পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>鹰 বিভূতি-রচনাবলী পিনাং বন্দরে জাহাজ ঢুকবামাত্রই অসংখ্য সাম্পান এসে জাহাজের চারিধারে বিরলে। মাঝিরা সকলেই চীনেম্যান। 尊 ওয়া সাম্পানে করে বন্দরে নেমে শহর দেখতে বার হোল। ঘণ্টা হিসাবে দুজনে একখানা রিকৃশা করলে-ঘণ্টা-পিছু কুড়ি সেণ্ট ভাড়া। পিনাঙে ঠিক সমুদ্রতীরে একটু সমতলভূমি, চারিদিকেই পাহাড়, অনেকগুলো ছোট নদী এই সব পাহাড় থেকে বার হয়ে শহরের মধ্যে দিয়ে সমুদ্রে গিয়ে পড়েছে। ওরা একটা পাহাড়ের ওপর চীনা মঠ দেখতে গেল। পাথরে বাধানো সিড়ি, বাগান পুরোহিতের ঘর, দেবমন্দির স্তরে স্তরে উঠেছে। বাগানের চারিদিকে নালায় ঝরণায় স্রোতে কত পদ্ম গাছ। মন্দিরের মধ্যে টেওস্ট ধৰ্ম্মজ দেবমূতি । এদের মধ্যে একটি মূৰ্ত্তি দেখে মুরেশ্বর চমকে দাড়িয়ে গেল। কোন চীনা দেবতার মূৰ্ত্তি, ভ্ৰকুটি-কুটিল, কঠিন, রুক্ষ মুখ। হাতে অস্ত্র, দাড়াবার ভঙ্গিটি পৰ্যন্ত আক্রোশপূর্ণ। সমস্ত পৃথিবী যেন ধ্বংস করতে উদ্যত। বিমল বল্লে—কি, দাড়ালে যে ? --দেখছে মূৰ্ত্তিটা ? মুখচোখের কি ভয়ানক নিষ্ঠুর ভাব দেখেছে ? মন্দিরের পুরোহিতদের জিগ্যেস করে জানা গেল ওটি টেওস্ট রণ-দেবতার মূৰ্ত্তি । হঠাৎ স্বরেশ্বর বল্লে- চল, এখান থেকে চলে যাই । বিস্মিত বিমল বল্লে—ওকি। পাহাড়ের উপরে যাবে না ? মুরেশ্বর আর উঠতে অনিচ্ছুক দেখে বিমল ওকে নিয়ে জাহাজে ফিরলো । পথে বল্পে—তোমার কি হল হে সুরেশ্বর ? ও রকম মুখ গম্ভীর করে মনমরা হয়ে পড়লে কেন ? সুরেশ্বর বল্লে—কই না, ও কিছু নয়, চলো । জাহাজে ফিরে এসেও কিন্তু স্বরেশ্বরের সে ভাব দূর হল না। ভাল করে কথা কয় না, কি যেন ভাবছে । নৈশভোজের টেবিলে ও ভাল করে খেতেও পারলে না। রাত ন’টার পরে পিনাং থেকে জাহাজ ছাড়লে সুরেশ্বর ষেন কিছু স্বস্তি অনুভব করলে । পিনাং বন্দরের জেটির আলোকমালা দূরে মিলিয়ে যাচ্ছে, ওরা ডেকে এসে বসেছে নৈশভোজের পরে। হঠাৎ সুরেশ্বর বলে উঠলো—উ,কি ভয় পেয়ে গিয়েছিলুম ওই চীনাদেবতার মুক্তিটা দেখে ! বিমল হেসে বল্লে—আমি তা বুঝতে পেরেছিলাম। কিন্তু, সত্যি তুমি এত ভীতু তা তো জানি নে! স্বীকার করি মূৰ্ত্তিটা অবিভি কমনীয় নয়, তবুও— স্বরেশ্বর গঞ্জীর মুখে বল্লে—আমার মনে হচ্ছে কি জানো বিমল ? আমরা যেন এই দেবতার কোপদৃষ্টিতে পড়ে গিয়েছি। সব সময় সব জায়গায় যেতে নেই। আমরা সন্ধ্যাবেল ঐ:চীনে মন্দিরে গিয়ে ভাল কাজ করিনি। পিনাং থেকে ছাড়বার তিন দিন পরে জাহাজ সিঙ্গাপুর পৌঁছুলো ।