুম—আর হাটতে পারচিনে অম্বিকা— অম্বিক ভরসা দিলে, আর একটু পরেই আমরা বাকী পৌঁছে যাবে এবং সেখানে ওর এক উকিল-বন্ধুর বাড়ি আশ্রয় নিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। আরও দু-ঘণ্টা হাটবার পরে আমি একটা গাছতলায় বসে পড়লুম। আমার চলবার শক্তি লুপ্ত হয়েচে । আমিই হেঁটে দেশ বিদেশ বেড়াবার বড় উৎসাহ দেখিয়েছিলুম, আমার প্ররোচনাতেই অম্বিকা আমার সঙ্গে হেঁটে বেড়াবার জন্তে বার হয়েচে ; এখন দেখা গেল আমি একেবারে হাটতে পারিনে, মুখে যত বলি কাজে তার কিছুই করবার সাধ্য নেই আমার । অম্বিকা পড়ে গেল বিপদে ।