পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ፃbሥ বিভূতি-রচনাবলী মধু সংগ্রহ করতে যায় চৈত্র মাসে। সে সময় একরকম সাদা ফুল ফোটে, খুব বড় বড়, ভারি সুগন্ধ। ঘোড়াঘাটির পাহাড়ে ওই ফুলের গাছ অনেক । বেশ বড় গাছ। আপনি গিয়ে দেখবেন, যাকে আপনারা সিনারি বলেন, তা আছে কি না। —এখান থেকে কতদূর হবে ? .# —ত তেরো-চোদ মাইল হবে । ঘোড়াঘাটি পাহাড়ের গায়ে দুটো গুহা আছে, একটার মধ্যে একজন সাধু থাকতেন—আজ প্রায় পনেরো বছর ছিলেন। এখন কোথায় চলে গিয়েচেন। আর একটা গুছায় ঢোকা যায় না, মুখটা কাটাজঙ্গলে বুজোনো। যাবেন একদিন । যাবার যথেষ্ট আগ্রহ সত্ত্বেও আমার সেখানে যাওয়া হয়নি। এর দুদিন পরে আমি এখান থেকে রওনা হই পদব্রজে। বনের মধ্যে দিয়ে উনিশ মাইল রাস্ত হেঁটে গিয়ে তবে রেওয়া স্টেটের প্রান্তে শালগঢ়িসাস্তারা ডাকবাংলো। বনের বিচিত্র শোভা এই উনিশ মাইল পায়ে হেঁটে না গেলে কিছু বোঝা যেতো না। আসল ভারতবর্ষের রূপ যেন দেখচি, প্রাচীন ভারতবর্ষ। আর্যাবর্তের বিশাল সমতলভূমি নয়, যা নাকি গঙ্গা ও যমুনার পলি-মাটিতে সেদিন তৈরী হল—কালকের কথা। এ ভারতবর্ষ যখন হয়েচে তখন হিমালয় পর্বত গজায়নি, বহু প্রাচীন যুগ-যুগাস্তের পূর্বের বুদ্ধতম ভারতবর্ষ এ ; এর অরণ্য এক সময় বৈদিক আর্যগণের বিস্ময়, রহস্য ও ভীতির বস্তু ছিল; প্রথম ইউরোপীয় পর্যটকদের কাছে কসো ও ইউগাণ্ডার আগ্নেয় গিরিশ্ৰেণী ও ঘনারণ্য যেমন ছিল, ঠিক তেমনটি । বনের অদ্ভুত রূপ দেখতে হয় যদি তবে পদব্রজে এ পথে অমরকন্টক পর্যন্ত যাওয়া উচিত। তবে হিমারণ্যের মতো বিচিত্র বনপুষ্পশোভা এ বনে নেই, মধ্যপ্রদেশের বনভূমির রূপ অন্ত ধরনের, একটু বেশি রুক্ষ ও অনাড়ম্বর। বনপুষ্প ও ফার্ন পাওয়া যায় যেখানে আছে বড় বড় পাহাড়ী ঝরনা, তার ধারে বড় বড় আৰ্দ্ৰ শিলাখণ্ডের গায়ে কত কি ছোট ছোট লতা ও চারাগাছে রঙীন ফুল ফুটে আছে বটে কিন্তু বাইরের বনে এ সময়ে কোনো ফুল দেখিনি, কেবল বস্ত শেফালি ছাড়া । এ বনে বন্ত শেফালি গাছ অজস্র । পথের ধারে যা পড়ে, তাতেই আমার মনে হয়েচে এই গাছের সংখ্যা এ অঞ্চলে যথেষ্ট। তবুও আমি গভীর বনের মধ্যে যাইনি, আমার সঙ্গে চার-পাঁচজন অময়-কণ্টকের যাত্রী ছিল, তারাও আমাকে পথ ছেড়ে অরণ্যের অভ্যন্তরপ্রদেশে ঢুকতে দেয়নি। মাঝে মাঝে ছোট ছোট গ্রাম পড়ে। গ্রামে ছোট মুনীর দোকান, সেখানে সিজার সিগারেট পর্যন্ত পাওয়া যায়। আর পাওয়া যায় আটা, ডাল, ভেলিগুড়, জুন, মোট চাল । বিভিন্ন মিশন সোসাইটি এইসব বস্তু-পল্লীতে স্কুল বসিয়ে গোড়দের শিক্ষাদানে যথেষ্ট সাহায্য করচে। খ্ৰীষ্টধর্মাবলম্বী লোকের সংখ্যা কোনো কোনোগ্রামে নিতান্ত কম নয়। দুপুরে নিভৃত কোনো ঝরনার ধার খুঁজে নিয়ে গাছের নিবিড় ছায়ার আমরা রায় চড়াতুম। আমাদের দলের পাচক ছিল মাদার বলে একটি ছোকরা। সে মাধোলালের