পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মরণের ডঙ্কা বাজে Ե-Գ বিমলচন্দ্র বন্ধ, সম্প্রতি মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করে বেরিয়ে ডাক্তারী করবার চেষ্ট্রীয় সিঙ্গাপুর যাচ্ছে। বিমলের বাড়ী কলকাতায়, ওদের অবস্থা বেশ ভালই। ওদের পাড়ার এক ভদ্রলোকের বন্ধু সিঙ্গাপুরে ব্যবসা করেন, তার নামে বিমল চিঠি নিয়ে যাচ্ছে। কথাবাৰ্ত্ত শুনে স্বরেশ্বরের মনে হোল বিমল অত্যস্ত বুদ্ধিমান ও সাহসী । নতুন দেশে নতুন জীবনের মধ্যে যাবার আনন্মেই সে মশগুল । সে বেশ সবল যুবকও বটে। অবপ্তি সুরেশ্বর নিজেও গায়ে ভালই শক্তি ধরে, এক সময়ে রীতিমত ব্যায়াম ও কুস্তি করতো, তারপর গ্রামে অনেকদিন থাকার সময়ে সে মাটি-কোপানে, কাঠ-কাট প্রভৃতি সংসারের কাজ নিজের হাতে করতে বলে হাত পা যথেষ্ট শক্ত ও কৰ্ম্মক্ষম। ক্রমে বেলা বেশ পড়ে এল। সুরেশ্বর ও বিমল ডেকে বসে নানারকম গল্প করছে। ঘডির দিকে চেয়ে হঠাৎ বিমল বল্লে—আমি একবার কেবিন থেকে আসি, আপনি বম্বন। ডায়মগুহারবার ছাডিয়েছে, এখুনি পাইলট নেমে যাবে। আমার চিঠিপত্র দিতে হবে ওর সঙ্গে। আপনি যদি চিঠিপত্র দেন তবে এই বেল লিখে রাখুন। সাগর-পয়েন্টের বাতিঘর দূর থেকে দেখা যাওয়ার কিছু আগেই কলকাতা বন্দরের পাইলট জাহাজ থেকে নেমে একখান৷ ষ্টীমলঞ্চে কলকাতার দিকে চলে গেল। সাগর-পয়েণ্ট ছাড়িয়ে কিছু পরেই সমুদ্র-কোনো দিকে ডাঙা দেখা যায় ন—ঈষৎ ঘোলা ও পাটকিলে রঙের জলরাশি চারি ধারে । সন্ধ্যা হয়েছে, সাগর পয়েণ্টের বাতিঘরে আলো ঘুরে ঘুরে জলছে, কতকগুলো সাদা গাঙচিল জাহাজের বেতারের মাস্তুলের ওপর উড়ছে। ঠাগু হাওয়ায় শীত করছে বলে বিমল কেবিন থেকে ওভার-কোটটা আনতে গেল, স্বরেশ্বর ডেকে বসে রইল। জ্যোৎস্না রাত | ডেকের রেলিং-এর ধারে চাদের আলে৷ এসে পড়েছে, স্বরেশ্বরের মন এই সন্ধ্যায় খুবই খারাপ হয়ে গেল হঠাৎ বাড়ীর কথা ভেবে, বৃদ্ধ বাপমায়ের কথা ভেবে, আসবার সময়ে বোন প্রভার অশ্রুসজল করুণ মুখখানির কথা ভেবে। পূৰ্ব্বেই বলেছি সুরেশ্বর নিরীহ প্রকৃতির ঘরোয় ধরনের লোক। বিদেশে যাচ্ছে তার নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে, চাকরির খাতিরে। বিমল যদিও সুরেশ্বরের মত ঘরকুণো নয়, তবুও তার সিঙ্গাপুরে যাবার মধ্যে কোন দুঃসাহসিক প্রচেষ্টা ছিল না। সে চিঠি নিয়ে যাচ্ছে পরিচিত বন্ধুর নিকট থেকে সেখানকার লোকের নামে, তারা ওকে সন্ধান বলে দেবে, পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করবে ; তারপর বিমল সেখানে একখানা বাড়ী ভাড়া নিয়ে গেটের গায়ে নাম-খোদাই পেতলের পাত বসিয়ে শাস্ত ও স্থবোধ বালকের মত ডাক্তারী আরম্ভ করে দেবে—এই ছিল তার মতলব। যেমন পাঁচজনে দেশে বাস করছে, সে না হয় গিয়ে করবে সিঙ্গাপুরে। কিন্তু দুজনেই জানতো না একটা কথা । তারা জানতো না যে নিরুপদ্রব, শাস্তভাবে ডাক্তারী ও ওষুধের ক্যানভাসারি করতে তারা যাচ্ছে না—তাদের অদৃষ্ট তাদের দুজনকে এক সঙ্গে গেঁথে নিয়ে চলেছে এক বিপদসঙ্কুল