পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অভিযাত্রিক 8Գֆ বাড়িতে প্রতিপালিত হয়েছিল ছেলেবেলা, এখন কাঠের মিস্ত্রির কাজ করে । যদিও সে একজন দস্তুরমত ভবঘুরে, কোথাও বেশিদিন থাকা তার ধাতে নাকি একেবারেই লয় না। আমি বলতুম—আজ কি রান্না হবে মান্দারু ? —আটা আর দাল । —আর কি রণধতে জানো ? —আর আলুর চোখ । ছবেলা এই একই রান্না, নতুনত্ব নেই। আটার হাতে-গড়া রুটি, অড়রের ডাল আর আলুর চোখ। এমন বিচিত্র রান্না জীবনে কখনো খাইনি। এমন ঘোর আনাড়ি ও প্রতিভাবিহীন রাধুনিও সহজে খুঁজে মিলবে না। এতদিন হাতে-কলমে রান্নার কাজ করা সত্ত্বেও মান্দারু এতটুকু উন্নতি করতে পারেনি ও কাজে, কোনদিন পারবেও না। বনের মধ্যে ষে-কটি অদ্ভুত দিন কেটেছিল, তার কথা জীবনে কখনো ভুলব না। মধ্যপ্রদেশের এইসব বনে যথেষ্ট হিংস্ৰজন্তুর বাস বটে—কিন্তু আমরা কোনোদিন কিছু দেখিনি । আমার একজন সঙ্গী একরাত্রে বললে, সে নাকি বাইসন দেখেচে–কিন্তু তার কথা আমার বিশ্বাস হয়নি। প্রথমে তো, বাইসন মাদ্রাজ অঞ্চলে ছাড়া ভারতের অন্ত কোনো বনে দেখা যায় না। মধ্যপ্রদেশে ‘গৌর বা ‘গায়ের’ বলে যে মহিষজাতীয় জন্তু আছে তাকে অনেকে ‘ইণ্ডিয়ান বাইসন’ বলেন বটে কিন্তু মধ্যপ্রদেশের বনে ‘গৌর প্রায় নির্বংশ হয়ে এসেচে। শিকারীর বন-বাদাড় ঠেড়িয়েও তাঁর সন্ধান পান খুবই কম। দ্বিতীয় কথা, এই বন্যজন্তু অত্যন্ত হুঁশিয়ার, মানুষের সাড়াশৰ তারা অনেক দূর থেকে পায় এবং সে জায়গার ত্রিসীমানার ঘেঁষে না। তবে শেয়াল প্রায়ই যেতো—আর দেখতুম ময়ুর ; প্রায়ই ময়ুর ডাল থেকে উড়ে বসত পথের ওপর । ময়ুর ছাড়া আরও অনেক পার্থী ছিল সে বনে ; দুপুরে যখন গাছতলায় একটু বিশ্রাম করতুম, তখন বিহঙ্গ-কাকলী আমাদের পথভ্রাস্তি দূর করতো। এই রকম বেড়াবার একটা নেশা আছে—বড় ভয়ানক নেশা সেটি। তা মানুষকে ঘরছাড়া করে ভবঘুরে বানিয়ে দেয়। আমরা যে কজন বনের পথে চলেচি, সকলেই প্রাণে প্রাণে অনুভব করছিলুম সেই অদ্ভূত ও তীব্র আনন, শুধু মুক্ত জীবনেই যার দেখা মেলে। আমরা সাধারণত রাত্রে কোনো একটা গ্রামে আশ্রয় নিতুম, সকাল হলে ইটো শুরু করে দুপুরের মধ্যে দশ-বারো মাইল কি পনেরো মাইল পার হয়ে যেতুম। এই সকালের ছাটাই হল আসল। বিকেলে বেশিদূর যেতে না যেতে বনের মধ্যে ক্রমশ ঘন ছায়া নেমে অন্ধকার হয়ে আসতো, তখন কোথাও আশ্রয় না নিলে চলতো মা । ছপুরে অনেকখানি পথ হেঁটে একটা সুন্দর জায়গা আমরা বেছে নিতুম যেখানে বড় বড় গাছের ছায়া, ঝরনার জল কাছে, বসবার উপযুক্ত শিলাখণ্ড পাতা, পাখীর কাকলীতে বনভূমি মুখর। .তারপর মাদার জায়গাটা ডালপালা ভেঙে পরিষ্কার করতে, আমরা কম্বল পেতে