পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

는 8 বিভূতি-রচনাবলী স্কলারশিপ পেইচি। বড় স্কুলে পড়লে মাসে পাঁচ টাকা ক’রে পাবো। স্কুলে ধেতেই হেডমাস্টার ডেকে বললে— * সর্বজয়ার মুখ বিবর্ণ হইল গেল। ছেলের মুখের দিকে চাহিয়া বলিল, কোথায় পড়তে হবে ? —মহকুমার বড় স্কুলে । —ত তুই কি বললি ? —আমি কিছু বলি নি। পাচট করে টাকা মাসে মাসে দেবে, যদি না পড়ি তবে তো আর দেবে না। ওতে মাইনেও ফ্রি করে নেবে আর ওই পাঁচ টাকাতে বোর্ডিং-এ থাকবার খরচও কুলিয়ে যাবে। সর্বজয়া আর কোন কথা বলিল না। কি কথা সে বলিবে ? যুক্তি এতই অকাট্য যে তাহার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করিবার কিছুই নাই। ছেলে স্কলারশিপ পাইয়াছে, শহরে পড়িতে যাইবে, ইহাতে মা-বাপের ছেলেকে বাধা দিয়া বাড়ি বসাইয়। রাথিবীর পদ্ধতি কোথায় চলিত আছে ? এ যেন তাহার বিরুদ্ধে কোন দণ্ডী তার নির্মম অকাট্য দণ্ড উঠাইয়াছে, তাহার দুর্বল হাতের সাধ্য নাই যে ঠেকাইয়া রাখে। ছেলেও ঐদিকে ঝুঁকিয়াছে। আজকার দিনটিই যেন কার মুখ দেখিয়া উঠিয়াছিল সে। ভবিষ্যতের সহস্ৰ মুখস্বপ্ন কুয়াসার মত অনন্তে বিলীন হইয়। যাইতেছে কেন আজকার দিনটিতে বিশেষ করিয়া ? মাসখানেক পরে বৃত্তি পাওয়ার খবর কাগজে পাওয়া গেল। যাইবার পূর্বদিন বৈকালে সর্বজয়া ব্যস্তভাবে ছেলের জিনিসপত্র গুছাইয়া দিতে লাগিল। ছেলে কখনও এক বিদেশে বাহির হয় নাই, নিতান্ত আনাড়ী, ছেলে-মানুষ ছেলে। কত জিনিসের দরকার হইবে, কে থাকিবে তখন সেখানে যে মুখে মুখে সব অভাব যোগাইয়া ফিরিবে, সব জিনিস হাতে লইয়া বসিয়া থাকিবে ? খুঁটিনাটি- একখানা কথা পাতিবার, একখানি গায়ের—একটি জল খাইবার গ্লাস, ঘরের তৈরী এক শিশি সরের ঘি, এক পুটুলি নারিকেল নাড়ু, অপু ফুলকাটা একটা মাঝারি জামবাটিতে দুধ খাইতে ভালবাসে–সেই বাটিট, ছোট একটা বোতলে মাখিবার চৈমিশানো নারিকেল তৈল, আরও কত কি। অপুর মাথার বালিশের পুরানো ওয়াড় বদলাইয়া নূতন ওয়াড় পরাইয়া দিল। দধি-যাত্রার আবশ্বকীয় দই একটা ছোট পাথরবাটিতে পাতিয়া রাখিল । ছেলেকে কি করিয়া বিদেশে চলিতে হইবে সে বিষয়ে সহস্র উপদেশ দিয়াও তাঁহার মনে তৃপ্তি হইতেছিল না। ভাবিয়া দেখিয়া যেটি বাদ দিয়াছে মনে হয় সেটি তখনি আবার ডাকিয়া বলিয়া দিতেছিল। —যদি কেউ মারে টারে, কত দুষ্ট ছেলে তো আচে, আমনি মাস্টারকে বলে দিবি— বুলি ? রাত্তিরে ঘুমিয়ে পড়িল নে যেন ভাত খাবার আগে ! এ তো বাড়ি নয় যে কেউ তোকে ওটাকে—খেয়ে তবে কি-নতে তাদের বলবি, বা হয়েছে তাই নি ভাত নাও —বুঝলি তো ?