8२. বিভূতি-রচনাবলী বিমল বল্পে—ও কে ? স্বরেশ্বর তাড়াতাড়ি দরজার কাছে গিয়ে মুখ বাড়িয়ে দেখলে। তার মনে হলে একজন যেন বারান্দার মোড়ে অদৃপ্ত হয়ে গেল। o সে ফিরে এসে বল্পে—ও কিছু না, কে একজন গেল । তারপর ওরা দু’জনে অনেক রাত পৰ্য্যন্ত সিঙ্গাপুরের ভারতীয় পাড়ায় একখানা ওষুধের দোকান খুলবার সম্বন্ধে জল্পনা কল্পনা করলে । বিমল হাজারখানেক টাকা এখন ঢালতে প্রস্তুত আছে, স্বরেশ্বর নিজেদের ফার্মকে বলে ওষুধের যোগাড় করবে। বড় ডাকঘরের ক্লকৃ টাওয়ারে ঢং ঢং করে রাত এগারোটা বাজলে। হোটেলের চাকর এসে দু’জনের খাবার দিয়ে গেল। শিখের হোটেল, মোটা মোটা মুম্বাদু কুটি ও মাংস, আস্ত মাসকলায়ের ডাল ও আলুর তরকারী—এই আহাৰ্য্য। সারাদিনের ক্লাস্তির পরে তা অমৃতের মত লাগলে ওদের । আহারাদি সেরে স্বরেশ্বর শোবার যোগাড় করতে যাচ্ছে, এমন সময় বিমল হঠাৎ দরজার কাছে গিয়ে বাইরের দিকে চেয়ে দেখলে। স্বরেশ্বর বল্লে—কি ? বিমল ফিরে এসে বিছানায় বসলো। বল্লে—আমার ঠিক মনে হোল কে একজন জানালাটার কাছে দাড়িয়ে ছিল। কাউকে দেখলুম না কিন্তু— সুরেশ্বরের কি রকম সন্দেহ হোল। বিদেশ-বিভূই জায়গা, নানা রকম বিপদের আশঙ্কা এখানে পদে পদে। সে বল্পে, সাবধান থাকাই ভালো। দরজা বেশ করে বন্ধ করে দিয়ে শুয়ে পড় | রাতও হয়েছে অনেক । সুরেশ্বরের ঘুম ছিল সজাগ। তাই অনেক রাত্রে একটা কিসের শব্দে ও ঘুম ভেঙে বিছানার ওপর উঠে বসলে সন্দিগ্ধ মন নিয়ে। . বিছানার শিয়রের দিকে জানালাটা খোলা ছিল। বিছানা ও জানলার মধ্যে একটা ছোট টেবিলের দিকে নজর পড়াতে স্বরেশ্বর দেখলে টেবিলটার ওপর ঢিল জড়ানো একটুকরো কাগজ। এটাই বোধ হয় একটু আগে জানল দিয়ে এসে পড়েছে, তার শব্দে ওর ঘুম ভেঙে গিয়েছে। ঘরে আলো জালাই ছিল। কাগজের টুকরোটা ও পড়লে, তাতে ইংরেজিতে লেখা রয়েছে— আপনার ভারতীয়! যতদূর জানতে পেরেছি সিঙ্গাপুরে আপনার নবাগত ও চিকিৎসাব্যবসায়ী। কাল দুপুর বেলা বোটানিক্যাল গার্ডেনে অকিডের ঘরের উত্তর-পূব্ব কোণে যে বড় ডুরিয়ান ফলের গাছ আছে, তার নীচে অপেক্ষা করবেন দুজনেই। আপনাদের দুজনের পক্ষেই লাভজনক কোনো প্রস্তাব উত্থাপিত হবে। আসতে ইতস্ততঃ করবেন না। লেখার নীচে নাম-সই নেই । বিমলও কাগজখানা পড়লে । ব্যাপার কি ? এ ওর মুখের দিকে চেয়ে রইল। কিছুক্ষণ দুজনেই নীরব।
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১০৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।