মরণের ডঙ্কা বাজে ఫిలీ স্বরেশ্বরই প্রথমে কথা বল্পে। বল্লে—কেউ তামাশা করেছে বলে মনে হচ্ছে, কি বলে ? কিন্তু তাই বা করবে কে, আমাদের চেনেই বা কে ? বিমল চিস্তিত মুখে বল্লে—কিছু বুঝতে পারছি নে। কোনো খারাপ উদেশ্ব আছে বলে মনে হয় না কি ? —কি খারাপ উদ্দেশ্য ? আমরা যে খুব বড় লোক নই, তার প্রমাণ ভিক্টোরিয়া হোটেল বা এম্পায়ার হোটেলে না উঠে এখানে উঠেছি। টাকা-কড়ি সঙ্গে নিয়েও যাচ্ছিনে। সুতরাং কি করতে পারে আমাদের ? সে রাত্রের মত দুজনে ঘুমিয়ে পড়ল । সকালে উঠে বিমল বল্লে—চল যাওয়াই যাক। এত ভয় কিসের? বোটানিক্যাল গার্ডেন তো আর নির্জন মরুভূমি নয়, সেখানে কত লোক বেড়ায় নিশ্চয়ই। দু’জনকে খুন করে দিনের আলোয় টাকাকড়ি নিয়ে পালিয়ে যাবে, এত ভরসা কারু হবে না। দুপুরের পর হোটেল থেকে বেরিয়ে কুয়ালা জোহোর স্ত্রীটের মোড় থেকে একখানা রিকৃশ ভাড়া করলে। ম্যাসিডন্ কোম্পানীর সোডাওয়াটারের দোকানের সামনে একজন চীনা ভদ্রলোক ওদের রিকৃশ থামিয়ে চীনে রিকৃশাওয়ালাকে কি জিগ্যেস করলে। তারপর উত্তর পেয়ে লোকটি চলে গেল। বিমল রিকৃশাওয়ালাকে ইংরিজীতে জিগ্যেস করলে—কি বল্পে তোমাকে হে ? রিকৃশাওয়ালা বল্লে—জিগ্যেস করলে সওদাগরী কোথায় নিয়ে যাচ্ছ ? —তুমি কি বল্পে ? —আমি কিছু বলিনি। বলবার নিয়ম নেই আমাদের। সিঙ্গাপুর খারাপ জায়গা, মিস্টার। বোটানিক্যাল গার্ডেন শহর ছাড়িয়ে প্রায় দু’মাইল দূরে। শহর ছাড়িয়েই প্রকাগু একটা কিসের কারখানা। তারপর পথের দু’ধারে ধনী মালয়, ইউরোপীয় ও চীনাদের বাগানবাড়ী। এমন ঘন সবুজ গাছপালার সমাবেশ ও শোভা, বিমল ও স্বরেশ্বর বাংলাদেশের ছেলে হয়েও দেখেনি—কারণ বিষুবরেখার নিকটবৰ্ত্তী এই সব স্থানের মত উদ্ভিদ সংস্থান ও প্রাচুর্ঘ্য পৃথিবীর অন্য কোথাও হওয়া সম্ভব নয়। মাঝে মাঝে রবারের বাগান। বোটানিক্যাল গার্ডেনে পৌছে ওরা রিকৃশাওয়ালাকে ভাড়া দিয়ে বিদেয় করলে। প্রকাগু বড় বাগান। কত ধরনের গাছপালা, বেশির ভাগই মালয় উপদ্বীপজাত। বড় বড় রুটিফলের গাছ, ডুরিয়ান পাকবার সময় বলে ডুরিয়ান ফলের গাছের নীচে দিয়ে যেতে পাকা ডুরিয়ান ফলের দুর্গছ রেরুচ্ছে। সিঙ্গাপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনের নারিকেলকুঞ্জ একটি অদ্ভুত সৌন্দৰ্য্যময় স্থান। এত উচু উচু নারিকেল গাছের এমন ঘন সন্নিবেশ ওরা কোথাও দেখে নি। নিস্তব্ধ দুপুরে নারিকেল বৃক্ষশ্রেণীর মাথায় কি পার্থী ডাকছে স্বস্বরে, আকাশ স্বনীল, জায়গাটা বড় ভাল লাগলে ওদের। অকিড হাউস খুজে বার করে তার উত্তর-পূৰ্ব্ব কোণে সত্যই খুব বড় একটা
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১০৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।